ডেস্ক রিপোর্টঃ লেয়ার ও বয়লার মুরগি পালনের বিকল্প হিসেবে টার্কি মুরগি পালন করে লাভবান হচ্ছেন স্থানীয় খামারীরা। যেখানে লেয়ার বা বয়লার মুরগিকে ফিড খাওয়ানোর ক্ষেত্রে একজন পোল্ট্রি খামারীকে হিমশিম খেতে হয়। সেখানে ফিডের পরিবর্তে সবুজ ঘাঁস শাক-সবজি, লতা-পাতা হচ্ছে টার্কির জন্য উত্তম খাবার।
এমনটি জানিয়েছেন, স্থানিয় টার্কি পালনকারী খামারীরা। জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার পশ্চিম ধুরইল গ্রামে ১০টি পরিবারে এখন পালিত হচ্ছে টার্কি। এ গ্রামের টার্কির খামার দেখে উৎসাহিত হচ্ছেন প্রতিবেশীরা। পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের প্রাণিসম্পদ ইউনিটের আর্থিক সহযোগিতায় স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জাকস ফাউন্ডেশনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এ টার্কি পালন ও সম্প্রসারণের কাজ চলছে।
খুলনা এলাকা থেকে টার্কির বাচ্চা সংগ্রহ করে তা মাচা ও লিটার পদ্ধতিতে সম্প্রসারণের কাজ হাতে নিয়েছে জাকস ফাউন্ডেশন। এরই ধারাবাহিকতায় জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার ধুরইল গ্রামের দশ খামারিকে বিনামূল্যে ২০টি করে টার্কির বাচ্চা সরবরাহ করা হয়। গত ৬ মাস প্রতিপালনের পর এক একটি টার্কির ওজন হয়েছে ৬/৭ কেজি। এক বছর লালন-পালন করলে এক একটি টার্কি মুরগির ওজন হবে ১২ থেকে ১৪ কেজি বলে জানান টার্কি চাষি সিরাজুল ইসলাম। এর উচ্চতাও সাধারণত তিন থেকে সাড়ে তিন ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। বছরে ডিম পারে ১৮০টির মতো। টার্কি দেখতেও বেশ চমৎকার। মোরগ টার্কিগুলো স্বভাবগতভাবে যখন ময়ুরের মতো পেখম তোলে তখন দৃষ্টি কাড়ে সকলের। লেয়ার ও ব্রয়লার মুরগির তুলনায় টার্কির রোগ-বালাই নেই বললেই চলে এবং লালন-পালনের খরচ অনেক কম বলে জানালেন খামারীরা।
টার্কি মুরগির খাবার খরচও কম। তাদের প্রিয় খাবারের মধ্যে রয়েছে নেপিয়ার ঘাঁস, কলমী শাক, পাতাকপিসহ সকল ধরনের সবুজ শাক-সবজি ও লতা-পাতা। সারাদিনে তাদের দেয়া হয় সামান্য পরিমাণ পোল্ট্রি ফিড। না দিলেও তেমন কোন ক্ষতি নেই।
টার্কি খামারী সিরাজুল ইসলাম, এনামুল হক ও আইয়ুব আলীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাধারণ মুরগির তুলনায় টার্কি মুরগি দ্রুত বাড়ে। তুলনামূলক ৫০টি বয়লার মুরগির খাবার ফিড দিয়ে ১ হাজার টার্কি পালন করা সম্ভব বলে জানান খামারীরা। ফলে স্বল্প সময় ও কম খরচে মাংস ও ডিম উৎপাদন করে খামরিরা লাভবান হচ্ছেন । তাছাড়া মোরগ টার্কিগুলো ময়ুরের মতো পেখম তুলে ভাব প্রদর্শন করে যা অনেকের দৃষ্টি কাড়ে। অনেক দূর থেকে লোকজন দেখতে এসে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করছেন টার্কি খামার গড়ে তোলার জন্য।
জাকস ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক (কৃষি) ওবায়দুল ইসলাম জানান, ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ টার্কির মাংসে কোলস্টেরলের পরিমাণ কম তবে গরুর মাংসের চেয়ে এতে বেশি প্রোটিন পাওয়া যায়। প্রতি কেজি টার্কির মাংস ৫০০ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে বর্তমান বাজারে। দেশের অভিজাত রেস্টুরেন্টেও এর ব্যাপক চাহিদা থাকায় এটি সম্প্রসারণের কাজ চলছে।
পাঁচবিবি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মামুনুর রশিদ বলেন, টার্কি সম্প্রসারণে সার্বিক সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে আসছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ। তিনি আরো বলেন, টার্কি মুরগী লালন-পলন সহজ, লাভজনক এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ। ইতোমধ্যে ৫০০ টাকা কেজি দরে টার্র্কি মুরগি বেচাকেনা শুরু হয়েছে। টার্কি মুরগির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় টার্কি চাষ সম্প্রসারণে ১০টি টার্কির ডিম প্রদর্শনী খামার গড়ে তোলা হয়েছে। পাশাপাশি ৪ হাজার ডিম ফুটানোর ক্ষমতাসম্পন্ন একটি হ্যাচারী স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান জাকসের নির্বাহী পরিচালক নুরুল আমীন।

বি/এস/এস/এন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে