মিসর থেকে দুটি বোয়িং (৭৭৭-২০০ ইআর) উড়োজাহাজ ভাড়া আনার ঘটনা তদন্তে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সাবেক চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সংসদীয় কমিটি। সাত বছর আগে ওই দুটি বিমান লিজ নেওয়া হয়েছিল।

বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিমানের সাবেক চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) জামাল উদ্দীন আহমেদ এবং এমডি মোসাদ্দেক হোসেনকে তলব করা হয়।

র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য বিমান প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, আশেক উল্লাহ রফিক, আনোয়ার হোসেন খান, সৈয়দা রুবিনা আক্তার এবং কানিজ ফাতেমা আহমেদ অংশ নেন।

বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, আমরা তাদের কথা শুনেছি। তারা বক্তব্য দিয়েছে, লিখিতও দিয়েছে। আরও লিখিত দেবে। আরও কথা আমরা শুনবো। তদন্ত করবো। আমরা এখনই বলছি না যে দুর্নীতি হয়েছে। এখানে কাউকে এই মুহূর্তে দোষীও করছি না। যে ক্ষতি হয়েছে সেটা দুর্নীতির কারণেই যে হয়েছে এমন নয়। ভুল সিদ্ধান্তও হতে পারে। আমরা আরও পর্যালোচনা করবো। যাচাই করে সিদ্ধান্ত জানাবো।

বৈঠকের পর বিমানের সাবেক চেয়ারম্যান জামাল উদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, মিসরের উড়োজাহাজ লিজ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা আমাদের বক্তব্য নিয়েছেন। তবে উড়োজাহাজ ভাড়া নিয়ে কী বক্তব্য দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এদিকে, সাবেক এমডি মোসাদ্দেক সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলতে চাননি।

বুধবার সংসদীয় কমিটি দুইটি বৈঠক করে। বেলা ১১টায় নিয়মিত বৈঠকের পর দুপুর ২টায় মিসরীয় উড়োজাহাজ লিজ নিয়ে বৈঠকে বসে তারা।

গত ৮ সেপ্টেম্বর ওই দুটি উড়োজাহাজ ভাড়া আনার সঙ্গে জড়িতদের তলব করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

পাঁচ বছরের চুক্তিতে ইজিপ্ট এয়ার থেকে বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর উড়োজাহাজ দুটি লিজ নিয়েছিল বাংলাদেশ বিমান। এর একটি বিমানের বহরে যুক্ত হয় ২০১৪ সালের মার্চে এবং অন্যটি একই বছরের মে মাসে।

ভাড়ায় আনার এক বছরেরও কম সময়ে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফ্লাইট পরিচালনার পর একটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। উড়োজাহাজটি সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকেই ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন।

দেড় বছরের মাথায় নষ্ট হয় বাকি ইঞ্জিনটিও। উড়োজাহাজটি সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকে আবারও ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। পরে ভাড়ায় আনা ইঞ্জিনও নষ্ট হয়ে যায়।

সেই ইঞ্জিন মেরামত করতে যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়। তবে মেরামতের ক্ষেত্রে কোনো সময় নির্দিষ্ট থাকায় ইজিপ্ট এয়ার এবং মেরামতকারী কোম্পানি, উভয়কেই অর্থ দিতে হয়েছে বিমানকে।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় গত বছরের অক্টোবর মাসে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে জানায়, দুটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ উড়োজাহাজের পেছনে পাঁচ বছরে বাংলাদেশ বিমানের ক্ষতি হয়েছে ১১শ কোটি টাকা। ওই বৈঠকে জানানো হয়, এই উড়োজাহাজ দুটি চালিয়ে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ২২শ কোটি টাকা, আর খরচ হয়েছিল ৩৩শ কোটি টাকা।

দুটি উড়োজাহাজের জন্য প্রতিমাসে বিমান ১১ কোটি টাকা করে ভর্তুকি দিয়ে আসছিল। সেই দায় থেকে গত বছরের মার্চ মাসে মুক্ত হতে পেরেছে বিমান।

Jag/N

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে