আন্তর্জাতিক রিপোর্ট : ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের সঙ্গে অরুণাচল প্রদেশকে যুক্ত করে নির্মাণ করা এক সেতু শুক্রবার উদ্বোধন করা হয়েছে যা ভারতের দীর্ঘতম সড়ক সেতু। এটির মোট দৈর্ঘ্য নয় দশমিক পনের কিলোমিটার।কয়েকটি নদীর উপর দিয়ে যাওয়া ঢোলা সাডিয়া সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ২০১১ সালে।সেতুটি যারা তৈরি করেছে, সেই কোম্পানির একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এত দীর্ঘ একটি সেতুর ডিজাইন তৈরি করা এবং সেটির নির্মাণ কাজ প্রকৌশলীদের জন্য ছিল এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। কিন্তু তারপরও নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এটির কাজ শেষ করা গেছে।
অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে যেহেতু প্রতিবেশী চীনের সঙ্গে ভারতের বিরোধ রয়েছে, তাই এই সেতুটিকে ঐ অঞ্চলে ভারতের সামরিক ও অর্থনৈতিক কর্তৃত্ব সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে এক বিরাট পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।চীন অরুণাচল প্রদেশকে তার নিজের এলাকা বলে দাবি করে এবং তারা এই অঞ্চলটিকে ‘দক্ষিণ তিব্বত’ হিসেবে বর্ণনা করে থাকে।তিব্বতের ধর্মীয় নেতা দালাই লামা যখন সম্প্রতি অরুণাচল প্রদেশ সফর করেন, তখন এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিল চীন। সেখানে ভারতের সামরিক অবকাঠামো সম্প্রসারণের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ জানাচ্ছে চীন।
তবে ভারত বলছে, অরুণাচল প্রদেশ তাদের এবং সেখানে এরকম অবকাঠামো তৈরি করার অধিকার তাদের আছে।ভারতের সহকারী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী খিরেন রিজিজু এই অরুণাচল প্রদেশেরই মানুষ। তিনি বলেছেন, “চীন যখন দিনে দিনে আরও আক্রমণাত্মক মনোভাব দেখাচ্ছে, তখন নিজেদের সীমানা রক্ষায় এরকম ভৌত অবকাঠামো তৈরি করার এটাই উপযুক্ত সময়।”তিনি আরও বলেছেন, অরুণাচল প্রদেশ ভারতের অংশ এবং সেটা কেউ পছন্দ করুক আর না করুক এই বাস্তবতার কোন পরিবর্তন হবে না।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল গগনজিৎ সিং বলেন, “চীনকে যদি কোন যুদ্ধে মোকাবেলা করতে হয়, তাহলে আমাদের এমন অবকাঠামো দরকার যাতে দ্রুত সেখানে সৈন্য এবং রসদ পাঠানো যায়। এই সেতুটি সেদিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”তিনি আরও বলেন, “১৯৬২ সালের যুদ্ধের পর দীর্ঘ সময় ধরে ভারত অরুণাচলে কোন সড়ক অবকাঠামো তৈরি করেনি এই ভ্রান্ত ধারণা থেকে যে চীন যদি আবার কখনো আক্রমণ করে তাদের সৈন্যরা এসব রাস্তাঘাট ব্যবহার করবে। কিন্তু আমার মনে হয় এখন আমরা ঠিক কাজটাই করছি।”ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, চীনের সঙ্গে সীমান্ত প্রতিরক্ষার স্বার্থে সেখানে এরকম অবকাঠামো তৈরি খুব গুরুত্বপূর্ণ।”আমরা শান্তি চাই, কিন্ত সেই শান্তি হতে হবে মর্যাদার সঙ্গে। যারা মনে করে আমরা দুর্বল, তাদের ঠেকানোর সক্ষমতা আমাদের প্রয়োজন।”
তবে এই সেতু নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যেও অনেক উৎসাহ।এলাকার একজন বাসিন্দা গুনজন সাহারিয়া বলেন, ” ছয়টি নদী এসে মিশেছে এমন এক জায়গায় এরকম একটি সেতু তৈরি করা যাবে, সেটি অকল্পনীয় ছিল।”আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোওয়াল বলেন, এটি কেবল একটি সামরিক ব্যাপার নয়। এই সেতু আসাম এবং অরুণাচলের দূর্গম এলাকাগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নেও সহায়ক হবে।নদীর দুই তীরে যারা থাকেন, তাদের যাতায়তের ক্ষেত্রে এখন আগের চেয়ে আট ঘন্টা কম সময় লাগবে।
বি/এস/এস/এন