জয়নাল আবেদীন হিরো, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধিঃ নীলফামারীতে শুক্রবারের সকাল-সন্ধ্যার বৃষ্টিতে ইটভাটার কাঁচা ইটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ইটভাটাগুলো সাময়িক বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টিতে প্রায় ১০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভাটা মালিকরা। এদিকে ভাটার মাঠে জমে থাকা পানি ও নষ্ট ইট অপসারন না করা পর্যন্ত নতুন ইট তৈরী সম্ভব নয়। ফলে প্রায় তিন হাজার ভাটা শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে।

জেলা ইট প্রস্তুতকারক মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, নীলফামারীতে মোট ৫৪টি ইটভাটা রয়েছে। মাঘ মাসের হঠাৎ বৃষ্টিপাতে প্রতিটি ইটভাটার গড়ে ১৬ থেকে ১৭ লাখ কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে গেছে। ভাটায় তৈরীকৃত মাঠে শুকাতে দেয়া ইটগুলো নষ্ট হওয়ায় পুনরায় সেগুলোকে মাঠ থেকে অপসারন করতে হবে। পরে মাঠ পুরোপুরি শুকিয়ে পুনরায় কাঁচা ইট তৈরি করতে হবে। এতে ভাটা মালিকদের লাগবে বাড়তি শ্রমিক খরচ। নষ্ট ইট মাঠ থেকে অপসারণ ও নতুন করে ইট তৈরির কারণে প্রতিটি ইটভাটায় গড়ে প্রায় ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হবে। এতে জেলার ৫৪টি ইটভাটায় ক্ষতি হবে প্রায় ১০ কোটি টাকা।

নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার মুসা ব্রিকস মালিক মোস্তফা ফিরোজ ও ভাই ভাই ইটভাটার পরিচালক রাহেদল ইসলাম জানান, ভাটার মাঠে প্রায় ১৬ লাখ কাঁচা ইট ছিল। হঠাৎ করে বৃষ্টিপাতের ফলে এসব ইট ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। বাতাস আর ভারী বর্ষণের কারণে পলিথিন দিয়েও রক্ষা করা যায়নি কাঁচা ইটগুলো। এসব ইট মাঠ থেকে অপসারণ করে পুনরায় ইট তৈরি করতে হবে। এতে প্রায় ১৬ থেকে ১৭ লাখ টাকার মত লোকসান গুণতে হবে। এছাড়া মাঠে জমে থাকা পানির কারণে নতুন ইট তৈরী করে উৎপাদনে যেতে আরো এক থেকে দেড় সপ্তাহের অধিক সময় লাগবে। ফলে ওই সময়টিতে যে পরিমাণ ইট উৎপাদিত হতো সেটিও এখন লোকসানের খাতায় যোগ করতে হবে বলেও তিনি জানান।

নীলফামারী সদরের সোনারায় ইউনিয়নের ভাটা শ্রমিক আশরাফ আলী জানান, ভাটার মাঠে এখনও বর্ষাকালের মতো পানি জমে রয়েছে, তাই সম্পূর্ণরুপে কাজ বন্ধ রয়েছে। কয়দিন বন্ধ থাকবে তাও জানা নেই। আকাশে মেঘ থাকায় সূর্যের দেখা নেই, যে কোনো সময় আবারো বৃষ্টি নামতে পারে। এই নষ্ট ইটগুলো অপসারণ না করানো হলে নতুন করে কাঁচা ইট তৈরী বন্ধ থাকবে। এ সময় পর্যন্ত ইটভাটার প্রায় তিন হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে বসে থাকতে হবে।

নীলফারী জেলা ইট প্রস্তুতকারক মালিক সমিতির সভাপতি দেওয়ান সেলিম আহমেদ জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারনে ভাটা মালিকরা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। হঠাৎ করে বৃষ্টিপাতে প্রত্যেক ভাটার মালিকের যে লোকসান হয়েছে, তা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। একদিকে কয়লার আকাশচুম্বী দাম, তার ওপর কাঁচা ইট নষ্ট হওয়ায় বিপাকে পড়েছে ভাটা মালিকরা। তিনি জানান, ভাটা মালিকদের দেয়া তথ্য মতে শুক্রবারে বৃষ্টিপাতে জেলার প্রতিটি ভাটায় গড়ে ১৭ লাখ কাঁচা ইট নষ্ট হয়েছে। এতে প্রায় ১০ কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভাটা মালিকরা।

সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মো. লোকমান হোসেন জানান, শুক্রবার এ অঞ্চলে ৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টিপাতের সময় দেশের উত্তর-পূর্ব দিক থেকে ঘন্টায় সর্বোচ্চ ১৬ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হয়। এদিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৫ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। কিন্তু বৃষ্টিপাতের পর তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় আবারো শীত অনুভূত হচ্ছে। শনিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তিনি জানান, আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে এ অঞ্চলে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে