মোঃ আমজাদ হোসেন, জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধিঃ জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে ৫ জীবন সংগ্রামী নারী সমাজের সব বিপন্নতা ও প্রতিক‚লতাকে জয় করে জয়িতা নির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা প্রশাসন ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আয়োজনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী এই ৫ সংগ্রামী নারীকে জয়িতা নির্বাচিত করেন।

চলতি মাসের আন্তর্জাতিক নারী দিবসের অনুষ্ঠানে জয়পুরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আলহাজ্ব এ্যাডঃ সামছুল আলম দুদু এমপি।
প্রধান অতিথি হিসাবে তাদের সম্মাননা ক্রেষ্ট ও সনদ প্রদান করেন।

তারা হলেন- অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জনকারী জয়িতা লাভলী আক্তার অর্থনীতিতে সাফল্য অর্জনকারী উপজেলার রসুলপুর গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের মেয়ে লাভলী আক্তার। তিনি বলেন যে, বয়সে খেলাধুলা ও পড়া শুনার পাশাপাশি স্বাধীন ভাবে বেঁচে থাকার কথা,তখনই আমার ঘারে মা বাবা সংসারের বোঝা চাপিয়ে দেন আমার স্বামী সংসারও মধ্যবিত্ত।

অভাব কাকে বলে স্বামীর সংসারে এসেই তা হাড়ে হাড়ে টের পাই এসময় তাই জীবনের তাগিদেই অল্প সময়ে সংসার জীবনের যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। এর দুই বছর পরে সন্তানের মা হলাম সংগ্রাম আরও বেরে গেল। শুরু হলো জীবন সংগ্রাম।

গ্রামের লোকের কাছ থেকে হাঁস মুরগী, গরু ছাগল বর্গা আদি নিয়ে লালন পালন করি এবং বিক্রি করে লাভের টাকা দিয়ে স্বামীকে সাহায্য করতে থাকি। তারপর এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে গাভী পালন করে বাচ্চা বিক্রি করে সংসার চালাই এবং কিছু টাকা সঞ্চয় করি। তখন মনে হলো এভাবে টাকা জমিয়ে কিছু জায়গা জমি কিনে ঘরবাড়ি তৈরী করতে হবে।

সংসারের প্রয়োজনের তাগিদে আমি সেলাই এর কাজ শিখি এবং একটা সেলাই মেশিন ক্রয় করে সেলাইয়ের কাজ শুরু করি। এরপর নিজেই আরও কয়েক জন নারীকে সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ দেই তারা উপার্জনের পাশাপাশি স্বাবলম্বী হয়েছে।

আমি আমার গবাদী পশু পালন করে ঋণ গ্রহনের মধ্যে দিয়ে কিছু জমিজমা ও ঘর বাড়ী তৈরী করেছি আল্লাহর রহমতে তেমন কোন ঋণদেনা নেই এখন আমার ছেলে মেয়ে দুটোর পড়া শুনার খরচ চালাতে কোন ঘাটতি হয় না। আমার ছেলেকে আমি একটা সরকারী কাজের সু-ব্যবস্থা করাতে পেরেছি
মেয়ে ১০ম শ্রেণীতে পড়ে।

সংসারের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা আগের তুলনায় অনেক ভালো আমাকে সবাই লাভলী দর্জি বলেই এলাকার সবাই চিনে নিজের চেষ্টায় যে,এতদূর আসতে পেরেছি এটা আমার কাছে অনেক আমিও চাই আমার মতো অন্যান্য নারীরাও এগিয়ে আসুক।

শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন কারী সংগ্রামী জয়িতা সহিদা রুবি সাহিদা রুবি,উপজেলার আটাপুর ইউনিয়নের কাঁটা পুকুর গ্রামের দেওয়ান ইলিয়াস আলী মেয়ে তিনি বলেন, চার ভাইবোন সংসারে তেমন সচ্ছলতা নেই বলে চলে বাবার হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রমের মাধ্যমে আমাদের লেখাপড়া চলত।

অভাবী সংসারের কারণে আমার নবম শ্রেনীতে অধ্যয়ন অবস্থাতেই বাবা আমাকে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তাতে আমি কান্নায় ভেঙ্গে পড়ি বাবার অভাবের সংসার,আর বিশেষ করে পরিবারের লোকজন মনে করত মেয়েদের বেশি পড়িয়ে কি লাভ? তারা কিবা করতে পারবে? এতেও মনোবল হারালাম না।

ভাবলাম জীবন তো ফুলশয্যার বিছানা নয়। বাবা মাকে বুঝালাম, আমার লেখাপড়ার খরচ তোমাদের দিতে হবেনা, আমি চালিয়ে নিব। থেমে গেল বিয়ের সিদ্ধান্ত এরপর জীবন শুরু হলো সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার লড়াই। সকালে কিছু ছাত্র এবং বিকালে কিছু ছাত্র নিয়ে শুরু করলাম টিউশনী করা। আর রাতে হারিকেনের আলোতে নিজের পড়াশুনা।

এভাবে এস.এস.সি পাস করলাম প্রথম বিভাগে। বাবা,মাসহ প্রতিবেশির সকলেই খুব খুশি। তাদের খুশি দেখে আমার মনোবল আরো বেড়ে যায় অনেক পরিবারে আমার মতো যারা আছে তাদের উৎসাহ দিলাম পড়াশুনা করার আমি টিউশনী করতাম পাশা-পাশি এস.এস.সি, এইচ.এস.সি, ডিগ্রি পরীক্ষার্থীর খাতা ছবি অংকন করে দিতাম,যে টাকা পাইতাম সেটা দিয়ে আমার পড়াশুনা এবং প্রতিবেশী অসহায় মানুষের পাশে দাড়াতাম।

অনেক অসহায় গরীব মা, বোনদের কে টাকা দিতাম তাদের কিস্তি দেওয়ার জন্য। পড়াশুনা এবং টিউশনীর ফাঁকে গণশিক্ষা স্কুল চালিয়েছি তারপর ১ম বিভাবে এইচ.এস সি ও বি.এস.সি দ্বিতীয় বিভাগে। বাবা, মা সহ সবাই খুশি হলেন অবশেষে বাবা তার শেষ সম্পদ টুকু বিক্রি করে বিয়ে দেয় এক লোভী পরিবারে শুরু হয় আমার জীবনের নতুন অধ্যায়।

বাবার সম্পদ বিক্রির টাকা আর শশুর বাড়ীর সহযোগীতায় আমার চাকুরী হয় শিক্ষকতায় বাবা চাকুরীতে সহযোগীতা করলেন কিন্তু দিতে পারলেননা ঘর সাজিয়ে এনিয়ে শুরু হলো স্বামী সংসারে আমার প্রতি অমানবিক আচরণ শাশুড়ী আর ননদের ভৎসনা ও তিরস্কার শুনতে হতো প্রতিনিয়ত। সংসারের যাবতীয় কাজ আমার দ্বারায় করে নিত এরপর যোগদান করলাম আমার কর্মস্থলে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছেলে, মেয়েদের নিয়ে ভাবতে শুরু করলাম। কিভাবে ছেলে মেয়েদের কে পাঠদানে মনোযোগী করে তোলা যায় এবং ছেলো মেয়েদের কে প্রতিষ্ঠান মুখি করা যায় এই চেষ্ঠা আমি চালিয়ে যাই প্রতিনিয়ত কোন ছাত্র না আসলে প্রধান কে জানাই এবং আমি তার খোঁজ খবর নেই কিভাবে শিক্ষার মান উন্নয়ন করা যায়।

এব্যাপারে প্রধানের সঙ্গে আলোচনা করে এবং মাদের কে তাদের সন্তানের জন্য সচেতন করার লক্ষে মা সবাবেশ আয়োজন করি এছাড়া গ্রামের এবং পাশের শিক্ষিত বেকার ছেলে মেয়েদেরকে ডেকে কাজের উৎসাহ দিতাম শিক্ষিত হলে চাকুরী করতে হবে এমনটা নয় তাদরে কে বলতাম ছাগল এবং গাভীপালন, মুরগীর র্ফাম এবং মাছচাষ এসব এর মধ্যে দিয়ে বেকারত্ব দূর করতে হবে স্বাবলম্বী হতে হবে।

হতে হবে প্রত্যেক নিজেদের পরিবারের অবলম্বন গরীব ও অসহায় মা,বোনদের পাশে দাড়াতাম কোন বোন গর্ভবতী হলে হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করাতাম আবার ডেলিভারির সময় হলে এ্যাম্বুলেন্স এ ফোন দিয়ে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতাম এছাড়া বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ লক্ষ্যে কাজ করে যাই কারণ আইন প্রয়োগ করে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়।

তাই মা, বোনদের কে বুঝিয়ে সচেতন করে তুলি। গ্রামের মা বোনদের নিয়ে মাসে একবার আলোচনা সভা করি। কি করে পিছিয়ে পরা মা,বোনদের এগিয়ে নেওয়া যায় এবং তাদের বিভিন্ন পরামর্শ এবং উৎসাহ প্রদান করি কোভিট-১৯ এর সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অসহায় ও গরীব মা,বোনদের পাশে দাড়িয়ে সাবান ও মাক্স সহ বিভিন্ন উপকরণ বিতরণ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে