ডেস্ক রিপোর্টঃ রংপুর মহানগরীর পশ্চিম গোপিনাথপুর এলাকার রত্নেশ্বরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা আয়শা বেগমের বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলা ও খামখেয়ালিপনার অভিযোগ ওঠেছে। তার এই দায়িত্ব অবহেলার কারণে লাভলু মিয়া নামে এক পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীর উজ¦ল স্বপ্ন ভেঙে গেছে বলে অভিযোগ উল্লেখ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ওই শিক্ষিকার অপসরণ ও শাস্তি দাবি করে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রংপুর বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগি ওই পরিবারের সদস্যরা । অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, রংপুর নগরীর পশ্চিম গোপিনাথপুর এলাকার রত্নেশ্বরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী লাভলু মিয়া রংপুর বিভাগ ও রংপুর জেলা আন্তঃ প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ২০১৯ এর ‘খ’ বিভাগে ১০০ মিটার দৌড়ে অংশগ্রহণ করে প্রথম স্থান অধিকার করেন। এছাড়া জাতীয় পর্যায়ে দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ পায় লাভলু মিয়া।
রিক্সা চালক লাভলুর পিতা জাহাঙ্গীর আলম জানান, গত ২২ জুন তারিখে দুপুরে আমাকে ঢাকা থেকে ০১৮৪০১২৩৮৫০ ফোন নাম্বার দিয়ে বলে তোমার ছেলে লাভলু মিয়া জাতীয় পর্যায়ে ১০০ মিটার দৌড়ে প্রতিযোগিতায় রংপুর বিভাগের হয়ে ২৩ জুন ঢাকায় অংশগ্রহণ করবেন। এ জন্য প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে আপনার ছেলেকে ঢাকায় নিয়ে আসতে হবে। এর পর আমি তরিঘড়ি করে ছেলের কাপড়সহ অন্যান্য জিনিসপত্র ক্রয় করি। পরে খেলার তারিখ সর্ম্পকে প্রধান শিক্ষিকা আয়শা খাতুনের সাথে যোগাযোগ করলে প্রধান শিক্ষিকা বলেন জাতীয় পর্যায়ের দৌড় প্রতিযোগিতা ২৩ জুন নয়।

এই দৌড় প্রতিযোগিতা ২৪ জুন তারিখে অনুষ্ঠিত হবে এবং সেখানে ১০/১২ হাজার টাকা খরচ হবে। আমি পেশায় একজন রিক্সা চালক হয়ে অল্প সময়ের মধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পূন্ন করি। কিন্তু হঠাৎ করে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আয়শা খাতুন বলেন ২৩ জুন তারিখে খেলা শেষ হয়েছে এখন আর কিছু করার নেই। আমি হতাশ হয়ে বাড়িতে ফিরে আসি। কিন্ত দুঃখের বিষয় হচ্ছে আমাদের মতো হত দরিদ্র ও গরীব পরিবারের ছেলে জাতীয় পর্যায়ে খেলার সুযোগ পেয়েও শিক্ষকের খামখেয়ালি ও দায়িত্বহীনতার কারণে প্রতিভার বিকাশ ঘটার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে ও প্রতিভাকে গলাটিপে হত্যা করা হয়েছে। এদিকে, একই এলাকার জজরেজ মিয়া জানান, ১০০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় রিক্সা চালক জাহাঙ্গীর ছেলে রংপুর বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। এই সুনাম ও অর্জর রংপুর বিভাগের। তিনি বলেন ছেলেটি জাতীয় পর্যায়ে স্থান করতে পারলে বাংলাদেশে সুনাম হতো।

তিনি এ বিষয়ে দোষি শিক্ষিকার শাস্তি ও অপসরণের দাবি জানান। এই ঘটনায় লাভলুর মা লাভলী বেগম অভিযোগ করে বলেন, পরবর্তীতে এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে স্কুলে গিয়ে কারণ জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষিকা আয়শা খাতুন আমাদের সাথে খারাপ আচরণ ও স্কুল থেকে দুর দুর করে বের করে দেন। এছাড়াও তিনি বলেন এর পর থেকে আর কোনো আন্তঃ ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় শিশুদের অংশগ্রহণ করতে দেয়া হবে না।

এ ব্যাপারে পশ্চিম গোপিনাথপুর এলাকার আনোয়ার হোসেন বলেন, লাভলু পিতা জাহাঙ্গীর আলম একজন রিক্সা চালক। অনেক কষ্ট করে স্ত্রী সন্তান নিয়ে দিনাতিপাত করেন। তিনি বলেন, শিকক্ষদের দায়িত্বহীনতার কারণে এমন ছেলেটি জাতীয় পর্যায়ে খেলার সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারলো না। আমি দোষি ওই শিক্ষিকার বিচার চাই।

রংপুর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর ও শিক্ষক সুলতান আহমেদ জানান, ঘটনাটি দুঃখজনক। জাতীয় পর্যায়ে খেলার সুযোগ পেয়েও ছেলেটি উজ্জল স্বপ্ন ভেঙে গেল। তিনি শিক্ষিকার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে। এ বিষয়ে পশ্চিম গোপিনাথপুর রত্নেশ^রী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা আয়শা খাতুনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলাদেশের কোন সাংবাদিকের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করবে না বলে জানিয়ে দেন। এ বিষয়ে রংপুর বিভাগীয় প্রাথমিক অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুল ওয়াহাব জানান, ভুক্তভোগি ওই পরিবারের পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

পিবিএ/এস আই/ জেডআই

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে