ঘরের মাঠে আধিপত্য বিস্তার বজায়ে রাখার লক্ষ্য নিয়ে আগামীকাল থেকে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শুরু করছে বাংলাদেশ।
ম্যাচটি শুরু হবে সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে। বেসরকারি টেলিভিশন টি-স্পোর্টস ও নাগোরিক টিভি সরাসরি খেলাটি দেখাবে।
করোনাভাইরাসের কারনে গেল বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে কোন টেস্ট ম্যাচ খেলেনি বাংলাদেশ। তারপরও প্রত্যাবর্তন টেস্টে সেরাটা দিতে মুখিয়ে আছে টাইগাররা।
মহামারীর মধ্যে জৈব-সুরক্ষা পরিবেশ তৈরি করে ওয়ানডে ক্রিকেটে ফিরে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। এবার টেস্ট ফরম্যাটে ফেরার অপেক্ষায় তারা।
প্রায় এক বছর পর টেস্ট ক্রিকেটে ফেরাটা স্মরনীয় করে রাখতে মুখিয়ে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে ফেরাটা স্মরনীয় করেছে টাইগাররা। প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ।
তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে সফরকারীদের সহজেই হোয়াইটওয়াশ করে ৫০ ওভার ফর্মেটে জয়ের সংখ্যাটা আট-এ নিয়ে গেছে টাইগাররা।
ওয়ানডে সিরিজে অনেক অভিজ্ঞ খেলোয়াড় না থাকলেও, অভিজ্ঞ টেস্ট দলের বিপক্ষে ওয়ানডেতে আধিপত্যের ধারাটা টেস্ট ফরম্যাটে নিয়ে যেতে চায় বাংলাদেশ। নিয়মিত অধিনায়ক জেসন হোল্ডারসহ উপরের সারির বেশ কিছু খেলোয়াড় টেস্ট সিরিজ খেলতে আসেননি। তবে ওয়ানডের মত অনভিজ্ঞ খেলোয়াড় দ্বারা তাদের টেস্ট দল গঠিত হয়নি। টেস্ট দলটি মোটামুটি অভিজ্ঞদের নিয়েই গড়েছে ক্যারিবিয়রা।
তবে ২০১৮ সালে ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করায় এবারো আশাবাদী বাংলাদেশ শিবির।
তারপরও দীর্ঘদিন পর টেস্ট খেলতে নামাটা চিন্তায় রেখেছে বাংলাদেশকে। জাতীয় দলের প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো বলেন, ‘প্রায় এক বছর টেস্ট না খেলাটা চ্যালেঞ্জের।’
তিনি আরও বলেন, ‘বোলারদের জন্য বিভিন্ন ধরনের ফিটনেসের প্রয়োজন। ব্যাটসম্যানদের দীর্ঘ সময় ব্যাট করতে হয়, তাই এটি চ্যালেঞ্জ হবে। তবে আমরা বেশ আত্মবিশ্বাসী, কারণ আমরা সত্যিই ভাল অনুশীলন করেছি। আমাদের প্রস্তুতি যথাযথভাবে হয়েছে। খেলোয়াড়রা টেস্টে ফিরতে মুখিয়ে আছে। এটি এমন একটি ফরম্যাট যেখানে, আমরা উন্নতি করতে চাই এবং এটি এমন সময় যখন আমরা এই ফরম্যাটের অপেক্ষায় আছি।’[
এখন পর্যন্ত ১১৯টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। এরমধ্যে ১৪টিতে জয় ও ৮৯টিতে হেরেছে টাইগাররা। ৪৩টি ম্যাচে ইনিংস ব্যবধানে হারের স্বাদও নিয়েছে বাংলাদেশ। বাকী ১৬ টেস্টে ড্র করেছে তারা। পরিসংখ্যান বলছে, এই ফরম্যাটে তারা কতটা দুর্বল । তবে ঘরের মাঠে এখনও শক্তিশালী দল বাংলাদেশ। কারন স্পিনারদের কারনে অনেক সাফল্যই পেয়েছে বাংলাদেশ। স্পিন বিভাগে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাকিব আল হাসান।
স্পিনারদের নৈপুন্যে ২০১৬ সালের পর ঘরের মাঠে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে স্মরনীয় জয়ের স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ।
ঘরের মাঠে সর্বশেষ টেস্ট সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চারজন স্পিনার নিয়ে খেলেছে বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসান, মেহেদি হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম ও নাইম হাসান ৪০টি উইকেট শিকার করেছেন।
গেল বছর মার্চে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বশেষ টেস্টে জয়ে বড় ভূমিকা ছিলো স্পিনারদের। একবারই ঘরের মাঠের সুবিধা নিতে পারেনি বাংলাদেশ। ২০১৯ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জ্বলে উঠতে পারেনি বাংলাদেশের স্পিনাররা। টাইগারদের স্পিনারদের চেয়ে বহুগুন দক্ষতা প্রদর্শন করে আফগান স্পিনাররা।
এই অবস্থাতেও, বিদেশের কন্ডিশনে এখনও ভালো অবস্থায় নেই বাংলাদেশ। এবারও চট্টগ্রামের উইকেট স্পিনারদের সহায়তা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। স্পিন ট্রাক হবার সম্ভাবনাই রয়েছে। ডোমিঙ্গো জানান, এ বছর বিদেশের মাটিতে প্রচুর টেস্ট খেলবেন বলে, বিষয়টি মাথায় রেখে পেসারদের উৎসাহি করবেন তারা।
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামের উইকেট দেখে, পেসারদের জন্য খুব বেশি হুমকি বলে মনে হয় না। এটি দুর্ভাগ্যজনক বিষয়। এটি শুধুমাত্র উইকেটের প্রকৃতি বলে মনে হচ্ছে। আমাদের নিজস্ব শক্তিতে খেলতে হবে, এটি নিশ্চিত করতে হবে।’
ডোমিঙ্গো আরও বলেন, ‘আমরা সিস্টেম দ্রুত গতির বোলার পেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা বিদেশের মাটিতে খেলতে যাবো, তখন তারা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে। কিন্তু আপনি যখন এ ধরনের উইকেটে খেলেন, তখন তাদের কিছুই করার থাকে না। ফলে পেস অ্যাটাক আসা-যাওয়ার মধ্যেই থাকে।’
টেস্ট ক্রিকেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৭টি জয়, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২টি জয় রয়েছে বাংলাদেশের। এছাড়া কোন টেস্ট দলের বিপক্ষে ১টির বেশি জয় নেই টাইগারদের।
ক্যারিবিয়দের বিপক্ষে ১৬ টেস্টে বাংলাদেশ হেরেছে ১০টি, ড্র করেছে চারটি। সফরকারীদের টাইগারদের পরিসংখ্যানই তাদেরকে প্রলুদ্ধ করবে।
জুয়াড়ির তথ্য গোপন করায় সাকিবকে এক বছরের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিষিদ্ধ করেছিলো ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। নিষেধাজ্ঞা শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে আবারো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ফিরেন সাকিব। এবার টেস্টে ফেরার পালা তার। ২০১৯ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্টের পর এটিই হবে সাকিবের বড় ফরম্যাটে প্রথম ম্যাচ।
ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশ হবার পরও টেস্ট সিরিজ নিয়ে আশাবাদি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কারন প্রায় এক বছর ধরে টেস্ট না খেলায় পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশের বিপক্ষে সুযোগ নিতে চাইছে ক্যারিবীয়রা।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোচ ফিল সিমন্স বলেন, ‘আমি মনে করি, টেস্টের প্রথম দিকে কিছুটা সমস্যায় পড়তে পারে বাংলাদেশ।’
তিনি আরও বলেন, ‘এক বছর ধরে টেস্ট ক্রিকেট খেলেনি তারা। তাই ফিরে প্রথম দিকে তাদের জন্য কিছুটা সমস্যা হতে পারে। আমি নিশ্চিত বিষয়টি তাদের নজরে আছে। তামিম-সাকিবের মত খেলোয়াড় থাকায় তারা অভিজ্ঞ দল। তবে তাদের সমস্যা যদি বেশিক্ষণ স্থায়ী না হয়, তবে আমাদের সুযোগটি হারাতে হবে।’

BSSN

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে