হাকিকুল ইসলাম খোকন, যুক্তরাষ্ট্র সিনিয়র প্রতিনিধিঃ ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর যে প্রশ্নটি এখন বেশি করে উঠছে তা হলো— ইউক্রেনকে রক্ষা করতে বাইডেন কি সেখানে সেনা পাঠাবেন?

ইরাক ও আফগানিস্তানের সামরিক অভিযানে ব্যর্থতার পর ইউক্রেনে সেনা পাঠানো নিয়ে নেতিবাচক অবস্থান নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে আফগানিস্তানে ২০ বছরের সামরিক অভিযানের শোচনীয় ব্যার্থতার পর যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটিক দল ও মার্কিন রাজনীতিবিদদের একাংশ দেশের বাইরে মার্কিন সেনা পাঠানোর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন।মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিজেই গত বছর ঘোষণা দিয়েছিলেন, ইউক্রেনে মার্কিন সেনা বা ভারী অস্ত্র ও সামরিক যান পাঠানোর কোনো ইচ্ছে বা পরিকল্পনা তার প্রশাসনের নেই।

বাইডেন প্রশাসনের প্রায় এক ডজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গকে জানিয়েছেন, রাশিয়াকে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালানো থেকে বিরত রাখতে মূলত অর্থনৈতিক অবরোধমূলক পদক্ষেপের ওপরই নির্ভর করতে চাইছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

এবং প্রাথমিকভাবে সেই অস্ত্র প্রয়োগও করেছেন বাইডেন। দীর্ঘ দুই মাস ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় ২ লাখ সেনা মোতায়েন রাখার পর মঙ্গলবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যখন দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় দুই ভূখণ্ড দোনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিলেন, তার প্রতিক্রিয়ায় কয়েকটি নিষেধাজ্ঞা জারি করেন জো বাইডেন এবং পুতিনকে হুঁশিয়ার করে বলেন, ইউক্রেনে রুশ হামলা ঘটলে আরও ‘গুরুতর’ ও ‘নজিরবিহীন’ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।ইতোমধ্যে জারি করা নিষেধাজ্ঞার আওতায় রাশিয়ার দুটি ব্যাংকের কার্যক্রম যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইন— যার মাধ্যমে রাশিয়া থেকে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ করা হয়, তা বন্ধ করা হয়েছে এবং রাশিয়ার সরকারি প্রশসনের বেশ কিছু কর্মকর্তা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।কিন্তু এসব নিষেধাজ্ঞায় ভ্লাদিমির পুতিন বিচলিত হয়েছেন— বাস্তব পরিস্থিতিতে তা বলার অবকাশ তেমন নেই, কারণ বুধবার যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররাষ্ট্রদের নিষেধাজ্ঞা জারির পরের দিনই ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দিয়েছেন পুতিন।

এক প্রতিবেদনে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, ইউক্রেন ইস্যুতে বুধবার পর্যন্ত যেসব নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে সেগুলোর পরিকল্পনার পেছনে সময় ব্যায় হয়েছে ৫ মাসেরও বেশি। অর্থাৎ, ইউক্রেনে রাশিয়া হামলা করলে দেশটির ওপর কী কী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে, সে বিষয়ক পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি গত বছর আগস্টের মাঝামাঝি সময় থেকেই নেওয়া শুরু করেছিল বাইডেন প্রশাসন।

কিন্তু এই পরিস্থিতিতে কেবল নিষেধাজ্ঞা জারি করে রাশিয়াকে থামানো যাবে কি না- তা নিয়ে সংশয়ে পড়েছেন খোদ বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারাই। তাদের অনেকেরই ধারণা, পরিস্থিতি আরও গুরুতর রূপ নিতে থাকলে হয়ত এক সময় পূর্বের অবস্থান থেকে সরে আসতে হবে জো বাইডেনকে এবং ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর ঘোষণা দিতে হবে। কারণ তখন হয়তো এটি ছাড়া আর কোনো উপযুক্ত বিকল্প থাকবে না তার সামনে।

ডেমোক্র্যাটিক এই প্রসিডেন্টের প্রধান প্রতিপক্ষ রিপাবলিকান পার্টির সমর্থকরা অবশ্য ইতোমধ্যে মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে একটি ‘গতানুগতিক ভোঁতা অস্ত্র’ বলে মনে করছেন। রিপাবলিকান পার্টির সদস্য ও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা স্টিফেন বেইগান এ প্রসঙ্গে ব্লুমবার্গকে বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা এখন একটি গতানুগতিক ভোঁতা অস্ত্র। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে— এমন কোনো বৈদেশিক শক্তিকে দমন করতে হলে যে এই অস্ত্র খুব একটা কাজের নয়, তার প্রমাণ আমরা ইতোমধ্যে পেয়েছি।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে