বিডি নীয়ালা নিউজ(৬ই মে১৬)-আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনঃ পশ্চিমবঙ্গের ভোট-পরবর্তী হিংসার শিকার হওয়া এক ভোটার নির্বাচন কমিশনের কাছে ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করেছেন।
তাঁদের বাড়িতে তৃণমূল কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতকারীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ ঐ ভোটারের।
সেই হামলার জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে নির্বাচন কমিশন আর সরকারকে, এমনটাই দাবি মামলা দায়েরকারীর।
ভারতের নির্বাচন কমিশনের কাছে অনেক আবেদন নিবেদনই জমা পড়ে ভোটের সময়ে।
কিন্তু তাদের কাছে ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করছেন কোনও ভোটার, তা একেবারেই অভিনব।
মামলাকারী বুদ্ধদেব ঘোষ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “বিধানসভা ভোটের অনেক আগে থেকেই নির্বাচন কমিশন বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচার চালিয়েছে যে নির্ভয়ে ভোট দিতে। আমরা তাই ভোট দিতে গিয়েছিলাম, আর তার পরেই আমাদের বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়।“
ঘোষের অবশ্য একটা রাজনৈতিক পরিচয় আছে। তিনি বিরোধী সিপিআইএম দলের সদস্য ও স্থানীয় নেতা।
৩০শে এপ্রিল কলকাতার কিছু অংশে ভোট নেওয়া হয়, আর ১লা মে রাতেই হামলা হয় মি. ঘোষ সহ আশপাশের বেশ কয়েকটি বাড়িতে।
আসবাব পত্র, জানলার কাঁচ ইঁট পাথর ছুঁড়ে ভেঙ্গে দেয় তৃণমূল কংগ্রেসের কিছু দুষ্কৃতি, এমনটাই অভিযোগ ঘোষ পরিবারের।
তবে তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, এটা সিপিআইএম-এর সাজানো নাটক।
দক্ষিণ কলকাতার পাটুলি থানার অন্তর্গত ঘোষ পরিবারে হামলাকারীদের ছবি ধরা পড়েছে এলাকায় বসানো একটি ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরাতেও।
সেখানে দেখা যাচ্ছে হাতে লাঠি সোঁটা নিয়ে এক দল যুবক হেঁটে যাচ্ছে।
তাদের রাজনৈতিক পরিচয় অবশ্য সিসিটিভির ফুটেজ থেকে বোঝা সম্ভব না।
ঘোষের বাড়ি ছাড়াও কলকাতারই অন্যান্য কয়েকটি এলাকা এবং উত্তর, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, হুগলী, পশ্চিম মেদিনীপুর সহ বিভিন্ন জেলা থেকেই ভোট পরবর্তী হিংসার খবর এসেছে।
সব ক্ষেত্রেই অভিযোগের তীর ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে।
“নির্বাচন কমিশনের প্রচার শুনেই তো আমরা ভোট দিতে গিয়েছিলাম। তার জন্যই তো আমাদের এই ক্ষয়ক্ষতি হল। মুর্শিদাবাদে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এগুলোর দায় তো নির্বাচন কমিশনেরই। তারা পুলিশকে দিয়ে আমাদের প্রোটেকশান দিতে পারল না! এবার তারা বা সরকার ক্ষতিপূরণ দিক,” দাবি ঘোষের।
কিন্তু নির্বাচন কমিশনের তো শুধু ভোটের বুথ বা তার পাশ্ববর্তী এলাকায় নিরাপত্তা দেওয়ার কথা। তারপরে কোনও আইন শৃঙ্খলার সমস্যা হলে তো সেটা পুলিশের দায়িত্ব।
এই প্রশ্নের জবাবে বুদ্ধদেব ঘোষ বলছিলেন, “ভোট গণনা শেষ না হওয়া অবধি যে রাজ্যের সব ভোটারদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা যে কমিশনের দায়িত্ব, সেটা তো তারাই প্রমান করে দেখিয়েছে। এবং থানার ওসি-কে ভোট পরবর্তী হিংসার জন্যই বদলি করে দিয়েছে। তাহলে আমাদের ওপরে হামলার দায়িত্বও কমিশনকেই নিতে হবে।”
এদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী একটি স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, রাজ্য পুলিশ যেহেতু নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে চলছে এখন, তাই আইনশৃঙ্খলার কোনও কিছুর দায় তিনি বা তাঁর সরকার নেবে না। যদিও এর আগে একাধিকবার নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে যে পুলিশ প্রশাসন এখন কমিশনের অধীনে ঠিকই, কিন্তু সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রাজ্যেরই দায়িত্ব।
স্থানীয় থানাকে জানানো হলেও তারা সময় মতো ব্যবস্থা নেয় নি বলেই কলকাতা পুলিশের সদর দপ্তরে অভিযোগ জানিয়েছেন সিপিআইএম নেতৃবৃন্দ।
তবে প্রতিটা ঘটনাতেই যেসব অভিযুক্ত আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন অথবা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন তাঁরা তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী সমর্থক।##বিবিসি