জুলফিকার, সিলেট থেকেঃ নদী তীরবর্তী এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হলেও অবনতি হচ্ছে হাওর এলাকায়। একদিকে পানি কমলেও বাড়ছে অন্যদিকে। ১৩ জুন থেকে শুরু হওয়া বন্যায় এখনো জেলাবাসীর দূর্ভোগের অন্তনেই। নদী তীরবর্তী গ্রাম ও শহরের লোকজন পানি কমতে শুরু করায় বসত বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন। চলছে ক্ষতিগ্রস্থ বাসাবাড়ি মেরামত ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ। ভেঁসে উঠছে প্লাবনের পানিতে ডুবে থাকা রাস্তাঘাটও। অন্যদিকে বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ার ভয়ে নিকট আত্মীয় বা আশ্রয় কেন্দ্র খোঁজছেন হাওর পাড়ের মানুষ।

কারণ আরো ২-৩ ফুট পানি বাড়লেই বন্যায় তলিয়ে যাবে তাদের রাস্তাঘাট ও বসতভিটা।এবছর আকস্মিক বন্যায় ঘরবাড়ি, মসজিদ, মন্দির,ঈদগাহ মাঠ,কবরস্থান শশ্মান ঘাট,রাস্তাঘাট,ব্যবসা প্রতিষ্ঠান,গবাদিপশু,মৎস্যখামার আউশ ও সবজির ক্ষেতসহ তলিয়ে যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও। জেলা প্রশাসন সুত্রে জানা যায় এবছর আর্কস্মিক বন্যায় জেলার ৪টি উপজেলার ২টি পৌরসভা ও ৩০ টি ইউনিয়নের ৪০ হাজার পরিবারের ১ লক্ষ ৯৩ হাজার ৪শ জন মানুষ বন্যা আক্রান্ত হয়েছেন। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন এবছর জেলার ৪০ টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভা মিলে ৪ লক্ষাধিক মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন।

জেলা প্রশাসন জানায় এ পর্যন্ত ১. ১৬৭ মেট্রিক টন বরাদ্ধকৃত চাল, ৫ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও নগদ ১৩ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা বন্যা কবলিত এলাকায় বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও আরো চাল ও নগদ টাকা ত্রাণ সহায়তার জন্য চাহিদা পাঠানো হয়েছে। ৫০টি আশ্রয় কেন্দ্র ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগে ৭৪টি মেডিকেল টিম বন্যা কবলিত এলাকায় কাজ করছে। জেলা শিক্ষা অফিস (প্রাথমিক ও মাধ্যমিক) সুত্রে জানা যায় আকস্মিক বন্যায় কম বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে জেলার ৫টি উপজেলার (প্রাথমিক ও মাধ্যমিক) ৯৪৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৫১ টি বিদ্যালয়। এসকল বিদ্যালয়ের অফিস,শ্রেণীকক্ষ,বারান্দা,আঙ্গিনা ও খেলার মাঠ তলিয়ে দেয় বানের পানি।

তবে ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢল না আসায় এখন অধিকাংশ বন্যা কবলিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। এরপরও এখনো পানি না নামায় এর মধ্যে ১৫১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ঈদ উপলক্ষে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান এখনো বন্ধ রয়েছে।২৩ জুন শনিবার পুন:রায় পাঠদান কার্যক্রম শুরু হবে। বানের পানিতে নিমজ্জিত বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তবে ঈদের বন্ধ থাকার পর বুধবার ২০ জুন থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সুত্রে জানা যায় জেলার কুলাউড়া,রাজনগর,মৌলভীবাজার, জুড়ী ও বড়লেখা এই ৫টি উপজেলায় ৭৫৯ টি বিদ্যালয়ের মধ্যে বন্যা কবলিতদের জন্য ১৭ টি বিদ্যালয়ের আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

বানের পানিতে শ্রেণীকক্ষ তলিয়ে থাকায় এখনো পাঠদান বন্ধ রয়েছে ৯৮টি বিদ্যালয়ের। আর এরমধ্যে অফিস, শ্রেণীকক্ষ,বারান্দা,আঙ্গিনা ও খেলার মাঠ পানিতে ডুবিয়ে যাওয়া বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৯৪টি। এছাড়া  আকস্মিক বন্যায় কমলগঞ্জ উপজেলার ১৪টি বিদ্যালয় বন্যা কবলিত হলেও পানি নেমে যাওয়ায় এখন সে গুলোতে পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। অপরদিকে জেলা (মাধ্যমিক)  শিক্ষা অফিস সুত্রে জানা যায় বন্যায় জেলার ১৯০ টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ৭টি উপজেলার (আংশিক ও পুরো) ২৪ টি বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষ ও বিদ্যালয়ে পানি থাকায় পাঠদান কার্যক্রম চালানো সম্ভব হবেনা। এছাড়া ১২ টি বিদ্যালয়ে বন্যা কবলিতরা আশ্রয় নিয়েছেন। এরমধ্যে অফিস,শ্রেণীকক্ষ,বারান্দা,আঙ্গিনা ও খেলার মাঠ পানিতে ডুবিয়ে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্থ বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৬টি। তবে হাওর অঞ্চলে আবার নতুন করে বন্যা দেখা দিলে এই পরিসংখ্যান আরো বাড়বে।

শনিবার থেকে ঈদের বন্ধের পর মাধ্যমিক বিদ্যালয় গুলো খোলার কথা রয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বায়েজিদ খান ও জেলা শিক্ষা অফিসার (মাধ্যমিক) এস এম আব্দুল ওয়াদূদ  জানান এবছর আকস্মিক বন্যায় এজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গেল বছরও অনুরুপ বন্যা ও বন্যার পর দীর্ঘ জলবদ্ধতায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোর পাঠদান ব্যাহত হওয়াসহ আসবাবপত্রেরও ক্ষয়ক্ষতি হয়। এবছরের বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপন করে আমরা ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। যাতে কোন ভাবে এজেলার সার্বিক শিক্ষা ব্যবস্থায় বড় ধরনের ক্ষতি না হয়। তারা বলেন যে সকল বিদ্যালয় বন্যা কবলিত থাকায় পাঠদান বন্ধ থাকবে সে বিদ্যালয় গুলোতে বিশেষ পাঠদানের মাধ্যমে ক্ষতিগুলো পুষিয়ে নেওয়া হবে। শিক্ষার্থীরা যাতে কোন ভাবে পাঠগ্রহণ থেকে বঞ্চিত না হন এই আন্তরিকতা ও তীক্ষদৃষ্টি শিক্ষকদের থাকবে। সে নির্দেশনা আমরা শিক্ষকদের দিয়েছি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে