দেশে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত মোট ৩ হাজার ৯০১ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে জুন মাস পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন মাত্র ৩৭২ জন। হঠাৎ করে জুলাই মাসে রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে বাড়তে থাকে। জুলাই মাসে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ২ হাজার ২৮৬ জনে। অর্থাৎ বছরের শুরু থেকে জুন মাস পর্যন্ত যে সংখ্যক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তার তুলনায় ছয় গুণেরও বেশি রোগী কেবল জুলাই মাসেই ভর্তি হন।

চলতি আগস্ট মাসের প্রথম পাঁচ দিনেই দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে এক হাজার ২৪৩ জন অর্থাৎ গড়ে প্রতিদিন দুই শতাধিকের বেশি রোগী ভর্তি হন। বর্তমানে সারাদেশের হাসপাতালে এক হাজার ৫৫ জন ভর্তি রোগীর মধ্যে রাজধানীর সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে এক হাজার ১২ জন রয়েছেন। আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৪৩ জন। সে হিসাবে প্রায় ৯৬ শতাংশ ডেঙ্গু রোগী রাজধানীর বাসিন্দা।

এদিকে, কেবল ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তা নয়, হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ঢাকায় আটজন ও ঢাকার বাইরে দুইজন রয়েছেন। ঢাকার আট জনের মধ্যে ঢাকা শিশু হাসপাতালে চারজন, ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে তিনজন ও স্কয়ার হাসপাতালে একজনের মৃত্যু হয়। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃতদের অধিকাংশই শিশু। তবে চলতি মৌসুমে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১০ জনের মৃত্যু হলেও তাদের কেউই ডেঙ্গুতে মারা গেছেন বলে সরকারিভাবে নিশ্চিত করা হয়নি।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, ডেঙ্গু সন্দেহে যাদের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায় তাদের মৃত্যু প্রকৃতপক্ষেই ডেঙ্গুতেই হয়েছে কি-না সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে মৃত রোগীর বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত (নাম, ঠিকানা, বয়স, কোন হাসপাতালে কতদিন ভর্তি ছিলেন, কী চিকিৎসা পেয়েছেন, অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত ছিলেন না, কবে মারা গেছেন) স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়। এরপর ডেঙ্গু সন্দেহে মৃতদের তথ্য-উপাত্ত বিশেষজ্ঞ ডেঙ্গু পর্যালোচনা কমিটির মাধ্যমে পর্যালোচনা করে আইইডিসিআর।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. মোহাম্মদ কামরুল কিবরিয়ার পাঠানো ডেঙ্গু সংক্রান্ত নিয়মিত বুলেটিনেও ডেঙ্গু সন্দেহে ১০টি মৃত্যুর তথ্য আইইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে বলে জানানো হয়। কিন্তু এখনো একটি মৃত্যুরও পর্যালোচনা প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি বলে সেখানে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে ডেঙ্গু মশার প্রকোপ কমাতে দুই (উত্তর ও দক্ষিণ) সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম ও ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস নিজেরা সরেজমিন দৌঁড়-ঝাপ করছেন এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়ে চলেছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছেন। ডেঙ্গু মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংসে কাজ করছে মশক নিবারণ দফতর।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) পর্যন্ত রাজধানীসহ সারাদেশে সর্বমোট ৩ হাজার ৯০১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২ হাজার ৮৩৬ জন রোগী। হাসপাতালে ভর্তি মোট রোগীদের মধ্যে জানুয়ারিতে ৩২ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৯ জন, মার্চে ১৩ জন, এপ্রিলে তিন জন, মে’তে ৪৩ জন, জুনে ২৭২ জন এবং জুলাইয়ে ২ হাজার ২৮৬ জন এবং ৫ আগস্ট পর্যন্ত ১ হাজার ২৪৩ জন রোগী ভর্তি হন।

স্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু মশার প্রকোপ কমাতে ব্যক্তি ও পারিবারিক পর্যায়েসহ ব্যাপক গণসচেতনতা প্রয়োজন। সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি ব্যক্তি ও পারিবারিক পর্যায়ে সচেতন হয়ে ডেঙ্গু মশার উৎপত্তিস্থলে যেন পানি জমে না থাকে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। তা না হলে ডেঙ্গু মশার প্রজনন বাড়বে, আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যু বাড়বে বলে তারা আশঙ্কা করেন।

ডেঙ্গুতে মৃত্যু পর্যালোচনা সম্পর্কে জানতে চাইলে আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর হোসেন বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুরোধ নিয়ে ব্যাপক ব্যস্ততার কারণে ডেঙ্গু সন্দেহে মৃতদের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে পর্যালোচনা কমিটি এখনো সভা করতে পারেনি।

তিনি বলেন, একটি মৃত্যু পর্যালোচনা করতে বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যদের সবাই বসে অনেক তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখতে হয়। সর্বোপরি করোনার কারণে সভা হতে দেরি হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

Jag/N

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে