ডিমলা (নীলফামারী) থেকেঃ নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ছিটমহল বিনিময়ের পর তৃতীয় বর্ষ পূর্তি পালন করেছেন বিলুপ্ত ছিটমহলবাসী। বিলুপ্ত ছিটমহলগুলো বাংলাদেশের মূল ভূ-খন্ডের সাথে যুক্ত হওয়ায় বর্তমান বদলে গেছে এ দেশের মানচিত্র। তৃতীয় বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে ৩১ জুলাই রাত ১২ টা ১ মিনিটে উপজেলার ২৮ নং বড় খানকি ছিটমহলের শহীদ মিনারের পাদদেশে ফুলের মালা বানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে নতুন নাগরিকরা।

পরে ছিটমহলের মানুষেরা এ দেশ থেকে ৬৮ বছর বঞ্চিত থাকায় ও ছিটমহল বিনিময়ের ৩ বছর উপলক্ষে ৬৮ টি মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে দেশ, জাতি সবার কল্যাণে বিশেষ মোনাজাত করে তারা। এদিকে বুধবার সকালে ৩১ নং বিলুপ্ত নগর জিগাবাড়ী ছিটমহলের কমিউনিটি সেন্টার চত্ত্বর থেকে একটি বিজয় র‌্যালী বের হয়ে বিলুপ্ত ছিটমহলের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়। র‌্যালীতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা. নাজমুন নাহার মুন, টেপাখড়িবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহিন, গয়াবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান শরিফ ইবনে ফয়সাল মুন, খগাখড়িবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম লিথন, উপজেলা সরবারী উন্নয়ন প্রকল্প (ইউজিডিপি)’র সম্বয়কারী বিভা রায়, ৩১ নং বিলুপ্ত ছিটমহলের সভাপতি ডাক্তার রফিকুল ইসলাম, ২৮ নং বিলুপ্ত সিটমহলের সভাপতি ফরহাদ হোসেনসহ বিলুপ্ত ছিটমহলের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও বিলুপ্ত সিটমহলবাসীরা অংশ গ্রহন করেন।

উল্লেখ্য, ১৯৭৪ এর স্থল সীমান্ত চুক্তি (মুজিব-ইন্দীরা চুক্তি) বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্য রাতে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে রয়ে যাওয়া ছিটমহলগুলো বিনিময় করা হয় ১৬২ টি ছিটমহলের। ফলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ভারতীয় ১১১ টি ছিটমহল বাংলাদেশের ভূখন্ড এবং ভারতের অভ্যান্তরে থাকা মাত্র ৫১ টি ছিটমহল ভারতের ভূখন্ডে হয়ে যায়। বাংলাদেশের ভূখন্ডে অধিভুক্ত হওয়ার মাত্র ৩ বছরের মাথায় দৃশ্যমান পরিবর্তন এসেছে ডিমলার ৪ ছিটমহলের মানুষের জীবনে। বিলুপ্ত ছিটমহলগুলোতে শুরু হয় সরকারের উন্নয়ন যজ্ঞ।

ঘরে-ঘরে জ্বলছে বিজলী বাতি, চারিদিকে চলছে এখন রাস্তা পাকাকরণের কাজ, গড়ে উঠেছে নতুন-নতুন স্কুল-কলেজ, ছিটমহলের প্রতিটি পরিবার ব্যবহার করছে স্যানিটারী ল্যাট্রিনসহ সরকারী গভির নলকুব, এখন দও বেধে শিশুরা ছুটছে স্কুলের দিকে এমনই চিত্র এখন নীলফামারীর ডিমলায় চারটি বিলুপ্ত ছিটমহলগুলোতে। নাগরিকত্ব ও মৌলিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রাস্তা-ঘাট এবং বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো উন্নয়নসহ সরকারের নানামূখী পদক্ষেপে এখন আনন্দে উদ্বেলিত পিছিয়ে থাকা এই ছিটমহলবাসী। এতে দুই দেশেরই মানচিত্র পাচ্ছে পূর্ণতা আর ছিটমহলবাসী পেয়েছে দীর্ঘ ৬৮ বছরের অবরুদ্ধ জীবন থেকে মুক্তি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে