বিডি নীয়ালা নিউজ(১৯ই মে১৬)-ডেস্ক রিপোর্টঃ স্কুলের প্রধান শিক্ষককে মারধর ও কানধরে উঠবস করানোর ঘটনা সত্য স্বীকার করে এর জন্য লজ্জিত ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন এমপি সেলিম ওসমান। তার নির্দেশে এই ঘটনা ঘটলেও তিনি ক্ষমা চাইবেন না বলেও পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন।
কারণ হিসাবে তিনি বলেছেন, তিনি কোনো শিক্ষককে শাস্তি দেননি বরং একজন ইসলামের অবমাননা ও কটূক্তিকারী নিজেই জনসম্মুখে শাস্তি হিসাবে কান ধরে উঠবস করেছেন এবং ক্ষমা চেয়েছেন। তাহলে আমি কার কাছে ক্ষমা চাইবো? একজন কন্যাদায়গ্রস্ত পিতাকে রক্ষা এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা থামাতেই তিনি এই কাজ করতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানান।
বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১২টায় নারায়ণগঞ্জ ক্লাব লিমিটেডে তৃতীয় তলায় কনভেনশন হলে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষককে অপদস্থ করার বিষয়ে নিজের অবস্থান ব্যাখা করেন সেলিম ওসমান।
শিক্ষকের কাছে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ (শহর ও বন্দর) আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান বলেন, ওই শিক্ষককে (শ্যামল কান্তি ভক্ত) কান ধরে উঠবস করানোর ঘটনায় ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই নেই। আমি কার কাছে ক্ষমা চাইব, যিনি আল্লাহকে কটূক্তি করেছেন? তবে আমি লজ্জিত এবং সমাজের কাছে দুঃখিত যে তারা এমন একটি ভিডিও দেখেছেন যাতে তারা আমাকে ভুল বুঝেছেন। আমি কোন শিক্ষককে শাস্তি দেই নাই। বরং শিক্ষক তার দোষ স্বীকার করে শাস্তি হিসাবে কান ধরে উঠবস করেছেন এবং জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। তবে ওই মুহূতে জনগণকে শান্ত করতেই আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করতে হয়েছে। আর এ কারণে একজন কন্যাদায়গ্রস্ত পিতাকে বাঁচাতে ও সম্প্রদায়িক দাঙ্গা থেকে রক্ষা করতে এসব কিছু করতে হয়েছে।
সেলিম ওসমান আরো বলেন, যখন মাস্টারকে কান ধরে উঠবস করা হয় তখন এলাকার লোকজন ‘নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবর’ স্লোগান দেয়। অথচ সেখানে ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান জুড়ে দেয়া হয়। ঘটনার পর আমি প্রধান শিক্ষককে পুলিশ প্রহরায় হাসপাতালে পাঠিয়েছিলাম। মাস্টার এখন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে অথচ কেউ কোন খবর নিল না তার খরচ কে চালাচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষকের দুই বছর আগে ব্রেনস্ট্রোক করেছিল। এ ধরনের একজন ব্যক্তিকে কীভাবে প্রধান শিক্ষক বানানো হয়েছিল সেটাও আমার বোধগম্য না। ইতোমধ্যে আমার পূজা উদযাপন পরিষদের লোকজন তদন্ত করেছে। তারা জানিয়েছে, এ মাস্টারকে সবাই ‘তার ছেঁড়া মাস্টার’ হিসেবেই জানে।
সেলিম ওসমান বলেন, আমি বদ্ধঘরে থাকা হেড মাস্টারের কাছে কারণ জানতে চাই এবং ধর্ম নিয়ে কোনো কটূক্তি করেছে কি না সেটা জানতে চাই। উত্তরে প্রধান শিক্ষক আমাকে বলেন, হয়তো আমার মাথা ঠিক ছিল না। আমার মাথা নষ্ট। কটূক্তি করলেও করতে পারি। আমি তিন কন্যার বাবা, আমি একজন কন্যা দ্বায়গ্রস্থ পিতা। আপনি আমাকে রক্ষা করেন। তখন তাকে আমি জিজ্ঞেস করি আপনি এখন কী করবেন, তখন প্রধান শিক্ষক স্বেচ্ছায় কানে ধরে উঠবস করার কথা স্বীকার করেন। পরে আমি তাকে ঘর থেকে বের করে আনি। তখন হেড মাস্টার কানে ধরে উঠ বস করে। হ্যাঁ, তখন আমি এলাকাবাসীর জন্য পরিস্থিতি সামাল দিতে আঙ্গুল দিয়ে উঠ বস করতে বলেছিলাম।
সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে সেলিম ওসমান বলেন, ‘আমার লোকজন কী হাতে চুড়ি পরে আছে?’ এ কথা বলতেই অনুসারীরা চিৎকার করে বলেন, ‘আমরা আছি, শুধু অর্ডার দেন।’
তখন সেলিম ওসমান পাল্টা উত্তরে বলেন, ‘আমি নারায়ণগঞ্জকে অশান্ত করতে চাই না। বন্দরের ঘটনার কারণে যদি আমার ফাঁসিও হয় তাহলে কেউ কোনো প্রতিবাদ করবে না। যে শাস্তি হোক আমি মাথা পেতে নিব।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা, জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক আবুল জাহের, বন্দর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিএনপির নেতা আতাউরর রহমান মুকুল, গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ এর সহ সভাপতি জিএম ফারুক, এফবিসিসিআই এর পরিচালক ও বাংলাদেশ ক্লথ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রবীর কুমার সাহা, বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লিটন সাহা, বাংলাদেশ হোসিয়ারী অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাজমুল আলম সজল, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ সভাপতি মঞ্জুরুল হক, আবদুস সোবহান, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আনিসুর রহমান মিঞা প্রমুখ।
সূত্রঃ বাংলামেইল