ডেস্ক রিপোর্টঃ মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর শুরু থেকেই মোবাইল ফোন অপারেটররা নিজেরাই এ খাতের নেতৃত্ব দিতে চাইছে। তবে তাদের এই দাবি মেনে নিতে নারাজ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিনির্ধারকেরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে আর্থিক অনিয়ম বাড়ছে। অর্থ পাচারের অন্যতম উৎসও এখন মোবাইল ব্যাংকিং। ফলে মোবাইল ফোন অপারেটরদের মোবাইল ব্যাংকিং পরিচালনার অনুমোদন দেওয়া যাবে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিনির্ধারকেরা সে সময় আরও বলেন, বিকাশের আধিপত্য কমাতে এ সেবায় আরও প্রতিযোগী বাড়াতে হবে।

সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত ‘সার্ক ফাইন্যান্স সেমিনার অন ইমপেক্টস অব মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস ইন দ্য সার্ক রিজিওন’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন তারা। ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন গভর্নর ফজলে কবির।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে গভর্নর ফজলে কবির বলেন, ‘সার্কভুক্ত দেশগুলোতে বিভিন্ন মডেলে মোবাইলে আর্থিক সেবা চালু আছে। তবে বাংলাদেশে শুধু ব্যাংকের মাধ্যমে সেবা প্রদান করা হচ্ছে, যা পুরোপুরি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে আছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষ দিন দিন বাড়ছে। এ সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং অর্থ পাচারের বড় হাতিয়ার হতে পারে। বাড়ছে আর্থিক জালিয়াতি ও প্রতারণার ঘটনাও। এসব প্রতিরোধে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। প্রযুক্তি আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সারা দেশের বিস্তৃত মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ব্যাংকিং সেবাবঞ্চিতদের সেবা দিতে ২০১১ সালে নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পল্লি এলাকাতেও সেবা পৌঁছানো সম্ভব। এখন ব্যাংক শাখার খরচ কমিয়ে কীভাবে আর্থিক, বিমা ও অন্যান্য সেবা দেওয়া যায়, তা নিয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের সময় এসেছে।

সেমিনারে অংশগ্রহণকারীরা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অতিরিক্ত খরচ ও বিকাশের মাধ্যমে তিন-চতুর্থাংশ লেনদেন সম্পন্ন হওয়ার বিষয় নিয়ে কথা তোলেন। এ বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক অধ্যাপক বাকী খলিলি বলেন, ‘বিকাশের ব্যবসায়িক কৌশল, ব্র্যান্ডিং, অবকাঠামো ও নেটওয়ার্ক অন্যদের চেয়ে ভালো। এ কারণে তারা অন্যদের চেয়ে এগিয়ে আছে।’

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, যেসব অঞ্চলে যাতায়াত সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল, সে অঞ্চলে বেশি মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহৃত হচ্ছে। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী ও প্রণোদনা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সম্পন্ন করা উচিত।

দেশে কার্যরত ৫৬টি তফসিলি ব্যাংকের মধ্যে ২৫টি ব্যাংককে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা পরিচালনার লাইসেন্স দেওয়া হলেও বর্তমানে ১৮টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকগুলোর এই সেবাটির সঙ্গে মোবাইল ফোন অপারেটরদের বড় ধরনের অংশগ্রহণ রয়েছে।

মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিসেস নীতিমালায় মোবাইল ফোন অপারেটরদের মোবাইল ব্যাংকিং সেবার ১৫ শতাংশ শেয়ার ধারণের সুযোগও রাখা হয়েছে। কিন্তু মোবাইল ফোন অপারেটররা নিজেরাই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নেতৃত্ব দিতে চাইছে। মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর শুরু থেকেই তারা এই দাবি করে আসছে। তাদের বক্তব্য, মোবাইল ফোন ছাড়া মোবাইল ব্যাংকিং সম্ভব নয়। তাহলে এই সেবার নেতৃত্বে তারা কেন থাকবে না। তবে মোবাইল ফোন অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) নিয়ন্ত্রণে থাকায় তাদের এককভাবে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দিতে রাজি নয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, মোবাইল ফোন অপারেটরদের মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অনুমতি দেওয়ার পর তাদের কাজে কোনো অনিয়ম হলে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু করার থাকবে না।

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, ‘মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশে দৈনিক ৬৯০ কোটি টাকা লেনদেন হয়’।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা বিভাগ এ সেমিনারের আয়োজন করে।

পি/এন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে