abul-mal-abdul-muhit

বিডি নীয়ালা নিউজ(৮ই জুন ২০১৬ইং)- ডেস্ক রিপোর্টঃ  অবশেষে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে অনিয়ম ও লুটপাটের স্বীকারোক্তি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। এ খাতের বিপর্যস্ত অবস্থা তুলে ধরে কিছু ক্ষেত্রে যে মাত্রায় লুটপাট হয়েছে তাতে পুকুর চুরি নয়; সাগর চুরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে ২০১৫-১৬ সালের সম্পূরক বাজেটের ওপর বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সদস্যদের দেয়া ছাঁটাই প্রস্তাবের আলোচনায় রুস্তম আলী ফরাজীর এ সংক্রান্ত বক্তব্যের জের ধরে এসব মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী।

সস্পূরক বাজেটে ব্যাংক খাতের জন্য ২৩৮ কোটি ২ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বেশি বরাদ্দের পক্ষে বললে এর বিরোধিতা করেন রুস্তম আলী ফরাজী। ডেসটিনি ও হলমার্ক কেলেঙ্কারির পাশাপাশি সাম্প্রতিক রিজার্ভ চুরির প্রসঙ্গে টেনে স্বতন্ত্র এই এমপি বলেন, ব্যাংক খাত থেকে টাকা চুরি হয়ে গেছে। সব ব্যাংকের একই অবস্থা। বাংলাদেশ ব্যাংকে যখন পচন ধরেছে তখন অন্য ব্যাংকগুলোর অবস্থা আর বলা লাগে না। ৮০০ কোটি টাকা কর্মকর্তাদের যোগসাজশে চুরি হয়ে গেল। সব চুরির সঙ্গে ওই ব্যাংকের কর্মকর্তারা জড়িত। প্রায় পৌনে তিন লাখ হাজার কোটি পাচার হয়েছে। ৩০ হাজার কোটি টাকা চুরি হয়েছে। এগুলোকে পুকুর চুরি না বলে সাগর চুরিই বলা যায়।

এর আগে সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায় অর্থমন্ত্রী ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাগুলোর পূর্বাভাসের বিষয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসের হিসাব কষে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বলেছে, এবার ৭ দশমিক ০৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে, যার সঙ্গে একমত নয় বিশ্ব ব্যাংক। বিশ্ব ব্যাংক বলছে, সরকার যেসব উপাত্তের ভিত্তিতে জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করেছে, তাতে একমাত্র রপ্তানি খাত ছাড়া সব সূচকই গত বছরের তুলনায় নিম্নগামী।

আমলাতন্ত্রের কারণে বাজেট বাস্তবায়ন হচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা যে বাজেট দিয়েছি তারা তাদের জীবনে এত বড় বাজেট দেখেননি। যা গত ৭ বছরে ৯১ হাজার কোটি থেকে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটিতে এসে দাঁড়িয়েছে। চ্যালেঞ্জটা অনেক বড়, সেটার সঙ্গে যে তারা চলতে পারছেন এজন্যই তাদের ধন্যবাদ পাওয়া উচিত।

সব জিনিস নিয়ে অন্য দেশের সঙ্গে সব সময় তুলনা করা উচিত নয় মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী বলেন, এক দেশের সঙ্গে আরেক দেশের তুলনা সময় সময় ঠিক হয় না। যেমন বাংলাদেশে পাথর আমদানি করতে হয়, ভারত বা অন্য দেশে পাথর আমদানি করতে হয় না। তাই অন্য দেশের সঙ্গে তুলনা করে বাজেটে হিসাব নিলে চলবে না। রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কে বিভিন্ন বৈদেশিক সংস্থা ও বিভিন্ন জনের মন্তব্যের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বৈদেশিক সংস্থা যে ধরনের হিসাব দেয় সেটা সবসময়ই একচুয়াল থেকে কম হয়। সেজন্য জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ০৫-এর কম করা উচিত না। আমি নিশ্চিত ৭ দমমিক ০৫ থেকে কম কখনো হবে না।

মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণ নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ১৯৮৮ সালে মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল মাত্র ৯ হাজার। এখন ২৮ হাজার করা হয়েছে। এই ২৮ হাজারের মধ্যে এক তৃতীংশই অযথা (প্রয়োজনহীন) করা হয়েছে। তিনি বলেন, একজন এমপি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি নিয়ে কথা বলেছেন। তার দাবি শিক্ষকরা অনশন করেন এমপিওভুক্তির জন্য, এমপিওভুক্তি কেন হয় না। আমি তাদের জিজ্ঞেস করতে চাই। অন্তর্ভুক্তি সম্পর্কে তারা সব সময় সোচ্চার, কিন্তু কত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে ভুঁইফোর, চারজন শিক্ষক একজন ছাত্র নিয়ে একটি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান সমন্ধে কেনো প্রতিবাদ কেন তারা করেন না।

অধিবেশনে জাতীয় পার্টির সদস্য নুরুল ইসলাম ওমর, সেলিম উদ্দিন ও ফখরুল ইমাম জাতীয় পার্টির আমলসহ মোট ১০ বার সংসদে বাজেট উপস্থাপন করায় অর্থমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান। এবিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, এখানে বলা হয়েছে, আমি দুইবার জাতীয় পার্টির বাজেট দিয়েছি। এটা সর্বৈব মিথ্যা। আমি যখন বাজেট দিয়েছি তখন জাতীয় পার্টির জন্মই হয়নি। আমি দিয়েছি এরশাদ সাহেবের বাজেট, যখন নির্দলীয় সরকার ছিল।

 

 

সূত্র-সংগ্রাম

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে