মোঃ রাব্বী সরকার, নারায়ণগঞ্জ থেকেঃ নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার মাসদাইর এলাকার শিশু সিয়াম হত্যা মামলার রায় ঘোষণা ১৩ আগস্ট নির্ধারণ করেছেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আনিছুর রহমান। সিয়াম ২০১৩ সালের নভেম্বও মাসের ২২ তারিখে নিখোঁজ হওয়ার পর ২৩ নভেম্বর বস্তাবন্দী লাশ মুন্সিগঞ্জের শান্তিনগর থেকে উদ্ধার করা হয়। সিয়াম মাসদাইর এলাকার মোস্তফা মাতবরের ছেলে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা গেছে, ফতুল্লার মাসদাইরের আদর্শ স্কুলের ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র আরাফাত রহমান সিয়াম আহমেদ (১০) কে খেলার মাঠ থেকে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করেছে এলাকারই চিহ্নিত মেহেদী মন্ডল, তার বাবা ফারুক মন্ডল, মা মেরিনা মন্ডল, আসলাম, হালিম ও বিপ্লব।
ওই ঘটনার দিনেই ফারুক মন্ডলের ভাইয়ের বাসার ভাড়াটিয়া হালান মাতবর লাশ সরানোর দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেন। তিনি এই মামলায় সাক্ষী হিসেবে কোর্টে দাড়িয়ে সাক্ষ্য দেন।

তিনি বলেন, রাত ১০ টায় বাসার মধ্যে ঢুকতে গিয়ে দেখি ফারুক মন্ডলের বাসার সামনে একটি ভ্যানগাড়ী দাঁড়িয়ে আছে। গাড়ির পাশে আসলাম, ফারুক মন্ডল, ফারুকের স্ত্রী মেরিনা মন্ডলসহ ৪/৫ জন মিলে বস্তা ভ্যানগাড়িতে তুলেছে। তার একই বক্তব্য ঘটনার সময় পুলিশকে জানালে পুলিশ আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান চালায়।
জানা গেছে, কবুতর দেয়ার নাম করে প্রায়ই টাকা নেয় মেহেদী। কিন্ত সে টাকা নিলেও সিয়ামকে কবুতর দেয় না। এর পর থেকে সিয়াম অন্যদের সঙ্গে চলায় ক্ষুব্ধ হয় মেহেদী। এর জেরে ২০১৩ সালের ২২ নভেম্বর মাসদাইরে আদর্শ স্কুলের ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র আরাফাত হোসেন সিয়ামকে ডেকে নিয়ে হত্যা করে মেহেদী মন্ডল। হত্যাকান্ডের পর লাশ গুমে সহযোগিতা করে ঘাতক মেহেদী মন্ডলের বাবা ফারুক মন্ডল ও তার মা মেরিনা মন্ডল। এরপর ২৩ নভেম্বর সিয়ামের বসাতাবন্দী লাশ মুন্সিগঞ্জের শান্তিনগর এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়।

এমন ফুটফুটে শিশুকে যারা ক্ষুদ্র স্বার্থে হত্যা করতে পাওে তারা মানুষ নয় মানুষ রৃপী জানোয়র। সত্য সমাজের হুমকী। এদের সর্বোচ্চ সাজা হলে দৃষ্টান্ত হিসেবে মানুষ মনে রাখবে। সাত খুনসহ ইতিমধ্যে রায় নারায়ণগঞ্জে হয়েছে তা ইতিহাস হয়ে থাকবে। নারায়ণগঞ্জের শান্তি ফিরিয়ে আন্তে এর কোনো বিকপ্ল নেই।
পূবালী ব্যাংকের কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন বলেন, স্কুল ছাত্ররা হচ্ছে নিষ্পাপ শিশু। এমনই এক শিশু আরাফাত রহমান সিয়াম আহমেদ। যারা তাকে হত্যা করেছে তারা নির্দয় আচরণ করেছে মানব সভ্যতার উপর। আমরা এর বিচার চাই। এমন বিচার যা দৃষ্টান্ত হিসেবে মানুষ মনে রাখবে। সাত খুনসহ ইতিমধ্যে কয়েকটি রায় নারায়ণগঞ্জে হয়েছে যা ইতিহাস হয়ে থাকবে। নারায়ণগঞ্জে শান্তি ফিরিয়ে আনতে এর কোন বিকল্প নাই।

আদর্শ স্কুলের অভিভাবক জেসমিন রোবায়েত বলেন, শিশু সিয়ামের হত্যার কথা মনে হলে গা শিউরে উঠে। নিখোঁজের একদিন পর তার লাশ মুন্সিগঞ্জ থেকে উদ্ধার করা হয়। ঘাতকরা শিশু সিয়ামের উপর কতটা পৈশাচিকতা চালিয়েছে তা তার দেহ প্রমাণ করেছে। চরম নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করেছে। এতটুকু শিশুকে কী ভাবে আঘাত করতে পারলো। নিষ্পাপ শিশু সিয়াম কতটাইনা ছটফট করেছে। বাঁচার আকুতি কোন ভাবেই যেন ঘাতকদের মন এতটুকু গলাতে পারে নাই। দেহটাকে যেমন ছিন্নভিন্ন করেছে তাতে বুঝা যায় ঘাতকরা মানুষ নয় পশু। নিষ্ঠুর এই মানুষ রূপীদের একবার কয়েকবার ফাঁসিতে ঝুলানো দরকার। তবে আমার বিশ্বাস আদালত বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সর্বচ্চ শাস্তিই দিবেন ঘাতকদের।

মাসদাইর এলাকার মুদি দোকানদার শাকিল বলেন, এই জীবনে এমন রোমহর্ষক ঘটনা আর একটিও শুনিনি। ঘাতকরা আঘাতের পর আঘাত করে সিয়ামকে হত্যা করেছে। এত ছোট শরিরে এতগুলো আঘাত করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। ঘাতকরা এলাকায় আগে থেকেই অসভ্য হিসেবে পরিচিত। এতটা অসভ্য তা কেউ আগে কল্পনা করতে পারেনি। সিয়ামকে হত্যার পর মানুষ তাদের আর এলাকায় সহ্যে করতে পারছে না। মানুষের মনে ভয় আবার নাকি কোন ঘটনা ঘটায় এই ঘাতক দল। তাদের বিরুদ্ধে আগেও মামলা ছিল। তারা চিহ্নিত পরিবার। যারা জানে তারা তাদের সঙ্গে মিশে না। এ ঘটনা ঘটার পর ছোট বাচ্চাদের আর কেউ বাসার বাহিরে খেলতে দেয়া না।

অভিভাভকরা বাসার ভেতরেই শিশুদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আটকে রাখেন। তাই এর বিচার দ্রুত শেষ করা মানুষের দাবি। এলাকাবাসীর দাবি ঘাতকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে উদাহরন সৃষ্টি করা যাতে আর কোন ঘাতক এমন নিষ্ঠুর ঘটনা ঘটাতে সাহস না পায়। মসজিদের ইমাম মাওলানা বেলায়েত হোসেন বলেন, সিয়ামের ঘটনা মনে হলে চোখে পানি এসে পরে। ১০ বছরের ফুট ফুটে শিশুটিকে কতটাই না কষ্ট দিয়েছে ঘাতকরা। আমি দেখেনি তবে শুনিছি। শুনেই অস্থির হয়ে উঠেছি। এমন আচরণের যেন কেউ স্বীকার না হয়। আমি এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। এবং তা দ্রুত কার্যকর চাই যাতে ঘাতকরা পালাতে না পারে।

২০১৫ সালের ২৪ মার্চ তদন্তকারী কর্মকর্তা ৬ জনকে অভিযুক্ত করে এসআই গোলাম মোস্তফা আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। তিনি চার্জশীটে ২৯ জনকে সাক্ষী হিসেবে উল্লেখ করেন। যার মধ্যে ২২ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছে। আসামীদের মধ্যে মেহেদী মন্ডল, আসামী ফারুক মন্ডল, তার স্ত্রী মেরিনা মন্ডল, হালিম ও বিপ্লব জেলহাজতে রয়েছে। আসামী আসলাম বিদেশে পালিয়ে গেছে।

মামলার বাদি নিহত সিয়ামের বাবা হাজী মো. মোস্তফা মাদবর জানান, আদালতে স্বীকারোক্তি দেয়া ভ্যানচালক আসলামকে ৩ লাখ টাকা দিয়ে ইতিমধ্যে মালয়েশিয়ায় পাঠিয়ে দিয়েছেন ফারুক মন্ডল। ফারুক মন্ডল ও তার স্ত্রী মেরিনা মন্ডলও তাদের বাড়ি বিক্রি করে দেশ ছাড়তে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে। এক ব্যক্তির কাছ থেকে তারা মোটা অংকের টাকাও নিয়েছেন বলে তিনি শুনেছেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে