আসাম প্রদেশের সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়কে তাদের শত শত বছরের বসতবাড়ী থেকে উচ্ছেদ করছে।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :  ভারতের সাম্প্রদায়িক বিজেপি সরকার সেদেশের আসাম প্রদেশের সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়কে তাদের শত শত বছরের বসতবাড়ী থেকে উচ্ছেদ করছে।গুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে তাদের বাড়ী-ঘর।

কিন্তু এই উচ্ছেদ অভিযানের সময় সম্প্রতি একটি অবাক করা ঘটনা ঘটেছে কাছাড় জেলার ধলাই-রজনীখাল এলাকায়। কয়েক দিন ধরে চলা ওই এলাকায় উচ্ছেদ অভিযানে প্রায় ১০০টি পরিবারের বাড়িঘর ভেঙে দেয় হাতি– বনবিভাগের কর্মী ও পুলিশ। এই অভিযানে ১০টি হাতি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু যখন হাতি দিয়ে ওই এলাকায় স্থাপিত একটি মসজিদ ভাঙ্গার চেষ্টা করা হয়– দেখা যায় হাতিগুলো তাতে রাজি হচ্ছে না।

গত ৭ জুন বনবিভাগের কয়েকটি হাতি নির্দেশমতো ঘরবাড়িগুলি উচ্ছেদ করে। কিন্তু ওই গ্রামের মসজিদের সামনে এসে হাতিগুলি দাঁড়িয়ে পড়ে এবং পরে তারা বসে যায়। উল্লেখ্য, এই উচ্ছেদ অভিযানের পরিচালক জেলা বনবিভাগের আধিকারিক সানিদেও চৌধুরি এবং পুলিশ অধিকর্তারা বহু চেষ্টা করেও হাতিগুলির দ্বারা মসজিদটিকে ভাঙতে সক্ষম হননি।এরপর হাতির মাহুতরাও হাতিগুলোকে দিয়ে মসজিদের দেয়াল ও কাঠের পিলার ভাঙতে অসমর্থ হয়। কারণ হচ্ছে– হাতিগুলো কোনোমতেই মসজিদের ধ্বংসকার্য চালাতে রাজি হয়নি। ফলে সেখানেই উচ্ছেদ অভিযান শেষ করা হয়।

উচ্ছেদ অভিযানে অংশগ্রহণকারী এক মাহুত রাজেন কৈলি সাংবাদিকদের বলেন, ‘হাতি হচ্ছে ভগবানের প্রতীক। তাই তারা ভগবানের ঘর ভাঙতে রাজি হয়নি। আর সে জন্য হাতিগুলি আমাদের নির্দেশও মানেনি।’

এই বিষয়টি আসামের ধর্মপ্রাণ হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।

অভিযোগ রয়েছে, ভারতের আসাম রাজ্যে বর্তমান বিজেপি সরকার ‘অনুপ্রবেশকারী’ নয়– বরং ভারতীয় নাগরিকদেরই উচ্ছেদ করতে শুরু করেছে। আর এক্ষেত্রেও উচ্ছেদ অভিযানের টার্গেট হচ্ছে আসামের সংখ্যালঘু মুসলিমরা। একেক সময় ভিন্ন ভিন্ন স্থানে এই উচ্ছেদ অভিযান চলছে। বর্তমানে উচ্ছেদ অভিযানের নিশানায় রয়েছে বরাক উপত্যকা।

অবশ্য এই উচ্ছেদ অভিযানের জন্য আসাম সরকার একটি যুক্তি খাড়া করেছে। আর তা হলো- বনাঞ্চলের জমিতে এই নাগরিকরা ঘরবাড়ি তৈরি করে বসবাস করছে। বনাঞ্চলের খালি জমিতেও বসবাস অবৈধ। এর আগে ওড়িশা– উত্তরপ্রদেশ– মধ্যপ্রদেশ– গুজরাত প্রভৃতি এলাকার বনাঞ্চল থেকে ভূমিপুত্র আদিবাসী এবং উপজাতিদের একেবারে আইনগতভাবে উচ্ছেদের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যদিও মানবাধিকার কর্মী ও আদিবাসী সংগঠনগুলির আন্দোলনের ফলে বনভূমির থেকে উচ্ছেদের কাজ বর্তমানে খানিকটা মন্থর গতি নিয়েছে।

আসামে এই উচ্ছেদের কাজে সাধারণত প্রশিক্ষিত হাতি ব্যবহার করা হয়। কারণ– অনেক ক্ষেত্রেই পথ-দূর্গমতার জন্য বুলডোজার ব্যবহার করা সম্ভবপর হয় না।

পিবিএ/এএইচ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে