ডেস্ক রিপোর্টঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতি, মাদক এবং জঙ্গিবাদ উচ্ছেদ করে বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাবার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় দুর্নীতি একটি কালো ব্যধির ন্যায় ছেয়ে গেছে। কারণ যে দেশে সামরিক সরকাররা ক্ষমতায় আসে তারা প্রথমে সমাজটাকে ধ্বংস করে দেয়। কারণ দুর্নীতিটাকেই তারা নীতি হিসেবে ন্যায় এবং দুর্নীতির সুযোগও সৃষ্টি করে দেয়।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে টানা তৃতীয় বার এবং মোট চতুর্তবারের মত তাঁর সরকার গঠন উপলক্ষ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের অংশ হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মত বিনিময়কালে একথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ঋণ খেলাপি থেকে দুর্ণীতিবাজ যাদেরকে আমরা দেখি তাদের সৃষ্টি হয় ’৭৫-এর পর যারা ক্ষমতায় এসেছে তাদের কাছ থেকে।’
এ সমস্ত কালো ব্যাধি থেকে সমাজকে মুক্ত করার লক্ষ্যেই তাঁর সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে এটি এখন সময়ের প্রয়োজন এবং তার জন্য যা যা করণীয় তাঁর সরকার করে যাবে, বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটি দেশকে যদি আমরা উন্নত করতে যাই তাহলে মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং দুর্ণীতির হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। এ সময় মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বৃন্দ এবং বিভিন্ন সংস্থা এবং দপ্তরের প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন।
অতীতে দেশে জঙ্গিবাদ তথা বাংলা ভাই সৃষ্টিতে সে সময়কার সরকারের (বিএনপি-জামায়াত) একটি প্রচ্ছন্ন মদদ ছিল উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন,‘তারা (জঙ্গিরা) মিছিল করছে আর পুলিশ তাদের পাহারা দিচ্ছে। এরকম দুঃখজনক ঘটনাও আমরা বাংলাদেশে দেখেছি। আর মাদকতো ঘরে ঘরে ছড়িয়ে দেয়া হয়।

সমাজে অপরাধ প্রবণতার হার কমিয়ে আনার জন্য অপরাধ দমনের পাশাপাশি তাদের অপরাধ সংগঠনের কারণ খুঁজে বের করা এবং তাঁর প্রতিকারের প্রতি দৃষ্টি দেওয়ার জন্যও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন,‘ অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদেরকে শান্তি দিলেই যে অপরাধ দমন হয়ে যাবে তা নয় বরং তাদের সমাজে সুস্থ জীবন দিয়ে ফিরিয়ে আনতে পারাটাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’ এ সময় জলদস্যু এবং বনদস্যুদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করানোর পর তাঁদের সমজে পুণর্বাসনেও তাঁর সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এদের পুনর্বাসন করা না গেলে তারা আবারো ঐ পথে ফিরে যেতে পারে।’

তিনি দেশব্যাপী চলমান মাদক বিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখার পাশাপাশি কারা মাদক দেশে নিয়ে আসছে,কারা ব্যবসা বরছে এবং কারা সেবন করছে এদের সকলের বিরুদ্ধেই বহুমুখি ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জানান।
তিনি বলেন, ‘যারা মাদকটা সেবন করে তাকেই না, যারা মাদকটা আনে, দেয় বা সাপ্লাই দেয়, তৈরী করে এদরকেও ধরতে হবে। সেইসাথে যারা সুস্থভাবে সমাজে ফিরতে চাইবে তারে সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। মাদকাসক্তদের নিরাময়েরও উদ্যোগ নিতে হবে।’
শেখ হাসিনা এ সময় সরকারের পক্ষ থেকে মাদক নিরাময় কেন্দ্র স্থাপন এবং মাদকের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টির ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে একটি বিশাল মন্ত্রণালয় উল্লেখ করে অতীতে এর পর্যাপ্ত লোকবল না থাকার বিষয়টি তুলে এনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এজন্যই তাঁর সরকার এই মন্ত্রণালয়কে দুটি ভাগে ভাগ করে দিয়েছে।’
তাঁর সরকার এখানে কোস্ট গার্ড গঠন করেছে এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীতে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদেরকেও প্রেরণ করেছে। সেদিক থেকে বাংলাাদেশ বিশ্বে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। জাতিসংঘ মিশনে আমাদের পুরুষ পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি নারীরাও প্রশংসার সঙ্গে কাজ করছে, বলেন তিনি।

এ সময় দেশের কারাগারগুলোকে সংশোধনাগার হিসেবে গড়ে তোলায় তাঁর সরকারের উদ্যোগসমূহ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী কারা অভ্যন্তরে কয়েদিদের জন্য সৃজনশীল জীবিকা সংস্থানে সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, সাজার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে তারা যেন কিছু পুঁজি নিয়ে যেতে পারে এবং পরবর্তী জীবনে তাদের যেন সেটা কাজে লাগে। সেজন্য কয়েদিদেরও নানা প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।
এ সময় তিনি জঙ্গিবাদ এবং জলদস্যু মোকাবেলায় র‌্যাব এবং গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকার প্রশংসা করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের অপরাধ দমনে আরো প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন হবার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, ‘প্রতিনিয়ত বিশ্বে প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটছে। কাজেই তার সঙ্গে তাল মিলিয়েই আমাদের চলতে হবে।’

ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের উন্নয়নের তাঁর সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে প্রতি উপজেলাতেই একটি করে ফায়ার সার্ভিস হবে। যাতে করে আগুন লাগলে পরে তাৎক্ষণিকভাবে জনগণ সেবাটা পায়।’
তিনি এ সময় কোন প্রকল্প গ্রহণের সময়ই প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ এবং তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার জন্য সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি নির্দেশনা প্রদান করেন।

সন্ত্রাস এবং জঙ্গি দমনে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, গোয়েন্দা সংস্থা সহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথা সমগ্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাফল্যের পুনরোল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এর স্বপক্ষে জনমত সৃষ্টি করে সকল শ্রেণী পেশার জনগণকে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করতে পারাতেই সাফল্য এসেছে উল্লেখ করে একে অব্যাহত রাখারও নির্দেশনা দেন।
তিনি এ সম্পর্কে বলেন, ‘জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস কেবল আমাদের দেশেরই সমস্যা নয়। এটি সমগ্র বিশ্বব্যাপী একটি সমস্যা কাজেই একে আমাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতেই হবে।’

তিনি ১২৩ ভাগ বেতন বৃদ্ধি এবং সরকারি কর্মচারীদের আবাসন সমস্যা নিরসনে সরকারের উদ্যোগসমূহ তুলে ধরে বলেন, ‘আমি ইতোমধ্যেই নির্দেশ নিয়েছি উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত আমাদের সরকারি কর্মচারীদের আবাসন ব্যবস্থা করে দেয়ার। কারণ যারা জনগণের জন্য কাজ করে তারা যেন ভাল থাকতে পারে, নিরাপদে থাকতে পারে সে ব্যবস্থাটাও আমাদের নিতে হবে।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে এবং এ ব্যাপারেও যথেষ্ট সচেতন হতে হবে। অর্থাৎ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করাই এই মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব।’

তিনি বলেন, ‘তাঁর সরকার বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলার পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চায় ।’
এ সময় পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জনবল বৃদ্ধি, সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, আধুনিকায়ন এবং প্রয়োজনীয় যানবাহনের ব্যবস্থা করাকে একটি চলমান প্রক্রিয়া উল্লেখ করে তিনি প্রতি বছরে প্রয়োজনীয় জনবলের বিপরীতে কি পরিমাণ যানবাহন এবং জলযান লাগতে পারে তার একটি তালিকা প্রণয়নেরও পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন, তাঁর সরকার জাতির পিতার রেখে যাওয়া স্বল্পোন্নত দেশ থেকে আজকে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করেছে এবং এখন লক্ষ্য উন্নত দেশে পরিণত করা।

এই উন্নত দেশ করার জন্য মানুষের জীবনের নিরাপত্তা বিধান করা এবং সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করার ওপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেন। পরিশেষে প্রধানমন্ত্রী দুর্ঘটনা রোধে জনগণকে ট্রাফিক আইন মেনে চলার এবং রাস্তা পারাপারে ফুটওভার ব্রীজ ব্যবহারের পরামর্শ দেন।

B/S/S/N.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে