২০২২-২৩ অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষাখাতে ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছর এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য অনুদান বরাদ্দ থাকছে। 

বৃহস্পতিবার (৯ জুন) জাতীয় সংসদে বাজেট ঘোষণা করা হয়। বাজেট অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার হার বৃদ্ধি, জেন্ডার সমতা আনয়ন, সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সমন্বয়ে শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন, ছাত্র ও শিক্ষকদের বৃত্তি-উপবৃত্তিসহ আর্থিক সহায়তা, মেধার বিকাশে নানারূপ কার্যক্রম গ্রহণ, সহায়ক নীতিমালা ও পরিবেশ তৈরি, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন, বেসরকারি এমপিওভূক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের আর্থিক সুবিধা প্রদান, বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, ই-বুকের প্রচলন, উপজেলা আইসিটি ট্রেনিং ও রিসোর্স সেন্টার স্থাপন, ইত্যাদি বহুমাত্রিক কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এনটিআরসিএর মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩৮ হাজার ২৮৩ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ১৫ হাজার ১৬৩ জন শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১২ হাজার শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ করা হচ্ছে। ই-বুকের প্রচলন, উপজেলা আইসিটি ট্রেনিং ও রিসোর্স সেন্টার স্থাপন, ৩১৫টি উপজেলায় একটি করে বেসরকারি বিদ্যালয়কে মডেল স্কুলে রূপান্তর করা হয়েছে। শিক্ষার সুযোগবঞ্চিত দরিদ্র মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য গঠিত প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ডে সিড মানি হিসাবে ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

ট্রাস্টি বোর্ড গঠন ও ট্রাস্ট পরিচালনা বিধি প্রণয়নসহ জনবল কাঠামো চূড়ান্ত করতে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের সাহায্য মঞ্জুরি হিসেবে এককালীন ৮ কোটি টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ বাবদ এককালীন ২০ কোটি টাকা অনুদান দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থাপনা ও শিক্ষা কার্যক্রমে আইসিটি এবং ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ইনোভেশন টিম কাজ করছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৬ হাজার ৪২০ জন শিক্ষককে আইসিটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আইসিটি বিষয়ে ১৬ হাজার ৩০০ জন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম, নিবন্ধন, প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন ও পরীক্ষার ফল প্রকাশের দ্বারা সংশ্লিষ্টদের হয়রানি লাঘব হয়েছে। সনদের ভুল সংশোধন, স্বীকৃতি নবায়ন ও প্রতিনিধি মনোনয়ন কার্যক্রম অনলাইনে সম্পন্ন করা হচ্ছে। দেশের মোট ২০ হাজার ৪৯৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৫ হাজার ৬৭৬টি এবং মোট ৪ হাজার ২৩৮টি কলেজের মধ্যে ৭০০টি কলেজে অনলাইন ক্লাস চালু হয়েছে।

সারাদেশে ২০০টি সরকারি কলেজে উন্নয়নের কাজ চলছে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে অতিরিক্ত প্রায় ২ লাখ শিক্ষার্থীর ভর্তির সুযোগ সৃষ্টি হবে। দেশের ৩২৩টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধির কাজ চলছে।

অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের লক্ষ্যে তিনটি প্রকল্প চলমান। এছাড়া বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের লক্ষ্যে ৪৩টি প্রকল্প চলমান।

করোনাভাইরাসের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের আকার হচ্ছে ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এবারের বাজেটের আকার যেমন বড়, তেমনি এ বাজেটে ঘাটতিও ধরা হয়েছে বড়।

অনুদান বাদে এই বাজেটের ঘাটতি দুই লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা জিডিপির সাড়ে ৫ শতাংশের সমান। অনুদানসহ বাজেট ঘাটতির পরিমাণ দুই লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ দশমিক ৪০ শতাংশের সমান।

এটি বর্তমান সরকারের ২৩তম এবং বাংলাদেশের ৫১তম ও বর্তমান অর্থমন্ত্রীর চতুর্থ বাজেট। বাজেটে সঙ্গত কারণেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কৃষিখাত, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ, কর্মসংস্থান ও শিক্ষাসহ বেশকিছু খাতকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

Jag/N

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে