আসাদ হোসেন রিফাত, লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ কার্তিকের শুষ্ক মৌসুমে ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢল ও ভারতের গজলডোবার সব কয়টি গেট খুলে দেওয়ায় তিস্তায় পানি হুহু করে বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ।  ফলে দেখা দিয়েছে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা।

এদিকে তিস্তা ব্যারাজের ফ্লাড বাইপাস ভেঙে গেছে ।

এতে লালমনিরহাটে তিন উপজেলায় তিস্তার চর এলাকায় ১০ হাজার পরিবার পানি বন্দি হয়ে পড়েছে।
এদিকে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে হাজার হাজার হেক্টর ধান ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। পানির তোড়ে ভেঙ্গে গেছে রাস্তাঘাট ভাঙ্গন।

বুধবার (২০ অক্টোবর ) ভোর থেকে তিস্তার পানি  বৃদ্ধিতে তিস্তারচর অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার দেখা দিয়েছে।
ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় ঘরবাড়ি ছেড়ে পরিবার গুলো উচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।

কার্তিক মাসের শুষ্ক মৌসুমে হঠাৎ এমন বন্যা দেখিনি তিস্তাপারের চরবাসী। গতরাত থেকে বুঝে উঠার আগে ঘরবাড়িতে হু হু করে পানি প্রবেশ করলে আতঙ্ক বিরাজ করে।

বুধবার (২০ অক্টোবর ) সকাল ৯ টায় দেশের বৃহত্তম সেচপ্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫৩ দশমিক ২০ সেন্টিমিটার। যা বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার উপরে (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার) দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্যারাজ রক্ষায় ৪৪টি গেট খুলে দেয়া হয়েছে।

গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে তিস্তা শুকিয়ে জেগে উঠেছিল চর। হঠাৎ তিস্তার পানিতে সব ডুবে গিয়ে তিস্তা ফিরে পেয়েছে নতুন যৌবন।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সূত্র জানায়, মঙ্গলবার রাত থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে ব্যারাজ পয়েন্টে  ৫২ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার। বুধবার সকাল ৯ টায় পয়েন্টে  ৫৩ দশমিক ২০ সেন্টিমিটার  বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে  প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার পানি ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে  দিয়ে পানি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড তিস্তাচরের মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে যাওয়ার জন্য আহবান জানান।

জানা গেছে, তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তার তীরবর্তী নিম্ন অঞ্চলের বাড়ি ঘরে পানি উঠে গেছে। পানি বন্দি হয়ে পড়েছে ১০ হাজার পরিবার। এদিকে পানির তোড়ে ভেঙে গেছে রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি।
নদীর গর্ভে বিলীন হয়েছে কয়েক হেক্টর ফসলি জমির ধান ক্ষেত।

এদিকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী,সিঙ্গামারি, সিন্দুর্না,পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী,নোহালী, চর বৈরাতি তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করে প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানি বন্দি হয়ে পড়েছে।

হাতীবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ী  ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য পদপ্রার্থী মাহাবুবার রহমান বলেন,এই শুষ্ক মৌসুমে এমন বন্যা  আর দেখা যায়নি। গত দুই মাস আগে এ নদীর শুকিয়ে গিয়েছিল আজ নদীতে ভরপুর পানি অনেক পরিবার উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে অনেক বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে।

হাতীবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের কৃষক জাহিনুর ইসলাম বলেন, রাত থেকে হঠাৎ পানি বৃদ্ধিতে ধানক্ষেত সহ রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করে,তিস্তা নদীতে আমার আগাম আলু ও ভুট্রা লাগানো ছিল সব বন্যায় শেষ হয়ে গেল লোনের টাকা কিভাবে পরিষদ করব  ।

এ বিষয়ে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউ দৌলা বলেন, উজানে ঢলে ও ভারী বৃষ্টিপাতের  ফলে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৬০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তাপারের মানুষদের নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়া জন্য বলা হচ্ছে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে বিষয়টা আমরা জেনেছি। পানিবন্দি পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য সহায়তা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা পানিবন্দি পরিবারগুলোর জন্য সহায়তায় ব্যবস্থা করছেন। 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে