ডেস্ক রিপোর্টঃ  ১৮ আগস্ট মাকালকান্দি গণহত্যা দিবস। হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার প্রত্যন্ত হাওর অঞ্চল কাগাপাশা ইউনিয়নের হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামটির নাম মাকালকান্দি। ১৯৭১ সালের ১৮ আগস্ট মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের এই দিনে গ্রামের ৪৪ জন নারীসহ ৭৮ জন নিরাপরাধ হিন্দুকে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ ও বেয়নেট দিয়ে খুচিয়ে হত্যা করে পাকিস্থান হানাদার বাহিনী। ঘাতকরা এতেই ক্ষ্যান্ত হয়নি।

বর্বরোচিত হত্যাকান্ডের পর নারীদের সম্ভ্রমহানি ঘটায়। পরে গ্রামবাসীর মালামাল লুট করে নিয়ে যায় এবং বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। সেই ভয়াল দিনের স্মৃৃতি বুকে নিয়ে আজও নীরবে-নিভৃতে চোখের অশ্রু ফেলছেন স্বজনরা।

১৯৭১ সালের ১৮ আগস্ট সকালে মাকালকান্দি গ্রামের চন্ডি মন্দিরে মনসা ও চন্ডিপুজার প্রস্ততি নিচ্ছিলেন পূজারীরা। এ সময় স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় ৪০ থেকে ৫০টি নৌকাযোগে খান সেনারা এসে গ্রামে হামলা চালায়। তারা চন্ডি মন্দিরের সামনে দাঁড় করিয়ে তরনী দাশ, দীনেশ দাশ, ঠাকুর চান দাশ, মনোরঞ্জন দাশ, প্রভাসিনী বালা দাশ, চিত্রাঙ্গ বালা দাশ, সোহাগী বালা দাশসহ ৭৮ জনকে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে। এর মধ্যে ৪৪ জনই নারী।

হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ফিরে যাওয়ার সময় পাক বাহিনী লুটে নেয় হিন্দুদের কয়েক কোটি টাকার সম্পদ। পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে দেয় অনেক বাড়ি ঘর। এতে জানমাল, সহায়-সম্বল হারিয়ে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে পড়েন। তাদের হামলার পরও বেঁচে যাওয়া লোকজন পুনরায় হামলার আশংকায় ভারতে পালিয়ে যান। পথে ডায়ারিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে আরও অন্তত ৫০ জন প্রাণ হারান।

বানিয়াচং উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল খালেক জানান, ১৯৭১ সালের ১৮ আগস্ট রাজাকারদের সহায়তায় পাকবাহিনী মাকালকান্দি গ্রামে নারকীয় হত্যাকান্ড চালায়। এই গণহত্যায় অনেকেই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। এ দিবসটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপন করা হয়। এ বছরও বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

স্বাধীনতার দীর্ঘ ৩৬ বছর পর ২০০৭ সালে এলাকাবাসীর দাবির মুখে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরে আলম সিদ্দিকীর প্রচেষ্টায় থোক বরাদ্দের অনুদানে সেখানে একটি স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করা হয়। সেই স্মৃতি সৌধে এবারও ১৮ আগস্ট সকালে উপজেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসী ফুল দিয়ে স্মরণ করবে শহীদদের।

B/S/S/N.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে