কুমিল্লা: গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, কুমিল্লায় পূজামণ্ডপ ঘিরে উত্তেজনা ও সংঘর্ষের ঘটনায় দোষীদের ১৫ দিনের মধ্যে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।  তবে নিরীহ কাউকে যেন শাস্তি না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

শুক্রবার (১৫ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২টায় কুমিল্লার নানুয়ার দিঘির পাড়ে যে পূজামণ্ডপটি ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে, সেই মণ্ডপটি পরিদর্শনে এসে তিনি একথা বলেন।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘কুমিল্লার মানুষ যুগ যুগ ধরে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছে। কেউ সূক্ষ্ম পরিকল্পনা করে মণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ রেখে গেছে। পূজামণ্ডপে কোরআন শরিফ রাখা যেমন ন্যাক্কারজনক, তেমনই পুলিশের সামনে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনাও দুঃখজনক।

দেশের অন্যান্য সহিংসতার ঘটনায় বিচার না হওয়ায় বারবার এমন ঘটছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এসময় উপস্থিত ছিলেন- জোনায়েদ সাকি, শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, নঈম জাহাঙ্গীর, ইশতিয়াক আজিজ ঊলফাত, ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান প্রমুখ।

ক্ষতিগ্রস্ত মন্দিরের পরে দেশওয়ালীপট্টি, কাপড়িয়াপট্টি ও ঘোষগাঁও গ্রামের পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন তারা।

জানা যায়, গত মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) রাতে নানুয়ার দিঘীরপাড়ের দুর্গাপূজার মণ্ডপে মূর্তির পায়ের নিচে কোরআন শরিফ রাখার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরদিন বুধবার সকালে দুজন ব্যক্তি ৯৯৯-এ কল করে অভিযোগ করলে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টির সত্যতা পায় কোতোয়ালি থানা পুলিশ। ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আন্ওয়ারুল আজিম কোরআন শরিফটি উদ্ধার করেন। এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে ওইদিন সকাল থেকে বিক্ষুব্ধ জনতা নানুয়ার দিঘীরপাড়ে জড়ো হয়ে মিছিল করে এবং দুটি মণ্ডপে ভাঙচুর চালায়। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন কুমিল্লা সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কু, জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ কামরুল হাসান, জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) ফারুক আহমেদ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।

এর আগে ডিসি, এসপি ও সিটি মেয়রসহ পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথাও বলেন।

বুধবার দুপুর ১২টার পর উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করে। জেলা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে দফায় দফায় সংঘর্ষ শুরু হয়। উত্তেজিত জনতা মনোহরপুরের শ্রী শ্রী রাজেশ্বরী কালিমন্দির, চকবাজারের মন্দির এবং  ঠাকুরপাড়া বাগানবাড়ী এলাকার পূজার গেটে ভাঙচুর করে। বিকেলে টমছম ব্রিজেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে উত্তেজিত জনতার ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ঠাকুরপাড়া এলাকাতেও মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। বিকেল পৌনে ৫টা পর্যন্ত দফায় দফায় বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ ও মিছিলের ঘটনা ঘটে। এতে ছয়জন গুলিবিদ্ধসহ কমপক্ষে ১০০ জন আহত হয়।

 একটি সূত্রে জানা যায়, আহতদের মধ্যে কুমিল্লা জেনারেল (সদর) হাসপাতালেই চিকিৎসা নেন ৬৬ জন।

বড় ধরনের সংঘর্ষের শঙ্কায় বুধবার দুপুর থেকেই অতিরিক্ত পুলিশ, র‌্যাব ও চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। কুমিল্লায় ইন্টারনেট সংযোগ স্লো করে দেওয়া হয়। এর আগে প্রায় ৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নও ছিল কুমিল্লা।

ban/N

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে