রাজধানীর বিশেষায়িত হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা দেওয়া হবে বল জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। রোববার (২৫ জুলাই) দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কনভেনশন সেন্টারে নির্মাণাধীন ফিল্ড হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

করোনা মহামারির মধ্যেই ডেঙ্গুর হানায় পরিস্থিতি বেসামাল হচ্ছে। কোভিড রোগীদের সঙ্গে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা করা সম্ভব নয়। এ অবস্থায় সলিমুল্লাহ, আহসানুল্লাহ মেডিকেলসহ রাজধানীর নির্দিষ্ট বেশ কয়েকটি বিশেষায়িত হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা দেওয়া হবে।

করোনার টিকা নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের আট কোটি ভ্যাকসিন রাখার সক্ষমতা আছে। আগামী দিনে প্রতি মাসে এক কোটি লোককে ভ্যাকসিন দেওয়ার পরিকল্পনায় কাজ করছি।

জাহিদ মালেক বলেন, সারা দেশে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়া ও স্বাস্থ্যবিধি না মানাই সংক্রমণ বাড়ার বড় কারণ। গ্রামের চিত্র আশঙ্কাজনক। আক্রান্তদের ৭৫ শতাংশই গ্রাম থেকে আসা, যাদের সবাই বয়স্ক, ভ্যাকসিনও নেননি।

তিনি বলেন, যে হারে রোগী আসছে, বেডের সংকট দেখা দিতে পারে। আগামী শনিবার (৩১ জুলাই) বিএসএমএমইউ ফিল্ড হাসপাতাল উদ্বোধন করে রোগী নিতে পারব।

তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে চাপ কমাতে সংক্রমণ কমাতে হবে। সংক্রমণ বেড়ে গেলে হাসপাতালে জায়গা দেওয়া যাবে না। কিন্তু মানুষ যেভাবে ঘুরছে, তাতে সংক্রমণ রোধ করতে আরও সময় লেগে যেতে পারে।

শনিবার (২৪ জুলাই) দেশে ২৪ ঘণ্টায় প্রথমবারের মতো ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা একশো ছাড়িয়েছে। যা একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী হাসপাতালে ভর্তি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১০৪ জন, যাদের সবাই রাজধানীর। চলতি মাসে এখন পর্যন্ত হাসপাতালে মোট ভর্তি রোগী ১ হাজার ২০২ জন।

আর জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ১ হাজার ৫৭৪ জন। এর মধ্যে বর্তমানে সারা দেশে ভর্তি রোগী ৪২২ জন। ঢাকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৪১৯ জন, আর অন্য বিভাগে ৩ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হওয়া ১০৪ জন রোগীর মধ্যে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে ৩১ জন ও বেসরকারি হাসপাতালে ৭৩ জন ভর্তি রয়েছেন। সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালগুলোর মধ্যে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে ২১ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে পাঁচজন ও সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৯ জন।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে শনিবার (২৪ জুলাই) পর্যন্ত রাজধানীসহ সারা দেশে মোট ১ হাজার ৫৭৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ হাজার ১৪৯ জন।

প্রতিবছর বর্ষাকালেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোতে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ দেখা দেয়। ২০১৯ সালে দেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়েছিল। দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৩০০ মানুষ প্রাণ হারান। তবে সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ১৭৯। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, ওই বছর সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে আবাসস্থল নিয়মিত পরিষ্কার রাখার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বলেছে, এডিস মশা যেহেতু অভিজাত এলাকায়, বড় বড়, সুন্দর সুন্দর দালান কোঠায় বসবাস করে ও সেখানে থাকা স্বচ্ছ পরিষ্কার পানিতে ডিম পাড়ে তাই এসব আবাসস্থল নিয়মিত পরিষ্কার রাখা এ রোগের বিস্তার রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ।

আর মশার আক্রমণ থেকে বাঁচতে ঘরের দরজা ও জানালায় মশারির নেট লাগানোর ওপর জোর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রয়োজনে দিনের বেলায় ঘুমালে অবশ্যই মশারি টাঙ্গিয়ে বা কয়েল জ্বালিয়ে ঘুমাতে বলেছে।

SO/N

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে