হাকিকুল ইসলাম খোকন, যুক্তরাষ্ট্র সিনিয়র প্রতিনিধিঃ উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য জাতিসংঘে উত্থাপিত একটি প্রস্তাব আটকে দিয়েছে এশিয়ার পরাশক্তি চীন ও ক্ষমতাধর রাষ্ট্র রাশিয়া। সাম্প্রতিক সময়ে পূর্ব এশিয়ার এই পারমাণবিক শক্তিধর দেশটির দফায় দফায় মিসাইল উৎক্ষেপণের জবাবে উ. কোরিয়ার পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জাতিসংঘে প্রস্তাবটি তুলে যুক্তরাষ্ট্র। কূটনীতিকদের বরাতে বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) করা প্রতিবেদনে তথ্যটি জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি সপ্তাহে পিয়ংইয়ং ট্যাকটিক্যাল গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করার পর উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে বৃহস্পতিবার রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। মূলত সেখানেই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত পাঁচ উ. কোরীয় নাগরিকের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনের প্রস্তাব আটকে দেয় বেইজিং ও মস্কো। উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে গত দুই সপ্তাহের মধ্যে জাতিসংঘে দ্বিতীয় বৈঠক ছিল এটি।

বিশ্লেষকদের মতে, চীন এবং রাশিয়া জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য। আর তাই যে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষেত্রে তাদের সম্মতির প্রয়োজন। অবশ্য এই দুটি দেশই, সাম্প্রতিক সময়ে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জোরদার করার পরিবর্তে শিথিল করার আহ্বান জানিয়েছে।

আল-জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, চীন ও রাশিয়া অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের আনা নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাবটিকে পুরোপুরি বাতিল না করে ‘আটকে’ রেখেছে। এর ফলে জাতিসংঘের মাধ্যমে উত্তর কোরিয়ার ওপর ওয়াশিংটনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের তৎপরতা অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে গেল।কূটনীতিকদের বরাতে কাতারভিত্তিক মিডিয়াটি জানিয়েছে, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৃহস্পতিবারের ওই রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বেইজিংয়ের দাবি ছিল, নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি বিশ্লেষণের জন্য আরও সময়ের প্রয়োজন। অন্যদিকে মস্কো বলছে, নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবকে সমর্থন করতে হলে আরও প্রমাণ থাকা প্রয়োজন।

জাতিসংঘের নিয়ম অনুযায়ী- নিরাপত্তা পরিষদের কোনো সদস্য রাষ্ট্রের তোলা যে কোনো প্রস্তাবনা প্রাথমিকভাবে ৬ মাস পর্যন্ত আটকে রাখা যায়। পরবর্তীকালে সেটি স্থায়ীভাবে আলোচনার টেবিল থেকে সরানোর আগে কোনো সদস্য চাইলে আরও ৩ মাস আটকে রাখতে পারে।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের শুরু থেকে দফায় দফায় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়ে আসছে কিমের দেশ উত্তর কোরিয়া। গত ৫ জানুয়ারি বছরের প্রথম মিসাইল পরীক্ষা হিসেবে পারমাণবিক শক্তিধর এই দেশটি নিজের পূর্ব উপকূলে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল। মূলত এর এক সপ্তাহের মাথায় দেশটি দ্বিতীয়বারের মতো শব্দের চেয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন এই মিসাইল পরীক্ষা চালায়।এরপর গেল ১৪ জানুয়ারি উ. কোরিয়া ফের অজ্ঞাত ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে বলে জানায় জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তারা। এক সপ্তাহেরও বেশি কিছু সময়ের মধ্যে সেটি ছিল পূর্ব এশিয়ার দেশটির তৃতীয় দফায় মিসাইল উৎক্ষেপণ। আর এর তিনদিনের মাথায় নিজের পূর্ব উপকূলে একসঙ্গে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে পিয়ংইয়ং।

গত বছরের অক্টোবর মাসের শুরুর দিকে বিমানবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায় উত্তর কোরিয়া। এর আগে শব্দের চেয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন হাইপারসনিক মিসাইলের প্রথম পরীক্ষা চালিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট কিম জং উন। এছাড়া গত সেপ্টেম্বর মাসে পৃথকভাবে ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালানোরও অভিযোগ রয়েছে পিয়ংইয়ংয়ের বিরুদ্ধে।উ. কোরিয়ার মতো অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত দেশ কীভাবে একের পর এক এমন ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে, এরই মধ্যে তা নিয়ে বহু প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। যদিও একের পর এক পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষার জন্য উত্তর কোরিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ একাধিক রাষ্ট্র।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে