মারুফ সরকার,বিনোদন প্রতিনিধি: মোহাম্মদ ইকবাল ঢালিউড কিং শাকিব খান অভিনীত ‘শুটার’, ‘পাসওয়ার্ড’সহ বেশ কিছু চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছেন। সম্প্রতি শূটিং শুরু হওয়া কাজী হায়াত পরিচালিত ‘বীর’ চলচ্চিত্রেরও সহ-প্রযোজক তিনি। এতেও শাকিব খান অভিনয় করছেন। মোহাম্মদ ইকবাল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক। সম্প্রতি একান্ত আলাপে সরকারি অনুদান প্রসঙ্গে কথা বলেন প্রযোজক ইকবাল। তিনি বলেন, ‘অনুদান নীতিমালার ১২ (ছ) ধারায় আবেদনকারী প্রযোজক বা পরিচালকের সাক্ষাৎকার নেওয়ার কথা বলা থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে তা মানা হচ্ছে না অভিযোগ রয়েছে। এমন পরিচালকের প্রস্তাবিত চলচ্চিত্রকে অনুদান প্রদান করা হচ্ছে যারা চলচ্চিত্র নির্মাণের সাথে কোনো পূর্ব সংশ্লিষ্টতা নেই। এবং এমন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বা প্রযোজককে অনুদান প্রদান করা হচ্ছে যাদের আর্থিক সক্ষমতা এবং কারিগরি কাঠামোগত সক্ষমতা স্পষ্ট নয়।’

ইকবাল বলেন, ‘সাধারণত যেসব সিনেমাকে সরকারি অনুদান দেয়া হয় সেগুলো কেউ দেখে না। কখন কোথায় সিনেমাটি মুক্তি পায়, কেউ জানে না। অনুদানপ্রাপ্ত সিনেমার নির্মাতারা নিজেরা নিজেরা সিনেমার প্রদর্শন করেন। কিন্তু যেসব সিনেমা মানুষ দেখে সেগুলো সরকারি অনুদান পায় না। আমরা তথ্যমন্ত্রীর কাছে বাণিজ্যিক সিনেমাকে সরকারি অনুদান দেয়ার অনুরোধ করছি। তবে মানহীন বাণিজ্যিক সিনেমাকে অনুদান দিতে বলছি না। তবে একটি বিষয় বিবেচনা করা যেতে পারে যে, সিনেমা নির্মানের জন্য সরকারি অনুদানে যে টাকা একজন প্রযোজক পান সে টাকাগুলো একত্রিত করে অনেকগুলো হল নির্মাণ করা সম্ভব। আমাদের সিনেমার সংকট নেই, রয়েছে হল সংকট। আমরা সিনেমা নির্মাণ করে সেটাকে যথাযথভাবে দর্শকদের কাছে দেব সেই জায়গাটা ঠিক নেই, এটাই আমাদের মূল সমস্যা। আগে সিনেমা চালানোর ব্যবস্থা করতে হবে।’

প্রযোজক ইকবাল আরও বলেন, ‘সরকারি অনুদানের টাকা একজন যোগ্য প্রযোজক পেতে পারেন যিনি এর আগেও অনেক ছবি করেছেন এবং এখন সিনেমা করতে পারছেন না। তবে ভুল হাতে টাকা গেলে সেটি ছবি হয় না বরং একটি জগাখিচুডরি হয়ে যায়। সরকার যে টাকা অনুদানের ছবির জন্য দেয়, সেই টাকা একত্রিত করে (সরকার) বেশ কয়েকটি উন্নত মানের সিনেমা হল নির্মাণ করতে পারেন। এতে করে নতুন নতুন প্রযোজক আসবে। হল বাঁচলে সিনেমা শিল্প বাঁচবে।

তিনি বলেন, ‘আমি কাকরাইল পাড়ায় দেখেছি হল মালিকরা অনুদানের নির্মিত ছবিগুলো প্রদর্শনের জন্য নিতে চায় না। তাদের ভাষ্য, অনুদানের ছবি দর্শক কম দেখে এবং নিলে আমাদের লস হয়। এবং বুকিং এজেন্টদেরও একটি ভাষ্য, আমার কেন যেন মনে হয় এটি পুরো লস প্রজেক্ট সরকারের উচিত বিষয়টি নিয়ে ভাবা। যে দিকগুলো উন্নতি হলে সিনেমা হল এবং অনুদানের ছবি মানসম্মত হবে সেটি নিয়ে পরিকল্পনা করা উচিত। আমার মনে হয় অনুদানের ছবির জন্য অধিক টাকা না দিয়ে হল নির্মাণ করে দেওয়া যেতে পারে। এতে করে সিনেমা ইন্ড্রাস্ট্রির একটি বড় উন্নয়ন হবে। প্রযোজক বাঁচবে এবং নতুন প্রযোজক আসবে।’

ইকবাল আরো বলেন, ‘একটি বিষয় লক্ষ করে আসছি যারা কখনো সিনেমা করেনি কিংবা পেশাদার সিনেমার লোক না তারাও এই অনুদানের অর্থের জন্য ছুটছেন। এবং অনুদানের ছবির জন্য শিল্পীরাও এখন দেখি মাঝে মাঝে মাথা ঘামাচ্ছেন। আসল কথা হচ্ছে প্রফেশনাল আর নন প্রফেশনাল। সিনেমা প্রযোজনা করার মধ্যে ফারাক আছে, প্রথমেই এটা বুঝতে হবে। সিনেমার বড় জার্নিটা কিন্তু একজন প্রযোজকেই করতে হয়। আমি শ্রদ্ধার সাথেই বলতে চাই মন্ত্রী মহাদয়কে প্রযোজকদের সাথে বসে বিষয়টা নিয়ে আলাপ করে এর সমাধান করা। শুনতে হবে প্রযোজকদের আসল সমস্যাগুলো কি! এক কথায় বলতে গেলে আমাদের চলচ্চিত্র ভালোর দিকে যাচ্ছে। ভালো কিছু ছবি যে হচ্ছে না এটা বলা যাবে না। সিনেমা প্রদর্শনের বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে হল সঙ্কট। হল নেই, ছোট পরিসরের মানসম্মত ভাল হল তৈরি করতে হবে। দর্শক ভাল পরিবেশে সিনেমা দেখতে চায়। এজন্য সরকারী উদ্যোগে হল তৈরি করতে হবে।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে