ডেস্ক রিপোর্টঃ একাদশ জাতীয় সংসদ ও চতুর্থ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন পরিচালনার জন্য এক হাজার ২৭৮ কোটি টাকা চেয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

পাশাপাশি ভোটার সংক্রান্ত আইডিইএ প্রকল্প বাস্তবায়নসহ অন্য খাতে আরও ১ হাজার ২২৮ কোটি টাকার ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে নির্বাচন পরিচালনা ব্যয়সহ নানা খাতে আড়াই হাজার কোটি টাকা আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দিয়েছে ইসি।সম্প্রতি অর্থ সচিব বরাবর এ প্রস্তাব পাঠিয়েছেন নির্বাচন কমিশন সচিব। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, নির্বাচন কমিশন অনুকূলে আগামী বাজেটে ১ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দের সিলিং দেয়া হয়েছে।

এরপরও নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করা হবে। প্রয়োজন হলে বরাদ্দের পরিমাণ আরও বাড়ানো হবে।অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রস্তাব সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, উন্নয়ন প্রকল্প সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন, একাদশ জাতীয় সংসদ ও চতুর্থ ইউপি নির্বাচনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দের সিলিংয়ের চেয়ে অতিরিক্ত আরও ১ হাজার ৩৬০ কোটি টাকার প্রয়োজন।

বাড়তি এ অর্থ আসন্ন বাজেটে বরাদ্দ দেয়ার জন্য তিনি সুপারিশ করেছেন।ইসি সূত্রমতে, আগামী ২৮ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এ তারিখ থেকে ৪৫ দিন হাতে রেখে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে তফিসিল ঘোষণা করা হতে পারে।এ জন্য একটি নির্বাচনী রোডম্যাপও তৈরি করা হয়েছে। রোডম্যাপ অনুযায়ী রমজানের পর জুলাইয়ে নির্বাচন ঘিরে মহাকর্মযজ্ঞ শুরু হবে।

কাজের মধ্যে রয়েছে- ভোটার তালিকা তৈরি, নির্বাচনী আইন সংস্কার, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক ও এনজিওর সঙ্গে ইসির সংলাপ, নতুন দলের নিবন্ধন এবং ডিজিটাল ভোটিং মেশিন বা ডিভিএম-ইভিএম প্রস্তুতকরণের কাজ। পাশাপাশি ভোটার আইডি কার্ড ও স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হবে।নির্বাচন সংক্রান্ত আনুষঙ্গিক ব্যয় ৪০৭ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। এ ছাড়া অননুমোদিত প্রকল্পের জন্য আগামী বাজেটে থোক বরাদ্দ হিসেবে ৪১৪ কোটি টাকা এবং আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর ইনহেনসিং একসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৪০৭ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।

সূত্রমতে, আইডিইএ প্রকল্পের মাধ্যমে ১০ কোটি নাগরিককে জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া হবে। এ জন্য স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র প্রস্তুত ও বিতরণের জন্য ১০ কোটি আঙুলের ছাপ ও দুই চোখের আইরিশ নেয়া হবে।এসব কার্যক্রম পরিচালনার ব্যয়ও ধরা হয়েছে। এ ছাড়া এ প্রকল্পের আওতায় ডাটাবেজ আপডেট, ম্যাচিং, মৃত ভোটাদের নাম বাদ ও ডাটা সেন্টার সংরক্ষণ করা হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশনের আসন্ন বাজেটে ১ হাজার ১৪৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বরাদ্দের সিলিং দেয়া হয়েছে। ফলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ এবং নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী ঘাটতি অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা।ঘাটতি অর্থ চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো প্রস্তাবে বলা হয়, প্রকল্প সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন, একাদশ জাতীয় সংসদ ও ইউপি নির্বাচন যথাযথ অনুষ্ঠানের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের দেয়া সিলিংয়ের চেয়ে আরও ১৩৬০ কোটি টাকা আসন্ন বাজেটে সংস্থান রাখতে হবে।

জানা গেছে, ইসির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল আইডিইএ প্রকল্প। নির্বাচনের আগে এ প্রকল্পের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র, স্মার্টকার্ড দেয়া হবে।এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অতিরিক্ত অর্থের বিষয়টি নিয়ে একাধিক বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিভিন্ন সফটওয়্যার সাপোর্ট সার্ভিস, ল্যাপটপ কম্পিউটার ও চোখের আইরিশ স্ক্যানার ক্রয়ে ১১৭ কোটি টাকা দেয়ার সুপারিশ করা হয়।এ ছাড়া ফেব্র“য়ারিতে আইডিইএ জনবল নিয়োগ সংক্রান্ত কমিটির একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকের সুপারিশ অনুযায়ী অতিরিক্ত আরও ৮৪ কোটি টাকা দেয়ার প্রস্তাব করা হয়।

নির্বাচন কমিশনের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, জাতীয় নির্বাচন পরিচালনার সময় ধরা হয়েছে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত।এ সময়ের মধ্যে নানা ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা হবে। ইতিমধ্যে ভোট গ্রহণের জন্য ডিজিটাল ভোটিং মেশিন প্রস্তুত করা হচ্ছে। এখানে বড় ধরনের ব্যয় হচ্ছে।পাশাপাশি চলতি মাস থেকে আগস্টের মধ্যে নির্বাচনী মালামাল সংগ্রহ করা হবে। তফসিল ঘোষণার আগে ব্যালট বক্স, সিল সংগ্রহ করা হবে।

এ ছাড়া আগস্টের মধ্যে প্রার্থীদের নির্বাচনী এলাকা অনুযায়ী ছবি ছাড়া ভোটার তালিকার সিডি প্রস্তুত করে মাঠপর্যায়ে পাঠানো হবে। প্রতিটি পদক্ষেপের সঙ্গে অর্থ জড়িত।ফলে আগামী জুনে প্রস্তাবিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে এ জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না রাখা হলে বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হবে।

 

 

 

 

 

 

 

J/N.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে