সরকারি কর্মকর্তাদের হুঁশিয়ারি দিলেন দুদক চেয়ারম্যান
ডেস্ক রিপোর্ট : দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ সরকারি কর্মকর্তাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, দুর্নীতি করলেই জেল। জনগণকে দুর্নীতিমুক্ত সেবা দিতে হবে। এটা আমাদের দায়িত্ব, কর্তব্য। এটা তাদের (জনগণের) অধিকার। যদি ব্যর্থ হন তাহলে যে কাউকে জেলে যেতে হবে। ইফ ইউ ফেইল, ইউ হেল্ড আপ ইন জেল। গতকাল বুধবার চট্টগ্রামে ‘দুর্নীতিমুক্ত সরকারি সেবা : দুর্নীতির অভিযোগের প্রকৃতি’ শিরোনামে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, দুদক গত বছরে সাড়ে ৫শ ব্যক্তিকে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার করেছে। এর মাধ্যমে দুর্নীতিবাজদের বার্তা দেয়া হয়েছে যে আইনের ঊধর্ে্ব কেউ নয়। দুদক চেয়ারম্যান আরও বলেন, ছোট-বড় বিবেচনা না করে প্রায় সব সেক্টরে দুর্নীতি বিরোধী অভিযান চালানো হয়েছে। দুদক চেয়ারম্যান বলেন, জনগণকে নিয়ে কাজ করুন। জনগণের বিরুদ্ধে যেন আমরা না দাঁড়াই।

জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আপনি জিতবেন না। কেউ জিততে পারে না। জনগণকে তাদের সেবা দিন। আমরা যদি জনগণকে সেবা দিতে না পারি তাহলে আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ, আমরা যেন কেউই আইনের বাইরে গিয়ে কাজ না করি। ইকবাল মাহমুদ বলেন, আমরা যেন জনগণকে সার্ভিস দেই। টাকার বিনিময়ে আমরা যদি সার্ভিস দেই ১ দিন, ২ দিন, ৩ দিন, ১০ দিন, কাউকে ছাড় দেয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। আমি সবাইকে বলছি আইনটা মানেন।

তিনি সরকারি কার্যালয়গুলোতে বিদ্যমান পদ্ধতি মেনে সেবা দেয়ার পাশাপাশি তা উন্নত করতে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যে পদ্ধতি আছে সে পদ্ধতি মানেন, যদি পারেন সে পদ্ধতি উন্নতি করেন। কিন্তু পদ্ধতি থেকে বের হয়ে যাবেন না। আমি জানি আপনাদের চাপ থাকে। সে চাপ সহ্য করতে হবে। এটা আমাদের কর্তব্য।

ইকবাল মাহমুদ আরও বলেন, আসুন আমরা চাপের কাছে মাথানত না করে জনগণের কাছে মাথানত করি। আমরা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ, কোনো ব্যক্তির কাছে দায়বদ্ধ না। দুর্নীতির অভিযোগে অনেক সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রসঙ্গে ইকবাল মাহমুদ বলেন, ব্যাংকের বহু এমডি, ব্যবসায়ী এয়াপোর্টের দিকে যেতে পারছেন না। তাদের এই দেশ ছেড়ে যাওয়ার অনুমতি নেই।

সরকারি অফিসের বিরুদ্ধে দুদকে জমা হওয়া অভিযোগের বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, সব অভিযোগ সত্য আমরা বলবো না। তবে কিছু যদি সত্য না থাকে তাহলে এতগুলো কন্টেইনার স্ক্যানিং ছাড়া কিভাবে চলে যায়। অনেকে একমত হবেন, ওখানে যে অস্ত্র যায়নি কে বলবে?

দুদক কারও বিরুদ্ধে মামলা করতে চায় না জানিয়ে ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুদকের মামলায় জামিন নেই, এই মামলা ক্যান্সারের মতো যার কোনো শেষ নেই। দুর্নীতির মামলায় কেউ আসামি হোক ব্যক্তিগতভাবে আমি তা চাই না।

তিনি বলেন, এই মামলায় অভিযুক্তের মান-সম্মান, ইজ্জত, অর্থ-বিত্ত, সমাজ সংসার সবকিছু ধ্বংস হয়ে যায়। জেলখানার অবর্ণনীয় কষ্ট কেবল ভুক্তভোগীরাই বুঝতে পারবেন। এখন সময় এসেছে আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, কোনো কিছু গোপন কিংবা লুকিয়ে রাখার দিন শেষ। কে কোথায়, কীভাবে, কখন ঘুষ খান বা দুর্নীতি করেন তা একদিন সবই ফাঁস হয়ে যায়। ১ বার, ২ বার বাঁচতে পারলেও বারবার বাঁচার কোনো সুযোগ নেই।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের বুঝতে হবে প্রতিটি কাজ সময়মতো শেষ করা তার দায়িত্বের অংশ। নথিতে আলোচনা করুন লিখে ফাইল আটকে রাখাও একটা দুর্নীতি।

তিনি বলেন, সচিবালয় নির্দেশিকা সঠিকভাবে অনুসরণ করতে হবে। এ বিষয়গুলোও দুদকের নজরদারিতে রয়েছে। সময় এসেছে সত্য কথা বলা ও অন্যায় চাপের কাছে নতি স্বীকার না করার। ইকবাল মাহমুদ বলেন, আইনানুগভাবে জনস্বার্থে কাজ করলে দুদক কোনো মামলা করবে না।

চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি, জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের পরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক, বিভাগীয় তথ্য কর্মকর্তা, দুদকের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালকসহ বিভাগীয় পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।

দ/নৈ/প

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে