ডেস্ক রিপোর্ট : ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা অনুযায়ী শেষ পর্যন্ত ভ্যাট (ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স) বা মূসক (মূল্য সংযোজন কর) আইন সংশোধনে রাজি হলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ভ্যাটের একক হার ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৩ শতাংশ এবং ভ্যাট অব্যাহতি সীমা ৩০ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ভ্যাট আইনের যে সাতটি ধারা সংশোধনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ব্যবসায়ীরা আবেদন করেছেন তা আগামী অর্থবছরের রাজস্ব বাজেটে অন্তর্ভুক্তিতে এনবিআর চেয়ারম্যানসহ রাজস্ব বাজেট প্রস্তুত কমিটির ছয় কর্মকর্তাকে নিয়ে গতকাল বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় এনবিআরের মিনি কনফারেন্স রুমে এ বৈঠক হয়।

বৈঠকে আলোচনা শেষে অর্থমন্ত্রী ভ্যাট বা মূসক আইন সংশোধন করে ভ্যাটের নতুন হার এবং ভ্যাট অব্যাহতির নতুন সীমা নির্ধারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠাতে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমানকে নির্দেশ দেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘বৈঠকে ভ্যাট আইনের এসব সংশোধনের প্রস্তাব আগামীকাল (আজ) প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। ’ তিনি জানান, এনবিআরের এসব প্রস্তাব নিয়ে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি সালমান এফ রহমান, আনিসুল হক, বর্তমান সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ এবং বর্তমান প্রথম সহসভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনের কাছ থেকে পরামর্শ নেবেন প্রধানমন্ত্রী।

এরপর প্রধানমন্ত্রী অর্থমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে ভ্যাট আইন বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবেন। তবে গতকালের বৈঠকেও ভ্যাট আইন সংশোধনে ব্যবসায়ীদের আরও কিছু দাবি অর্থমন্ত্রী আমলে নেননি বলে এনবিআর সূত্র জানিয়েছে। বিশেষ করে ভ্যাট আইন, ২০১২ অনুসারে কোনো ব্যক্তির বকেয়া ভ্যাট তার নিকটাত্মীয়ের কাছ থেকে আদায় করার ধারাটি ব্যবসায়ীরা বাতিলের দাবি করলেও তা আলোচনা করতেই রাজি হননি অর্থমন্ত্রী। এ ধারা বহাল রেখেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে রাজস্ব বাজেট প্রস্তাব পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এনবিআর সূত্র জানায়, গতকাল বৈঠকের শুরু থেকেই খানিকটা নরম সুর ছিল অর্থমন্ত্রীর কথায়। বৈঠকের শুরুতেই অর্থমন্ত্রী ভ্যাট আইন নিয়ে মন্তব্য করেন, ‘এ সরকার জনগণের সরকার।

আমাদের প্রধানমন্ত্রী ব্যবসা বান্ধব। তাই ব্যবসায়ীদের দাবী বিবেচনায় রেখে ভ্যাট আইনে কিছু পরিবর্তন আনতেই হচ্ছে। এতে আপনাদের কাজ খানিকটা বেড়ে গেল। গত এবং চলতিবারের অনেক এসআরও পাল্টাতে হবে। লেখালেখির কাজ আবারো করতে হবে। ’  অর্থমন্ত্রী এনবিআরে পৌঁছানোর পর প্রথমে শুধু এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে ভ্যাট আইনের সংশোধন নিয়ে বৈঠক করেন। এরপর ভ্যাট শাখার সদস্য ব্যারিষ্টার জাহাঙ্গীর হোসেনকে ডেকে পাঠান। এ সদস্যের কাছ থেকে অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের দাবি কতটা মেনে নেওয়া যুক্তিযুক্ত তা জানতে চান।

অনলাইনে ভ্যাট আদায়ে এনবিআরের প্রস্তুতি সম্পর্কেও জানতে চান। বৈঠকে অর্থমন্ত্রী এনবিআর কর্মকর্তাদের সর্তক করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী অনলাইনে ভ্যাট আদায়ের গুরুত্ব দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।   এরপর রাজস্ব বাজেট প্রস্তুত কমিটির অন্য কর্মকর্তাদের ডেকে পাঠান এনবিআর চেয়ারম্যান। পর্যায়ক্রমে ব্যবসাযীদের দাবি নিয়ে আলোচনা চলতে থাকে। ভ্যাটের বিভিন্ন হার নির্ধারণের দাবির প্রসঙ্গ উঠতেই অর্থমন্ত্রী তার স্বভাবসুলভ বলতে থাকেন, এভাবে দেশে রাজস্ব আদায় বাড়ানো সম্ভব নয়। অনলাইনে ভ্যাট আদায় করতে হলে ভ্যাটের বিভিন্ন হার সমন্বয়ে সমস্যা হবে।

ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণে কতটা রাজস্ব আদায় কম হবে তা নিয়ে আলোচনা চলে। এ হার নির্ধারণে জোরালো আপত্তি করেন ভ্যাট শাখার সদস্য ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীর হোসেন। যুক্তি-পাল্টা যুক্তি শেষে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানোর জন্য তৈরি রাজস্ব বাজেট প্রস্তাবে- ভ্যাটের একক হার ১৩ শতাংশ, ভ্যাট অবহতি সীমা ৩৫ লাখ টাকা এবং পরবর্তী ধাপ ৮০ লাখ টাকা নির্ধারণের নির্দেশ দেন অর্থমন্ত্রী। এছাড়া বৈঠকে কোন কোন পণ্যে সম্পূরক শূল্ক থাকবে তার তালিকা দ্রুত শেষ করার তাগাদা দেন। এ তালিকাও প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। বৈঠকে আগামী অর্থ বছরের রাজস্ব বাজেটের আয়কর ও শূল্ক সংক্রান্ত বিষয় নিয়েও কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।করমূক্ত আয় সীমা বাড়ানো, মূক্তিযোদ্ধাদের রাজস্ব সুবিধা দেওয়া, নারীদের ব্যবসায়ে রাজস্ব ছাড় দেওয়া, সারচার্জ বাড়ানো, অর্থপাচাররোধে কৌশল নেওয়া, করপোরেট করহার কমানোরসহ বিভিন্ন বিষয় আলোচনায় উঠে আসে। –

ব/দ/প

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে