ডেস্ক রিপোর্ট : অনেক কষ্টে টাকা জমিয়ে আপনার পছন্দের ব্র্যান্ড স্যামসাংয়ের একটি মোবাইল হ্যান্ডসেট কিনলেন। কিন্তু ব্যবহার শুরু করার পর দেখলেন এটি শুধু উপরে উপরেই স্যামসাংয়ের ফোন, কিন্তু আসলে এটি একটি নকল হ্যান্ডসেট। আপনার কষ্টের টাকাগুলোই গেল জলে।

সম্প্রতি এ রকম অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হচ্ছেন অনেকেই। শুধু যে স্যামসাংয়ের ফোনের ক্ষেত্রে এমনটা হচ্ছে তা নয়, নোকিয়াসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডের ফোনের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটছে। ফলে প্রতারিত হচ্ছেন এসব কোম্পানির গ্রাহকরা। কোম্পানিগুলো নিজেরাও ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছে। আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলোর ইমেজও হুমকির মুখে পড়েছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বারবার অভিযান চালানো সত্ত্বেও এসব ভুয়া হ্যান্ডসেট বিক্রি কমছে না।

নোকিয়া, স্যামসাংসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির মোড়কে ভুয়া ফোনগুলো ফেসবুকসহ বিভিন্ন অনলাইন শপগুলোতে যেমন বিক্রি হচ্ছে, একইভাবে বিক্রি হচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অভিজাত শপিং সেন্টারগুলোতে। আর এসব ভুয়া ফোন উপর থেকে দেখেও বোঝা কঠিন। পুরাতন ফোনে নতুন কেসিং লাগিয়ে নতুন ফোন হিসেবে বিক্রির অভিযোগও পাওয়া গেছে বিভিন্ন সময়।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ই-কমার্স সাইটগুলো বলছে, কোনো ধরনের ভুয়া ফোন যাতে তাদের প্ল্যাটফর্মে না ঢুকতে পারে, সে বিষয়ে তারা সবসময় সচেতন থাকে।

ই-কমার্স সাইট বাগডুম.কমের অ্যাসিস্ট্যান্ট বিজনেস ডেভলপার রাফিউল নেওয়াজ প্রিয়.কম-কে বলেন, মোবাইল কোম্পানিগুলোর সাথে সরাসরি চুক্তির ভিত্তিতে বাগডুম মোবাইল বিক্রি করে। কোনো ধরনের ভুয়া ফোন গ্রাহক প্রমাণ করতে পারলে, বাগডুম তার পূর্ণ দায়িত্ব নিতে রাজি আছে।

ব্যাপারটি নিয়ে বিব্রত নোকিয়া। গ্রাহকদেরকে প্রতারণার হাত থেকে বাঁচাতে সচেতনতামূলক কর্মসূচি শুরু করতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এমনকি প্রতারকদের শনাক্ত করতে নোকিয়া আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছে।

নোকিয়ার হেড অব বিজনেস ফারহান রশিদ বলেন, ‘কয়েকবছর আগে আমাদের মার্কেট শেয়ার যখন ৮০ শতাংশ ছিল, তখন আমরা প্রথম নোকিয়ার নামে ভুয়া ফোন বিক্রির অভিযোগ পাই। তখন তারা মোবাইলে মেসেজ দিয়ে এসব ভুয়া ফোন বিক্রি করত। এখন তারা ফেসবুকের মাধ্যমে এসব বিক্রি করছে।’

ভুয়া ফোনের বিস্তার ঠেকাতে ব্যবস্থা নিচ্ছে শাওমিও। প্রতিষ্ঠানটির এক্সিকিউটিভ এডমিন মুহিবুল্লাহ মুহিত প্রিয়.কম-কে বলেন, ‘শাওমির নিজস্ব শপ থেকে কেনা ফোন ভুয়া হওয়ার কারো সুযোগ নেই। বিদেশ থেকে ব্যক্তি উদ্যোগে আনা ফোনের ক্ষেত্রে এমনটা হতে পারে। তাই নিজস্ব শপের বাইরে শাওমির ফোন বেচাকেনা বন্ধ করতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’

বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, তারা ধারণা করছেন দেশের বাজারে থাকা মোট মোবাইলের ৩০ শতাংশই অবৈধভাবে দেশে ঢুকছে। এ অবৈধ মোবাইলগুলোই ফেসবুকসহ নানা প্ল্যাটফর্মে বিক্রি হচ্ছে।

ডিএমপি’র জনসংযোগ শাখার ডিসি মাসুদুর রহমান প্রিয়.কম-কে বলেন, ভুয়া ফোনের বিরুদ্ধে গ্রাহক পর্যায়ে বা কোম্পানি থেকে অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। যে কেউ এ ধরনের প্রতারণার শিকার হলে পুলিশের কাছে অভিযোগ করলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।

ভুয়া মোবাইল নিয়ে প্রতারণা ঠেকাতে প্রসাশসনের উদ্যোগ সম্পর্কে চাইলে ঢাকা জেলার জেলা প্রসাশক মো. সালাহউদ্দিন প্রিয়.কম-কে বলেন, ‘বিষয়টা জানতে পারলাম। এখন থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

প্রি/ড


একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে