বাংলাদেশে কাতার ভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল-জাজিরার সম্প্রচার বন্ধে আনা রিটের শুনানিতে মতামত জানতে ছয় এমিকাস কিউরি নিয়োগ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ বিষয়টি নিয়ে আজ শুনানিকালে এ আদেশ দেন।
এমিকাস কিউরিগণকে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে মতামত দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। আদেশের অনুলিপি আজ বুধবারের মধ্যেই সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের কাছে পৌঁছে দিতে সংশ্লিষ্ট শাখাকে নির্দেশও দিয়েছে আদালত।
এমিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্তরা হলেন সাবেক এটর্নি জেনারেল সিনিয়র আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার কামাল-উল আলম, আব্দুল মতিন খসরু, সাবেক এটর্নি জেনারেল ফিদা এম কামাল, আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী ও ড. শাহদীন মালিক।
‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ শিরোনামে ডকুমেন্টারি প্রচারের প্রেক্ষাপটে কাতার ভিত্তিক টিভি চ্যানেল আল-জাজিরার সম্প্রচার বন্ধ ও এ সংক্রান্ত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে অপসারণের নির্দেশনা চেয়ে রিটটি করা হয়েছে। সোমবার ৮ ফেব্রুয়ারি রিটটি দায়ের করেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মো. এনামুল কবির ইমন।
শুনানিকালে রিট আবেদনকারীকে প্রশ্ন করা হয়- আল-জাজিরায় সম্প্রচারিত তথ্যচিত্রে তিনি কীভাবে সংক্ষুব্ধ হয়েছেন, সংক্ষুব্ধ হয়ে থাকলে রিট আবেদনের আগে সংশ্লিষ্টদের উকিল নোটিস বা ডিমান্ডিং জাস্টিস দেয়া হয়েছিল কিনা এবং এই রিটকে তিনি ‘জনস্বার্থে’ বলছেন কীভাবে।
জবাবে রিটকারী আইনজীবী এম এনামুল কবির ইমন বলেন, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা অক্ষুন্ন রাখতে এই রিট করা হয়েছে।
শুনানিকালে আদালত বলেন, সুনির্দিষ্ট আইন ও কর্তৃপক্ষ থাকার পরও গত দশদিনে কেনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে ভিডিওটি অপসারণ করা গেলো না। এখন তো দেশ-বিদেশের কোটি কোটি লোক এটি প্রত্যক্ষ করেছে। বিটিআরসি যদি এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে না পারে তাহলে তারা ওখানে বসে আছে কেন বলে মন্তব্য করেন আদালত।
শুনানিতে যুক্ত হয়ে বিটিআরসি’র আইনজীবী খন্দকার রেজা-ই রাকিব বলেন, আল-জাজিরার কোন বাংলা ভার্সন নেই। কিন্তু ওই কন্টেনটি বাংলায় করেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যাতে এ সংক্রান্ত ডকুমেন্টারি আর প্রচার না করা হয় সেজন্য পদক্ষেপ নিতে আদালত আদেশ দিতে পারেন। যেমনটি নোয়াখালীর এক নারীর নির্যাতনের ভিডিও ছড়িয়ে পরার ঘটনায় দেয়া হয়েছিলো। আর দেশের মধ্যে আল-জাজিরার সম্প্রচার বন্ধ করা সম্ভব।
এ সময় ডেপুটি এটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী বলেন, ডিমান্ডিং জাষ্টিস না দিলেও রিট করা যায়। আল-জাজিরার ওই রিলেটেড ইস্যুতে আরো পর্ব আসতে পারে। বিটিআরসির উচিত ছিলো পদক্ষেপ নেয়া। কিন্তু এক্ষেত্রে তারা নিষ্ক্রিয়তা (ফেলিউর) দেখিয়েছে।
রিট দায়েরের পর রিটকারী আইনজীবী মো. এনামুল কবির বলেন, রিটে বাংলাদেশে আল-জাজিরার সম্প্রচার বন্ধের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ নামে সম্প্রচারিত প্রতিবেদনটি ইউটিউব, ফেসবুক ও টুইটার থেকে অপসারণের নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে।
রিটে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব, তথ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, বিটিআরসির চেয়ারম্যান, পুলিশের আইজিসহ সংশ্লিষ্টদেরকে বিবাদী (রেসপনডেন্ট) করা হয়েছে।
আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টায় এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির তারিখ রাখা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল।
আল-জাজিরায় ১ ফেব্রুয়ারি রাতে ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রচার করা হয়। ইতোমধ্যে প্রতিবেদনটিকে মিথ্যা ও মানহানিকর আখ্যা দিয়ে বিবৃতি দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এদিকে সেনা সদরের তরফ থেকে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পাঠানো এক বিবৃতিতে ওই প্রতিবেদনকে বর্ণনা করা হয় ‘সাজানো এবং দুরভিসন্ধিমূলক’ হিসেবে।

BSSN

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে