মোঃ কাওছার হামিদ: মহান ২১শে ফেব্রুয়ারী। সালাম,বরকত,রফিক,জব্বার,বরকতের রক্ত ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবহ আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস। জাতির ইতিহাসে অবিস্বরণীয় ও চিরভাস্কর এই দিনটি। ১৯৪৭সালে ভারত পাকিস্তান ভাগ হওয়ার পর পশ্চিম পাকিস্তানিরা শোষনের যাঁতাকলে তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তান অর্থ্যাৎ বাঙ্গালীদের নিস্পেষণ করতে শুরু করে। এরেই ধারাবাহিকতায় পাকিস্তানি শাসকরা বাঙ্গলীর মুখের ভাষা কেড়ে নিয়ে উর্দুকে চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা শুরু করে। শাসকদের এই অন্যায়ের অনুকূলে মাথা না নুয়ে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় ১৯৫২সালে ২১শে ফেব্রুয়ারী রাজ পথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন সালাম,রফিক,বরকত,জব্বারেরা। মাতৃভাষা মর্যাদা রক্ষায় এতবড় আতত্যাগের ইতিহাস বিশ্বে আর কোন জাতির নেই।

১৯৯৯সালে ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘের শিক্ষা,বিজ্ঞান,সাংস্কৃতিক, সংস্থা ইউনেস্কোর ৩১তম সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রস্তাবিত অমর একুশে ফেব্রুয়ারী আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। একুশে ফেব্রুয়ারী শুধু বাংলাদেশেই নয় বরং সমস্ত বিশ্বে যথাযথ মর্যাদার সহিত পালিত হয়। একুশে ফেব্রুয়ারী আমাদেরকে অন্যায়ের কাছে মাথা না নোয়ানোর শিক্ষা দেয়।

এই ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকায় ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম। শুধু তাই নয় স্বাধীনতার পর থেকে যে কোন আন্দোলন সংগ্রাম বাঙ্গালী জাতি একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়েছে। তবে পরিতাপের বিষয় একুশে ফেব্রুয়ারী মর্যাদা কেবল আমাদের বক্তৃতা ভাষনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। ভাষা আন্দোলনের পর ছয় দশকেরও বেশী সময় পেরিয়ে গেছে এখনো রাষ্ট্রের সর্বস্থরে বাংলা ভাষা প্রয়োগ হয়না। রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ বিচার বিভাগ। দেশের মোট জনগোষ্টির একটি বিপুল অংশকে বিভিন্ন কারনে আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়।

তবে অত্যন্ত বেদনাদায়ক যে, এখনো আদালতে বিভিন্ন কার্যক্রম ইংরাজীতে পরিচালিত হয়। হাতে গনা কয়েকজন বিচারপতি বাংলায় রায় লিখে থাকেন। একটি জাতির পরিপূর্ণ বিকাশে ভাষার বিশুদ্ধতা অত্যন্ত জরুরী একটি বিষয়। কিন্তু এ দেশের খোদ গণমাধ্যম গুলোই ভাষার বিশুদ্ধতাকে নষ্ট করেছে। বিশেষ করে এফ.এম.রেডিও এবং টেলিভিশন চ্যানেল গুলোয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যে, যগাখিচুরী বাংলা ভাষা ব্যবহার করা হয় তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আধুনিকতার দোহাই দিয়ে অত্যন্ত সচেতন ভাবেই বাংলাকে বিকৃত করার চেষ্টা চলছে, গত এক দশক ধরে। নতুন প্রজন্মের কাছে ভাষার শুদ্ধরুপটি পৌঁছে দেওয়ার আমাদেরই দায়িত্ব। মোদের গর্ব,মোদের আশা, আ-মরি বাংলা ভাষা’ শুধু গানে কবিতায় কিংবা ভাষন বক্তৃতায় সীমাবদ্ধ হয়ে পড়–ক আমরা চাইনা। রাষ্ট্রকেই ভাষার বিশুদ্ধতা রক্ষার জন্য কঠোর হস্তে ব্যবস্থা নিতে হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে