জয়নাল আবেদীন হিরো, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধিঃ নীলফামারীর সৈয়দপুরে চলতি আমন আবাদ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে কৃষকরা। ধানের ক্ষেতে একের পর এক পোকা ও রোগের আক্রমনে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

বিশেষ করে মাজরা ও কারেন্ট পোকায় আক্রান্ত হয়ে ধানগাছ মরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এতে ফলন নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন। সমস্যা সমাধানে কৃষি বিভাগের কোন প্রকার সহযোগিতা না পেয়ে স্থথানীয় কীটনাশক দোকানদারদের পরামর্শে ধান রক্ষায় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।

সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের ধলাগাছ ফাইলেরিয়া হাসপাতাল সংলগ্ন কৃষি মাঠে একের পর এক জমিতে মাজরা পোকার আক্রমনে ফলন্ত ধানের শীষগুলো সাদাবর্ণ ধারণ করেছে এবং দানা নষ্ট হয়ে গেছে। জমির প্রায় এক তৃতীয়াংশ ধানগাছ এভাবে আক্রান্ত হয়েছে। যারা দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে তাদের ফসল কিছুটা রক্ষা পেলেও অনেকের ক্ষেত প্রায় পুরোটাই নষ্ট হওয়ার পথে।

ধলাগাছ সর্দারপাড়ার মৃত মনির উদ্দিনের ছেলে কৃষক মোঃ সামসুল হক (৪৫) এসময় তার জমিতে কীটনাশক স্প্রে করতেছিলেন। তিনি জানান, আমি চলতি বছর প্রায় ৪ বিঘা (২ একর ৪০ শতক) জমিতে স্বর্ণা-৫ ও গুটি স্বর্ণা ধান আবাদ করেছেন। চারা রোপনের পর থেকে নানা সমস্যায় ভুগছেন। প্রথম দিকে কারেন্ট পোকার আক্রমন ঘটে। পরে পাতা মরা ও পঁচানী রোগ দেখা দেয়। এখন শুরু হয়েছে মাজরা পোকার ব্যাপক আক্রমন।

তিনি বলেন, এবার যে হারে মাজরা পোকা ধরেছে, আগে কখনও এমনটা দেখা যায়নি। এই পোকার কারণে ধান গাছে ফলন্ত শীষগুলোর দানা নষ্ট হয়ে সাদা হয়ে পড়েছে। দ্রুত এ রোগ এক গাছ থেকে আরেক গাছে ছড়িয়ে পড়ছে। বার বার ওষুধ দিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছি।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, এত সমস্যায় থাকলেও আজবধি কৃষি বিভাগের কারও কোন সহযোগিতা পাইনি। এমনকি কামারপুকুর ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তার (বিএস) দেখাও পাইনি দীর্ঘ প্রায় ১ বছর যাবত।

আগে বাসুদেব নামে যিনি বিএস ছিলেন তিনি মাঝে মাঝে পরিদর্শনে আসলেও বর্তমান বিএসকে পাওয়া যায়না। ফলে বাধ্য হয়ে স্থানীয় সার ও কীটনাশক দোকানদারদের পরামর্শ নিয়ে জমিতে কীটনাশক স্প্রে করছি।

একইভাবে অভিযোগ করেন সৈয়দপুর শহরের কয়ানিজপাড়ার গোলাম মোস্তফা। তিনি জানান, ফাইলেরিয়া হাসপাতালের পূর্বপার্শে কামারপুুকুর ইউনিয়নে ২ একর জমিতে স্বর্ণা-৫ ধান আবাদ করেছি। রোপনের পর থেকে পঁচানী, কারেন্ট পোকার কারনে চরম ভোগান্তি গেছে। কোন রকমে ওই সমস্যা কাটিয়ে উঠলেও এখন মাজরা পোকার আক্রমনে ফসল ধ্বংসের মুখে। ফলন নিয়ে চরম আতঙ্কে আছি। কৃষি বিভাগের কারও কোন প্রকার সহায়তা বা পরামর্শ পাইনি। তারা কোন দিনই মাঠ পর্যায়ে আসেন না। ফলে কৃষকরা চরম সমস্যায় আছে।

কামারপুকুর ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা (বিএস) আসাদুজ্জামান আশার মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, ইউনিয়ন পরিষদে অবস্থান করছি। কিছুক্ষণ আগেই ধলাগাছ এলাকা পরিদর্শন করে এসেছি। কোথাও তো মাজরা পোকার আক্রমন চোখে পড়েনি। তাছাড়া কোন কৃষকও তো এ ব্যাপারে জানায়নি। জানালে অবশ্যই মাঠে গিয়ে পরামর্শ দিয়ে আসতাম।

এ ব্যাপারে সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি অফিসার শাহিনা বেগমের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, কৃষকরা যদি আমাদের না জানায় তাহলে তো তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরামর্শ দেওয়া সম্ভব না। আমার কৃষি উপসহকারীরা মাঠেই অবস্থান করছেন। এমনকি আমিও এই মুুহুর্তে মাঠে আছি। আমরা সর্বতভাবে চেষ্টা করছি কৃষকদের সমস্যা সমাধানের।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে