সাব্বির হোসাইন, স্কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি: বর্তমান বিশ্ব প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তি অবশ্যই মানবকল্যাণ্যের জন্য একটি বড় আশীর্বাদ। কিন্তু এটা যে কখনো কখনো বড় বিপদের কারণ হতে পারে, সেদিকে আমাদের ততোটা খেয়াল নেই। প্রযুক্তির একটি বড় অবদান স্মার্টফোন। এই যন্ত্রটি ছাড়া আমরা একটি দিনও কল্পনা করতে পারি না। এই যন্ত্রটি আমাদের অনেক কাজে লাগে বলেই এটার প্রতি আমাদের এতো ঝোঁক। কিন্তু এই যন্ত্রটি একটি শিশু বা একটি কিশোরের হাতে কতটুকু নিরাপদ? আজ প্রতিটি ঘরে প্রতিটি শিশু-কিশোরের হাতে স্মার্টফোন। এক চরম নেশায় বুঁদ হচ্ছে আমাদের শিশু-কিশোর। অভিভাবকরা কোনোমতেই যেন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেন না এই ঘাতক নেশাকে। অসহায় হয়ে হয়তো বাচ্চাকে মারধর করছেন যেটা শিশুর ওপর আরেকটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আবার শিশুর হাতে স্মার্টফোন না দিয়ে তাদের উপায় নেই। কেননা একটি শিশু ভাবে যে, তার সব বন্ধুর হাতে স্মার্টফোন, তাই তারও একটি চাই। ভালো-মন্দ বুঝার ক্ষমতা তাদের নেই। তবে কান্নাকাটি করে সে সেটা নেবেই। একটি শিশু মাঠে গিয়ে খেললে তার শরীর গঠন হয়, মানসিক পক্কতা আসে, নেতৃত্বদানের দক্ষতা তৈরি হয় এবং সৌজন্যবোধ শিখে। স্মার্টফোন আজ শিশু-কিশোরদের জীবনী শক্তিকেই যেন চুষে খাচ্ছে। শিশু-কিশোরদের এই স্মার্টফোন নেশা তাদের শিশুত্বকে নষ্ট করে দিচ্ছে। মেধাশক্তিহীন হয়ে পড়ছে এ সকল শিশু-কিশোররা। করোনা মহামারিতে স্মার্টফোনের প্রতি শিশু-কিশোরদের নেশা অনেক গুণ বেড়েছে। ঘরবন্দি জীবন আর অনলাইন ক্লাসে থেকে থেকে তাদের আসক্তির মাত্রা বহু গুণে বেড়ে গেছে। একটি বেসরকারি পর্যায়ের জরিপে দেখা গেছে, বাবা-মায়েরা চাকরি করেন তাদের সন্তান মোবাইল আসক্তিতে বেশি ভুগছে। সন্তানকে শান্ত রাখার জন্য বাবা-মা হয়তো মোবাইল তাদের সন্তানের হাতে তুলে দেন। কিন্তু তারা একবারও ভাবেন না যে, কতটা এই মোবাইলের কারণে কতটা অশান্ত হয়ে উঠছে শিশুদের মন। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মোবাইল শিশুদের বহুবিধ ক্ষতি করে থাকে। এটি শিশুদের স্বতঃস্ফূর্ততাকে নষ্ট করে, শিশুর মাঝে হতাশার সৃষ্টি করে। এক ধরনের বিরুপ মানসিকতা নিয়ে বেড়ে উঠে শিশুরা। অলাইন দুনিয়ার মন্দ সাইটগুলোর সংস্পর্শে আসে এসব কোমলমতি শিশুরা। তাদের মন বিগড়ে যায়। বাধাগ্রস্ত হয় তাদের স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠা। এক ধরনের মানসিক বৈকল্য তৈরি হয়। আত্মকেন্দ্রিক হয়ে সমাজে বড় হয়ে উঠে যা বিপজ্জনক। অবিভাবকরা বলেছেন, মোবাইলে শিশুদের আসক্তির কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাদের লেখাপড়া। অধিক রাত পর্যন্ত শিশুরা জেগে থাকে মোবাইল হাতে নিয়ে। কোন বন্ধুর কোন নতুন মেসেজ এলো কিনা সেটা দেখতে গভীর রাত পর্যন্ত তারা জেগে থাকে। যার ফলে শিশুরা সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারে না। শহরের শিশুরা সকাল ৯টা পর্যন্ত ঘুমায়। তাদের ঘুম ভাঙাতে বাবা মার গলদঘর্ম হতে হয়। পারিবারিক সহিংসতা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর পেছনে একটি অন্যতম কারণ মোবাইল আসক্তি। এখন প্রশ্ন হলো, এর সমাধান কোথায়? বিষয়টি যত সহজে বলা যায় বাস্তবতা অনেক কঠিন। বাবা-মা যদি সহজে পারতো তবে এতদিন হয়তো সমস্যা সমাধান হয়ে যেত। চিকিৎসকরা বলেছেন, স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে শিশুদের মধ্যে, হীনমন্যতা, অটিজম, স্বার্থপর মানসিকতা, অমনোযোগ, হতাশা, বিদ্রোহী মনোভাব, কিশোর অপরাধ, জীবনের প্রতি উদাসীনতা, দুশ্চিন্তা, সাইবার বুলিং, আত্মহত্যার প্রবণতা, যৌন হয়রানি, ধর্ষণসহ আরও অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়। স্মার্টফোনের এ আসক্তি কাটাতে লেখকের পরামর্শ হচ্ছে, তরুণদের যতটা সম্ভব স্মার্টফোন থেকে দূরে রাখতে হবে। তা না হলে তার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়বে। যদি তরুণদের হাতে যোগাযোগের জন্য মুঠোফোন দিতে হয়, তা ফিচার ফোন হলে ভালো। স্মার্টফোন দিলেও তা কতক্ষণ ব্যবহার করবে, তা নির্ধারণ করে দিতে হবে। রাতে তারা যাতে ঠিকমতো ঘুমায়, সেটি খেয়াল রাখতে হবে। কিশোর বয়সীরা যাতে দিনে কোনোভাবেই এক থেকে দেড় ঘণ্টার বেশি স্মার্টফোন না ব্যবহার করে, সেদিকে অভিভাবকের খেয়াল রাখা উচিত।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে