জয়নাল আবেদীন হিরো, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধিঃ নীলফামারীতে পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে চাকরির জন্য ৫১ জন তরুণ-তরুণীকে নির্বাচিত করা হয়েছে। মাত্র ১২০ টাকা করে খরচ করে তারা চাকরি পেয়েছেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

রবিবার (২৪ এপ্রিল) পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্র জানায়, টিআরসি পদে আবেদনকারীর সংখ্যা ছিল এক হাজার ৭৮৪ জন। তাদের মধ্যে নিয়োহ পরীক্ষায় অংশ নিতে উপস্থিত হয়েছিল এক হাজার ৩২৯ জন। তাদের শারীরিক, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়ে নিয়োগ পেয়েছে ৫১ জন। উত্তীর্ণদের মধ্যে পুরুষ ৪৩ জন ও নারী ৮ জন।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেল চাকুরি প্রার্থীদের মধ্যে দিনমজুর পরিবারের ৪ জন, দর্জি পরিবারের ১ জন, ভ্যান চালক পরিবারে ২ জন, অটো চালক পরিবারে ২ জন, কৃষক পরিবারে ২৬ জন অসহায় তরুন তরুনী চাকুরি পেয়েছে।

শনিবার (২৩ এপ্রিল) বিকালে নীলফামারী পুলিশ লাইনসে চূড়ান্ত উত্তীর্ণদের নাম প্রকাশ করেন পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান। নিয়োগপ্রাপ্তরা জানান, আগে শুনতাম ঘুষ বানিজ্য ছাড়া পুলিশে চাকুরি হয়না। ঘুষ বানিজ্যতো পরের কথা আমাদের কোনও সুপারিশও ছিল না। আমরা আমাদের নিজ যোগ্যতা ও মেধায় এই চাকুরি পেয়েছি।

টিআরসি পদে চলতি বছরের ২৯, ৩০ ও ৩১ মার্চ প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত করার পর লিখিত পরীক্ষা হয় ৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
প্যাটেল ঘুরিয়ে ভ্যান চালিয়ে পরিবারের ভরনপোষন বহন করেন অমুল্য রায়।

নীলফামারীতে পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে তার মেয়ে বৃস্টি রায় চাকুরি পেয়েছেন। এই খবরে অমুল্য রায় নিজেই নিজের কাছে অবাক হয়ে গেছেন। গ্রামের মানুষজন তাকে বলছিল তোর মেয়ের চাকুরি হবেনা। তুইতো ২০/২৫ লাখ টাকা ঘুষ দিবার পারিবুনা(পারবিনা)। তিনিও কথাটি সত্য মনে করেছিলেন এক সময়। কিন্তু সেই ধারনা পাল্টে গেছে মেয়ে তার পুলিশে চাকুরি পেয়েছে। যারা ঘুষ বানিজ্য ছাড়া পুলিশে চাকুরি হয়না বলে প্রচার করে তাদের মুখে চুন কালি মাখায় দিতে হবে। হরেন্দ্র বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ঘুষ বানিজ্য ছাড়াই যোগ্য ব্যক্তিকে তার মেধাতে চাকুরি দেয় তার প্রমান আমার মেয়ে। আমি ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাই। মেয়ের চাকুরিতে সংসারে এবার অভাব অনটন আর থাকিবেনা।

নিয়োগ পাওয়া আজিজুল ইসলাম বলেন, আমার বাবা তোফাজ্জল হোসেন রিক্সা চালাতো। জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে বাবা মারা যান। অর্থের অভাবে বাবার চিকিৎসা করাতে পারিনি। বাবা মারা যাওয়ায় নিজেই রিক্সা চালাতাম। এসএসি পাস করে কলেজে ভর্তি হই। এরপর এইচএসসি পাশ করি। সংসারের খরচ মেটাতে রিক্সা চালাতাম। পুলিশে চাকুরি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পেয়ে আবেদন করি। এক সময় ভাবতাম ঘুষ ও সুপারিশ ছাড়া চাকরি হয় না। কিন্তু আমার ধারণা পাল্টে গেল। আমার জন্য কেউ সুপারিশ করেনি ঘুষ দেয়ার মতো কোন টাকাই নেই আমার। মেধা ও যোগ্যতায় চাকরি হওয়ায় আমিসহ আমার পরিবার খুব খুশি। এবার আর আমাকে রিক্সা চালাতে হবেনা।

কনা রানী রায় মিতুর বাবা দর্জির দোকানের কর্মচারী। কাপড় সেলাই অনুযায়ী মজুরি পান। সংসারে অভাব অনটন লেগেই আছে। তারপরেও মেয়েকে এইচ এসএসি পাশ করিয়েছে। সেই মেয়ে পেয়েছে এবার পুলিশে চাকুরি।

নুরসুন্দর (নাপিতের কাজ করেন দিপেন শর্মা। তার ছেলে বিশাল শর্মাও চাকুরি পেল পুলিশে। বিশাল জানায় লিখাপড়ার পাশাপাশি সেও বাবার সাথে নাপিতের কাজ করতো। ঘুষ বানিজ্য ও সুপারিশ ছাড়া যে চাকুরি হয় তার সাক্ষ্যি হলাম আমি নিজেই।

চাকুরী পাওয়া সকলেই যেন অভাবী পরিবারের সন্তান। ঘুষ বানিজ্য ও সুপারিশ ছাড়া পুলিশে চাকুরি পেয়ে তাদের পরিবারের অভিভাবকরা আনন্দে আত্নহারা।তারা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার ঘুষ বানিজ্য ছাড়াই যোগ্য ব্যক্তিকে মেধা ও যোগ্যতায় চাকুরি দেয় তার প্রমান আমার পেলাম।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান বলেন, শতভাগ স্বচ্ছতা, মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতেই ৫১ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আশা করি, এ ধারা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে