বেশ কিছু খাদ্য আছে যেগুলি মাত্রাতিরিক্ত হারে গ্রহণ করলে হজম হতে দেরি হয়। ফলে আমাদের মেটাবলিজম প্রক্রিয়া অর্থাৎ খাদ্য গ্রহণ শোষণ এবং আত্তীকরণের যে প্রক্রিয়া তা ঢিমে হয়ে যায়। উদাহরণ হিসেবে মাংস, রসুন, পেঁয়াজের কথা বলা যায়। এছাড়া ভাজাভুজি, ফাস্টফুডের কথাও বলা দরকার। এমনিতে শীতকালে আবহাওয়ার কারণে আমাদের শরীরের মেটাবলিক রেটের একটা ভারসাম্য থাকে। ফলে ফ্যাটজাতীয় খাদ্য খেলেও হজম হয়ে যায়। গ্রীষ্মকালে এই প্রক্রিয়া বাধা পায়। এই কারণে ভাজাভুজি বা ফ্যাটজাতীয় খাদ্য খেলে দ্রুত হজম হয় না। মেটাবলিজম প্রক্রিয়া ঢিমে হলে শরীরে অস্বস্তি তৈরি হয় যা পরোক্ষে প্যারাসিমপ্যাথেটিক নার্ভকে উদ্দীপিত করে। প্যারাসিমপ্যাথেটিক নার্ভের সঙ্গে ব্রেনের সরাসরি যোগ রয়েছে। প্যারাসিমপ্যাথেটিক নার্ভ উদ্দীপিত বেশ কিছু প্যারাসিমপ্যাথেটিক হর্মোন ক্ষরণ হয়। এই হর্মোনগুলির কারণে আমরা আবেগ ধরে রাখতে পারি না। রাগ প্রকাশ করে ফেলি। অতএব আমাদের দেখতে হবে কোন কোন খাদ্য প্যারাসিমপ্যাথটিক নার্ভকে উদ্দীপিত করে তোলে?

মাংস, পেঁয়াজ, রসুন ছাড়াও আরও কিছু খাদ্য আছে যেগুলি প্যারসিমপ্যাথেটিক নার্ভকে উদ্দীপিত করে যেমন লঙ্কা এবং ক্যাপসিকাম। এই ধরনের খাদ্যের মধ্যে থাকে ক্যাপসাসিন নামে উপাদান। খেয়াল করলে দেখবেন, ব্যথার স্প্রে এবং মলমে থাকে ক্যাপসাসিন উপাদানটি। এই উপাদানটির থাকার কারণেই ত্বকে এই ধরনের ব্যথানাশক মলম এবং স্প্রে প্রয়োগ করলে ওই জায়গাটি গরম হয়ে ওঠে এভং জ্বালা জ্বালা করে! ঠিক এই কারণেই মরিচ এবং ক্যাপসিকাম জাতীয় খাদ্য অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে আমাদের অস্বস্তি হয়। কারণ ক্যাপসাসিন পাকস্থলীর দেওয়ালে পীড়ন তৈরি করে। এছাড়া নাইট্রেটজাতীয় খাদ্য প্যারাসিমপ্যাথটিক নার্ভকে উদ্দীপিত করে তোলে। যে কোনও ধরনের মাংসে নাইট্রেট বেশি থাকে।

এছাড়া লবঙ্গ, দারচিনির মতো মশলা মাত্রাতিরিক্ত হারে খেলেও আমাদের শরীরে অস্বস্তিভাব প্রকট হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। এমনিতে দারচিনি লবঙ্গের মতো মশলায় যে এসেনশিয়াল অয়েলগুলি থাকে সেগুলি শরীরের পক্ষে ভালো। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত কোনওকিছুই শরীরে পক্ষে ভালো হতে পারে না। ফলে স্টমাকে এই ধরনের এসেনশিয়াল অয়েল বেশি পরিমাণে ঢুকলে পীড়ন শুরু হয়। এই পীড়নকে প্রতিহত করার জন্য প্যারাসিমপ্যাথেটিক নার্ভকে উদ্দীপিত হতে হয়। আর প্যারাসিমপ্যাথেটিক নার্ভের সঙ্গে যোগ রয়েছে ব্রেনের। তাই মাত্রাতিরিক্ত মশলাদার খাবার খেলে তা পরোক্ষে মাথা গরমের কারণ হতে পারে।
প্যারাসিমপ্যাথেটিক নার্ভ উদ্দীপিত হওয়ার পিছনে আরও একটি কারণ হল, ঠিক সময়ে খাবার না খাওয়া। খেয়াল করলে দেখবেন খিদে পেলে আমাদের খুব অস্থির লাগে। এর কারণ হল, আমাদের ব্রেনে হ্যাংগার সেন্টার আছে। খাদ্যের অভাবে যত এই হ্যাংগার সেন্টার উদ্দীপিত হবে তত বেশি আমাদের শরীরে প্যারাসিমপ্যাথেটিক নার্ভ উদ্দীপিত হবে।

প্রশ্ন হল, হ্যাংগার সেন্টারের সঙ্গে প্যারাসিমপ্যাথেটিক নার্ভের যোগাযোগটা ঠিক কোথায়? খুব সোজা। আমাদের দেহের বিভিন্ন অঙ্গের কার্যকলাপ সঠিকভাবে চালাতে দরকার গ্লুকোজের। বিশেষ করে ব্রেনের কোষগুলিতে প্রতিনিয়ত গ্লুকোজের সরবরাহ থাকা দরকার। তাই শরীর চায় রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে। এদিকে গ্লুকোজ মেলে খাদ্য থেকে। কিন্তু কোনও কারণে দেহে গ্লুকোজের মাত্রা কমে গেলে শরীরের কাজকর্ম চালানো মুশকিল হয়ে পড়বে। তাই তখন প্যারাসিমপ্যাথেটিক স্নায়ু উদ্দীপিত হয়। কারণ প্যারাসিমপ্যাথেটিক নার্ভ উদ্দীপিত হলে তবেই গ্লুকাগন নামে হর্মোন নির্গত হয়। এই হর্মোন তখন শরীরের বিভিন্ন জায়াগায় জমে থাকা (লিভার ও পেশি) গ্লাইকোজেনকে রূপান্তরিত করে গ্লুকোজে। ঠিক এই কারণেই তাই গ্রীষ্মকালে নুন-চিনির পানি পান করতে বলা হয়। নুন লাগে কারণ গ্লুকোজ একা শরীরে শোষিত হতে পারে না। নুনের অনুষঙ্গের প্রয়োজন হয়। তবে সবার পক্ষে নুন চিনির পানি বারবার পান করা সম্ভব নয়। কারণ বার বার নুনচিনির পানি পান করলে বাড়তি গ্লুকোজ শরীরে ঢোকার আশঙ্কা থাকে যা শরীরে ট্রাইগ্লিসারাইডস-এর মাত্রা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। সেক্ষেত্রে ঘণ্টাদুয়েক অন্তর মরশুমি ফল খান।

কী খাবেনঃ মেলাটোনিন, সেরাটোনিন জাতীয় উপাদান যে ধরনের খাদ্যে বেশি থাকে, সেগুলি আমাদের মনমেজাজ ভালো রাখতে সাহায্য করে। মেলাটোনিন এবং সেরাটোনিন আমাদের ভালো এবং গভীরভাবে ঘুমোতে সাহায্য করে। ফলে আমাদের স্নায়ুর সমস্যা দূরে থাকে। মেজাজও ভালো থাকে। দুধে মেলাটোনিন বেশি থাকে। তবে গরমের সময় ঠান্ডা দুধ খাওয়াই ভালো। এছাড়া কাঁঠালি কলাতেও মেলাটোনিন থাকে বেশি। আলু ও ভাতেও রয়েছে মেলাটোনিন। এই কারণে পেট ভরে ভাত খেলে ভালো ঘুম হয়।

র্যাপ্ত পানি পান করবেন। তবে এই সময় দরকার ফল খাওয়া। কারণ ফলে থাকে ফ্ল্যাভোনয়েডস এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেমেন্ট। এই উপাদানগুলি শরীর থেকে ক্ষতিকর পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে। স্নায়ুর বিভিন্ন সমস্যাও দূরে রাখে। তাই এই সময়ে কাঁচা আম, বেল, তরমুজ, জামরুল, কালোজাম খেতে পারেন। বেলে থাকা উপকারী ফাইবার যা শরীর টক্সিক পদার্থ বের করে দিতে সক্ষম। এছাড়া খেতে পারেন পাতিলেবু। পাতিলেবুর সাইট্রিক অ্যাসিড আমাদের মেটাবলিক সাইকেল ঠিক রাখার ক্ষেত্রে কার্যকরী। মেটাবলিক সাইকেল ঠিক থাকলে চট করে ক্লান্তি আসে না। গ্রীষ্মকালে ক্লান্তি দূরে রাখা দরকার। কারণ মারাত্মক ক্লান্তি থেকেও বিরক্তি আসে আমাদের। চরম শ্রান্তিও প্যারসিমপ্যাথেটিক নার্ভ উদ্দীপিত করার পিছনে অন্যতম অনুঘটক।
শাকসব্জি খান বেশি করে। শাকসব্জিতে থাকা উপকারী ফাইবার ও ভিটামিন মেটাবলিজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখে। শরীর থেকে টক্সিক পদার্থ দূর করে। শরীর ঝরঝরে থাকে। মেজাজও ভালো রাখে।

খেতে পারেন লাল চা ও দই। কারণ চা’য়ে থাকে এল-থিয়ানিন। এই যৌগটি স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। অন্যদিকে দইয়ে থাকে ট্রিপটোফ্যান নামে অ্যামাইনো অ্যাসিড যা স্নায়ু ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।

পিবিএ/এমআর

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে