ডেস্ক রিপোর্টঃ ঢাকা-৫ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য (এমপি) হাবিবুর রহমান মোল্লার বাসায় গত পাঁচ বছরে নতুন কোনো আসবাবপত্র যোগ হয়নি। এই সময়ে তিনি কোনো ধরনের ইলেকট্রনিক পণ্য কেনেননি। সোনা, অলংকার ও ধাতু কেনা হয়নি গত পাঁচ বছরে। উল্টো তাঁর আয় কমেছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার সময় যে হলফনামা দিয়েছেন হাবিবুর রহমান মোল্লা, তার সঙ্গে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামার তুলনা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

দশম সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় হাবিবুর রহমান মোল্লা উল্লেখ করেছিলেন, তাঁর ১০ ভরি স্বর্ণালংকার ছিল। আর ২০ ভরি স্বর্ণালংকার তিনি বৈবাহিক উপহার হিসেবে পেয়েছেন। কিন্তু ওই ২০ ভরি স্বর্ণালংকারের দাম কত, তা তিনি হলফনামায় উল্লেখ করেননি। পাঁচ বছর আগে ওই নির্বাচনের হলফনামায় হাবিবুর রহমান মোল্লা বলেছিলেন, তাঁর ইলেকট্রনিক সামগ্রী আছে ৮০ হাজার টাকার সমমূল্যের। আর আসবাবপত্র আছে ৪০ হাজার টাকার সমমূল্যের। আসন্ন সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তিনি একই তথ্য দিয়েছেন। এমনকি আগের হলফনামায় যেসব বানান ভুল ছিল, এবারের হলফনামায় একই ভুল রয়েছে। তথ্যগুলো এক। কোনো পরিবর্তন নেই। দুই হলফনামার তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত পাঁচ বছরে এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লার আয় বাড়েনি,

বরং কমেছে। এ ছাড়া তাঁর বাসায় নতুন কিছুই যোগ হয়নি।

হাবিবুর রহমান মোল্লার হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তাঁর কাছে এখন নগদ টাকা আছে দুই লাখ ৮১ হাজার। পাঁচ বছর আগে তাঁর কাছে নগদ টাকা ছিল ৩৩ লাখ ৪২ হাজার ৯১২। তবে তাঁর চেয়ে স্ত্রীর নগদ আয় বেড়েছে গত পাঁচ বছরে। ২০১৩ সালে হাবিবুর রহমান মোল্লার স্ত্রীর নগদ টাকা ছিল ১৬ লাখ ৮৮ হাজার। সেটি এখন বেড়ে ৩৪ লাখে উন্নীত হয়েছে।

আয় কমেছে কামাল আহমেদ মজুমদারের

গত পাঁচ বছরে ঢাকা-১৫ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদারের আর্থিক কোনো উন্নতি হয়নি, বরং অবনতি হয়েছে। তাঁর আয় কমে গেছে। দশম ও একাদশ দুই হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৩ সালে তাঁর কৃষি খাত থেকে আয় হতো তিন লাখ ১২ হাজার টাকা। এবার তা কমে ৩৩ হাজার টাকায় নেমে এসেছে। বাড়িভাড়া, দোকানভাড়া থেকে পাঁচ বছর আগে পেতেন ৯৯ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। সেটি কমে এখন ৭৪ লাখ টাকা পান এমপি কামাল আহমেদ মজুমদার। ২০১৩ সালে কামাল আহমেদের কাছে নগদ টাকা ছিল ৭৪ লাখ ৩৩ হাজার ৫৭০। এখন তাঁর কাছে নগদ টাকা আছে ২২ লাখ ৩০ হাজার। ঢাকা-৫ আসনের এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লার মতো গত পাঁচ বছরে বাসায় নতুন কোনো আসবাবপত্র, ইলেকট্রনিক পণ্য কেনেননি এমপি কামাল আহমেদ। স্বর্ণালংকারও কেনেননি। পাঁচ বছর আগে তাঁর কাছে ২০ ভরি সোনা ছিল। এখনো তা-ই আছে। পাঁচ বছর আগে তাঁর কাছে দুই লাখ ৪৭ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক পণ্য ছিল। এখনো তা-ই আছে। আর আসবাবপত্র এখন আছে তিন লাখ ১৮ হাজার টাকার সমমূল্যের। পাঁচ বছর আগে তা-ই ছিল।

সাহারা খাতুনের আয় কমেছে

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের আয় কমেছে গত পাঁচ বছরে। গত নির্বাচনের হলফনামায় তাঁর কাছে নগদ টাকা ছিল ২১ লাখ ১৬ হাজার ৯০২। পাঁচ বছরের ব্যবধানে আয় না বেড়ে কমে ১০ লাখ আট হাজার ৬০২ টাকায় নেমে এসেছে। বাস-ট্রাক থেকে প্রাপ্ত অর্থও কমে গেছে সাহারা খাতুনের। পাঁচ বছর আগে বাস-ট্রাক ও মোটরসাইকেল থেকে তাঁর প্রাপ্ত টাকা ছিল ৪৪ লাখ ৯০ হাজার। সেটি কমে ৩০ লাখ ৬৮ হাজারে নেমে এসেছে। তাঁর কাছে পাঁচ বছর আগে যে পাঁচ ভরি সোনা ছিল, এখনো তা-ই আছে। বাড়েনি। তাঁর বাসায় নতুন কোনো

ইলেকট্রনিক পণ্য ও আসবাবপত্র যোগ হয়নি গত পাঁচ বছরে।

আয় কমেছে রাশেদ খান মেননের

ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেননের আয়ও কমেছে গত পাঁচ বছরে। ২০১৩ সালে তাঁর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ছিল ১০ লাখ ২৬ হাজার টাকা। সেটি এখন কমে হয়েছে ছয় লাখ ৫৬ হাজার টাকা। নিজের নামে কোনো স্বর্ণালংকার নেই। তবে স্ত্রীর নামে ২০ ভরি সোনা আছে। পাঁচ বছর আগেও তা-ই ছিল। ২০১৩ সালে শেয়ারবাজারে রাশেদ খান মেননের বিনিয়োগ থাকলেও এখন নেই। ২০১৩ সালে পত্রিকায় লেখা ও টেলিভিশনে টক শো করে আয় করলেও এখান থেকে এবার তাঁর কোনো আয় নেই। আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিক পণ্য গত পাঁচ বছরে কেনেননি রাশেদ খান মেনন। ফলে গত পাঁচ বছরে ঢাকা-৮ আসনের এমপি রাশেদ খান মেননের কোনো উন্নতি হয়নি।

ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ্র আয়ও কমেছে

ঢাকা-১৬ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ্র গত পাঁচ বছরে আয় কমে গেছে। ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ্র শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি এবং পেশা ব্যবসা ও বাণিজ্যিক ভবন থেকে আয় দেখানো হয়। ২০১৩ সালে তাঁর নগদ অর্থের পরিমাণ ছিল সাত কোটি চার লাখ ৯৫ হাজার ৫৭ টাকা। সেটি এখন কমে দুই কোটি ২৪ লাখে নেমে এসেছে। সোনা আগে যে ৬০ ভরি ছিল, পাঁচ বছর পর এখন তা-ই আছে। এ ছাড়া বাসায় নতুন কোনো আসবাবপত্রও জোগায়নি ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ্র পরিবার।

হাজি সেলিমের হিসাব

ঢাকা-৭ আসনের আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র এমপি হাজি সেলিম হলফনামায় পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন ব্যবসা ও রাজনীতি। ব্যবসা থেকে আয় এক কোটি ১৬ লাখ, সম্মানী ভাতা ৫৭ লাখ তিন হাজার, নির্ভরশীলদের আয় বাড়িভাড়া ১৯ লাখ, ব্যবসা থেকে সাত লাখ ২৪ হাজার, অন্যান্য সম্মানী ১৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা। নগদ টাকা দুই লাখ। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা এক কোটি ৩৪ লাখ টাকা। বন্ড, ঋণপত্র, কম্পানির শেয়ার ও অন্যান্য ৪৬ কোটি ১১ লাখ টাকা। অন্যান্য ব্যবসার মূলধন চার কোটি ৪২ লাখ টাকা। স্ত্রীর নামে নগদ টাকা দুই কোটি ৯ লাখ, নির্ভরশীলদের নামে নগদ টাকা দুই কোটি ৮০ লাখ, স্ত্রীর নামে ব্যাংকে জমা তিন কোটি ৭৯ লাখ, নির্ভরশীলদের নামে দুই কোটি তিন লাখ। বন্ড, ঋণপত্র, শেয়ার স্ত্রীর নামে ১৬ কোটি ৫৯ হাজার, নির্ভরশীলদের নামে ১১ কোটি ৯ লাখ টাকা। স্ত্রীর নামে অন্যান্য ব্যবসার মূলধন রয়েছে ৯৬ লাখ টাকা।

K/K/N.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে