ডেস্ক রিপোর্টঃ সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে দক্ষিন শ্রীপুর ও তাহিরপুর ইউনিয়নের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হলেও ত্রান বিতরনে ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। এ পর্যন্ত যে পরিমান ত্রান সরকারীভাবে বিতরণ করা হয়েছে তা উপজেলার বাদাঘাট, শ্রীপুর উত্তর,উত্তর বড়দল ইউনিয়নেই বেশী। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ দক্ষিন শ্রীপুর ও তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের তেমন কোন ত্রান বিতরন করা হয় নি।
হাওর পাড়ের বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া উপজেলার দক্ষিন শ্রীপুর ইউনিয়নের বলাই কান্দি গ্রামের অজুফা বেগম,সবুজ আলী জানান,তাদের বাড়ি পানিতে কানায় কানায় পূর্ন। কিন্তু এই পর্যন্ত কোন সহযোগীতা পাই নি। অন্যান্য ইউনিয়নের সরকারী ভাবে ত্রান দিতাছে শুনি আশায় থাকি যে সরকারী ভাবে ত্রান পাব। কিন্তু আমরারেত কেই ত্রান আইসা দিল না। সরকারী ভাবে কিছু সহযোগীতা পাইলে বড় বেশী উপকার হইত।
পাঠাবুকা গ্রামের রুজনা বেগম,নতুন পাড়ার মজু মিয়া একেই কথা জানান,ঘরে ভিতরে পানি খুবেই কষ্টের মাঝে আছি কিন্তু কই কেউ ত আমার খবর লইলনা। সব জায়গায় সরকারী সহযোগীতা দিতাছে লোক মূখে শুনি। আমরাই পাইলাম না কবে পাইমু। আমরার বাড়ি ঘর পানিতে ভেঙ্গে গেছে। আমরা কেরে ত্রান দেয় না।
জীবনপুর সালেহা বেগম জানান,বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি কিন্তু সরকারীভাবে ত কিছুই পাইলাম না। কতটুকু ক্ষতিগ্রস্থ হলে তান পাওয়া যায়। সব ত্রান খালি অন্যান্য ইউনিয়নে দেওয়া হয়। আমরা একবারেই হাওর পাড়ের বাস করি আর বন্যায় পানি বেশী ক্ষতির শিকার হয়েছি। পরিবার পরিজন নিয়ে খুবেই কষ্টের মাঝে আছি। আমি অনেকের বসতভিটা ঢেউয়ের কবলে ভেঙ্গে পড়ায় তারা সবাই প্রতিবেশী ও নিকটাত্মীয়দের ঘরে আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু কোন সরকারী সহযোগীতা পাচ্ছেন না।

এউপজেলায় টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ীর ঢলের পানিতে বন্দি হয়ে পরেছে হাজার হাজার মানুষ। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে বিশুদ্ধ পানি,গো খাদ্য ও খাবার সংকট দেখা দিয়েছে পানি বন্ধি পরিবার গুলোতে। বন্যা কবলিত গ্রাম গুলোতে অবস্থানকারী মানুষজন ত্রানের জন্য অপেক্ষায় আছে। ত্রান না পাওয়ায় হাহাকার বিরাজ করছে। এদিকে কিছু কিছু গ্রামে সরকারী ভাবে,ব্যক্তিগত উদ্যোগে অর্থ,শুকনো খাবার বিতরন করা হচ্ছে তা চাহিদার তুলনায় খুবেই সামান্য। অন্যদিকে সরকারী ত্রান দিচ্ছে এমন খবর পেলেই ছুঠে আসছে দলে দলে ক্ষতিগ্রস্থরা।

একেই কথা জানালেন উপজেলার সদর ইউনিয়নের শুবলাগাও গ্রামের বিধবা নারী সমলা বেগম (৬৬)। তিনি আরো জানান,স্বামী ছেলে কেউ নাই। মেয়ে ছিল তাদের বিয়ে দিয়েছি তারা এখন স্বামীর বাড়িতে। বন্যায় বাড়ি পানির নিছে। কিন্তু কোন সহযোগীতা পাচ্ছি না। তিনি ক্ষোভের সাথে জানান, সরকারী ত্রান দিতাছে শুনে আইছি কিন্তু পাইলাম না।

উপজেলার হাওরপাড়ের বিভিন্ন গ্রাম গুলোতে দেখা যায়, হাওরের প্রবল ঢেউয়ের আঘাতে তাদের বসত বাড়ি ভেঙ্গে নিশ্চিহ্ন হবার পথে। পরিবার পরিজন নিয়ে বন্যাশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় ত্রান পাচ্ছেন না। তাহিরপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিলন কান্তি তালুকদার জানান,উপজেলার শ্রীপুর দক্ষিণ ইউনিয়নে ৩টি,শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নে ৩টি,বালিজুড়ি ইউনিয়নে ১টি ও বাদাঘাট ইউনিয়নের সোহালা গ্রামে ১টি বন্যাশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

দক্ষিন শ্রীপুর ইউনিয়নের ৫নং ওর্য়াডের শিমুল আহমদ জানান,আমি ব্যাক্তিগত ভাবে কিছু ত্রান সামগ্রী বিতরণ করেছিলাম। সরকারী ভাবে এখনও ত্রান পায় নি আমার ইউনিয়নের মানুষজন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের পরিমান বেশী। ত্রান বিতরণ করা হচ্ছে তা পরিমানে কম। এব্যাপারে তিনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন,তাহিরপুরের মানুষ বারবার ফসল হারিয়ে দিশেহারা এবং সাম্প্রতিক বন্যায় মানুষের বসতভিটা,রাস্তাঘাট ভেঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় সকলেই দিশেহারা। ত্রানের পরিমান বাড়ানো খুবেই প্রয়োজন।

তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন জানান,তার ইউনিয়নে দু-শতাধিক পরিবার এখনও পানি বন্ধি রয়েছে। এসব পরিবারে যে পরিমান চাহিদা তার ২পার্সেন্ট সরকারী সহযোগীতা করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থরা প্রতিদিনেই আমার কাছে এসে সহায়তা চাচ্ছে আমি দিতে পারছি না। আমি জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধবর্তন কতৃপক্ষের কাছে দাবী জানাই যেন যত দ্রুত সম্ভব আমার ইউনিয়নের ক্ষতি গ্রস্থদের সহায়তার করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করে বরাদ্ধ দেন।

পিবিএ/জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া/বাখ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে