মারুফ সরকার, বিনোদন প্রতিনিধি: রাস্তা থেকে অপহরণের পর চলচ্চিত্র প্রযোজক ও নায়িকা সিমি ইসলাম কলির পায়ের রগ কেটে হত্যাচেষ্টার করেছে দুর্বৃত্তরা। গত ২৯ জুলাই রাতে নরসিংদীর শিবপুর ও রায়পুরা থানার সংযোগস্থল খইনপুর কুটিরবাজার ব্রিজের কাছে নৃশংস এ ঘটনা ঘটে। অপহরণকারীরা মাইক্রোবাসে তুলে ওই প্রযোজকের রগ কেটেই কেবল ক্ষান্ত হয়নি; মৃত্যু নিশ্চিত করতে খইনপুর গ্রামের এক বাসায় নিয়ে তার চোখ উপড়ে শ্বাসরোধ করে হত্যাচেষ্টাকালে মৃত ভেবে তাকে দা দিয়ে কেটে টুকরো করে বস্তায় ভরতেও উদ্যত হয় সন্ত্রাসীরা।

কিন্তু রাখে আল্লা মারে কে! যে বাসায় ঘটনাটি ঘটে, সেই বাসারই এক নারীর হস্তক্ষেপে নায়িকা সিমি প্রাণে বাঁচেন। প্রাণশঙ্কার ভয়ে তিনি এখন রাজধানীর মগবাজার এলাকায় এক প্রতিবেশীর বাসায় আত্মগোপন করে আছেন। গতকাল ওই বাসায় ঘটনার সবিস্তার তুলে ধরেন সিমি। তিনি বলেন, ব্যবসায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে বিশিষ্ট এক ব্যাংকার ভাড়াটে খুনি দিয়ে পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যার নীল নকশা সাজিয়েছে। এটি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে এখনো হুমকি পাচ্ছেন সিমি।

সিমির অভিযোগ- অপহরণকারী ও বিশিষ্ট ওই ব্যাংকারের বিরুদ্ধে মামলা করতে আহত শরীর নিয়ে তিনি নরসিংদীর রায়পুরা থানায় যান। যে থানা এলাকায় অবস্থিত জনৈক আবুলের বাসায় নিয়ে তাকে দা দিয়ে কেটে টুকরা করে বস্তায় ভরার জন্য উদ্যত হয়েছিল দুর্বৃত্তরা। এ বিষয়ে বৃত্তান্তও তুলে ধরেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে মামলা না নিয়ে অপহরণস্থল ব্রিজের ওপারে শিবপুর মডেল থানা এলাকা পড়েছে দোহাই দিয়ে ওই থানায় (শিবপর) মামলা করার পরামর্শ দেন ওসি। অগত্যা ভুক্তভোগী পরে শিবপুর থানাতেও যান। সেখানেও সব খুলে বলেন তিনি। কিন্তু মন গলেনি কারোরই। এই থানা থেকেও খালি হাতে ফিরতে হয় ওই নারীকে। ঘটনার শুরু রায়পুরা থানা এলাকায় হওয়ায় ওই থানাতেই মামলা করার পরামর্শ দেন শিবপুর থানার ওসিও। বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও জানান সিমি। পরে রায়পুরা থানার এক কর্মকর্তা মামলা নেবে বলে তাকে থানায় আসতে বলেন। কিন্তু মাঝপথে যাওয়ার পরই আবার সেই থানা থেকে ফোন করে বলা হয় মামলা নেওয়া হবে না। ফলে কিছুতেই কিছু হয়নি। দুই থানার ঠেলাঠেলিতে ঘটনার প্রায় এক মাস পরও অর্থাৎ গতকাল মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করতে পারেননি প্রযোজক সিমি।

তবে অভিযোগ ভিত্তিহীন ও মনগড়া দাবি করে রায়পুরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গোবিন্দ সরকার গতকাল রাতে আমাদের সময়কে বলেন, ওই নারী থানায় আসেননি। তাকেই বরং ফোন করে থানায় এসে মামলা করার অনুরোধ করা হয়। কিন্তু কী কারণে তিনি সাড়া দেননি তা বোধগম্য নয়। অভিযোগ দিলে তার মামলা গ্রহণ করা হবে। থানার ওসি ব্যস্ত থাকায় তার ফোন দিয়েই কথা বলেন পরিদর্শক তদন্ত কর্মকর্তা।

অভিন্ন মন্তব্য করে শিবপুর থানার ওসি সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, ঘটনাটি আমার থানা এলাকায় না। তার পরও লোকমুখে শুনে আমি ঘটনাস্থলে গেছি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। থানা থেকে একজন কর্মকর্তাকে ভিকটিমের খোঁজে নরসিংদী সদর হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালেও পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু ওই নারী ঘটনাস্থল রায়পুরা বলে আর আসেননি।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির নেতা খোরশেদ আলম খসরু বলেন, প্রযোজক সিমির হত্যাচেষ্টার ঘটনার বিষয়ে আমরাও অবগত হয়েছি। ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছি। এ দেশের প্রতিটি মানুষই ন্যায়বিচার আশা করেন। সেখানে এত বড় একটি ঘটনা অথচ কোনো থানাই অভিযোগ নিচ্ছে না। এটি অন্যায়। আমরা ওর সঙ্গে আছি, প্রয়োজনে সবাই মিলে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলব।

প্রযোজক সিমি জানান, গত ২৯ জুলাই রাত ১০টার দিকে খইনপুর থেকে ঢাকায় ফেরার পথে কুটিরবাজার ব্রিজ পার হওয়ার পর একটি মাইক্রোবাস আমাদের মোটরসাইকেলের পাশে এসে থামে। এ সময় অতর্কিত অপরিচিত এক নারীসহ কয়েকজন গাড়ি থেকে নেমে আমার চোখে ঘুষি মারে। এর পর দুজন আমার চোখ বাঁধে। এর পর সেই নির্জন রাস্তায় ৪-৫ জন আমাকে বেধড়ক মারধর করে। পেছনে থাকা নারী ওড়না দিয়ে আমার গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যাচেষ্টা করে। আমি প্রায় অচেতন হয়ে পড়লে তারা হয়তো ভাবে মরে গেছি। একজন বলে, এখানে লাশ ফেললে বিপদ হবে। এখানে নয় চল ওকে নিয়ে অন্য কোথাও রেখে চলে যাই। একজন বলে, ওকে কেটে টুকরো করে বস্তায় ভরে অন্য কোথাও ফেলে দিই। তখনো আমার হাত ও চোখ বাঁধা ছিল। এর পর লম্বা মতো একজন বলে, ওকে বাসায় নিয়ে কেটে বস্তায় ভরবি। রাতে নিয়া ফালায় দিবি। এদের মধ্যে দুজন গাড়ি থেকে নেমে চলে যাওয়ার সময় একজন মৃত্যু নিশ্চিত করতে আমার ডান পায়ে ধারালো কিছু দিয়ে রগ কেটে দেয়। অন্যরা এ অবস্থায় খইনপুর গ্রামের একটি বাসায় নিয়ে সেখানে থাকা একটি খাটের নিচে ঢুকিয়ে দেয় আমাকে। কিছু সময় পর দেখি দুজন পুরুষ আমাকে দা দিয়ে কেটে টুকরো করার জন্য উদ্যত হচ্ছেন, আর দুজন নারী একটি বস্তা ধরে আছে সেই টুকরো ভরার জন্য। আমি এই দৃশ্য দেখে চিৎকার দিলে প্রতিবেশী এক নারী দৌড়ে এলে সবাই ঘাবড়ে যায়। এর পর ওই নারী রক্তাক্ত অবস্থায় আমাকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেয়। অবস্থার অবনতি হলে ভোরে আমাকে ঢামেক হাসপাতালে আনা হয়। চিকিৎসকের পরামর্শে সেখান থেকে আমাকে পঙ্গু হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। হত্যাচেষ্টার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন প্রযোজক সিমি ইসলাম কলি।

প্রসঙ্গত, প্রযোজনা ছাড়াও সিমি অভিনয় করেছেন বেশ কিছু সিনেমাতেও। তার প্রযোজিত সবশেষ সিনেমা ‘তুমি আছ তুমি নেই’ মুক্তি পায় গত বছরের মার্চে। বরেণ্য নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর পরিচালনায় এ সিনেমার মধ্য দিয়ে নায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ হয় চিত্রনায়িকা প্রার্থনা ফারদিন দীঘির।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে