CbcBWh0VIAAqHMV-300x207

বিডি নীয়ালা নিউজ(২১ই ফেব্রুয়ারী১৬)-ঢাকা প্রতিনিধিঃ হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার সুন্দ্রাটিকি গ্রামে চাঞ্চল্যকর চার শিশুকে শ্বাসরোধে হত্যার রহস্য উন্মোচিত হয়েছে।

পঞ্চায়েত বিরোধের জের ধরে চারটি নিষ্পাপ শিশুকে হত্যা করা হয়। ঘাতকের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির খবরে মুমূর্ষু অবস্থায় থাকা নিহত চার শিশুর পরিবারের সদস্যরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। সেই শিশুদের মা, বাবা ও স্বজনরা এখন শাস্তি হিসেবে ঘাতকদের ফাঁসি চান। একই সঙ্গে হত্যাকারীদের বাঁচাতে এখনো একটি পক্ষ সক্রিয় রয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেন এবং এ নিয়ে যেন কোনো রাজনীতি না করা হয় তার অনুরোধ জানান।

এরই মধ্যে সন্ত্রাসী ও ইভটিজার হিসেবে পরিচিত স্থানীয় ফয়জাবাদ হাইস্কুলের ছাত্র, চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থী রুবেল ঘাতক হিসেবে ধরা  পড়েছে। এতে ফয়জাবাদ স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা স্বস্তি প্রকাশ করেছে। এসব শিক্ষার্থী নিজেদের সহপাঠীর হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছে।

চার শিশু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ধরা পড়ায় তার অপকর্মের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষও মুখ খুলতে শুরু করেছে। এমনকি ঘাতক রুবেল যে স্কুলে অধ্যায়ন করছে সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রসিত কুমার  দেবও রুবেলের নেতিবাচক কার্যক্রমের চিত্র তুলে ধরে বলেন, রুবেল স্কুলে যাওয়া-আসা পথে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের খুবই বিরক্ত করত। এমনকি স্কুলের কয়েকজন ছাত্রকে প্রায়ই রাস্তায় উত্ত্যক্ত করত। বিষয়টি একাধিকবার তার পরিবারকে জানালেও কোনো কাজ হয়নি। এরপরও তার নির্যাতনের মাত্রা আরও বৃদ্ধি পেত। একই স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা নূরে জান্নাত শেফা জানান, নির্মম খুনের ঘটনায় আতঙ্কে স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কমে গিয়েছিল। তবে রুবেলের স্বীকারোক্তি ও গ্রেফতারের খবর প্রচার হওয়ায় শনিবার থেকে স্কুলে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি  বেড়েছে। তবে এখনো পুরো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। কারণ বাকি অপরাধীরা এখনো ধরা পড়েনি। তাদের গ্রেফতার করা হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। তিনি দ্রুত হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। এদিকে অভিভাবকরা অবিলম্বে ঘাতকদের ফাঁসি দাবি করে বলেন, তাদের শিশুদের যেভাবে হত্যা করা হয়েছে ঘাতকদেরও যেন সেভাবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তাদের মতে, ঘাতকদের এমন শাস্তি দেওয়া উচিত যেন ভবিষ্যতে এমন নির্মম ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। আর কোনো মাকে যেন সন্তান হারাতে না হয়। কোনো বাবাকে যেন পুত্রশোকে কষ্ট পেতে না হয়। কোনো ভাই-বোন যেন এই কষ্টে না ভোগেন।

নিহত প্রথম শ্রেণির ছাত্র মনিরের পিতা আবদাল মিয়া জানান, ‘আমরা তো আর কখনো আমাদের সন্তানদের ফিরে পাব না। আমার নিষ্পাপ শিশুকে যেভাবে হত্যা করেছে ঘাতকদের ঠিক সেভাবে মৃত্যু কামনা করি। সরকার ও প্রশাসনের কাছে একটাই দাবি, এদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনার ব্যবস্থা করা হোক।’

নিহত শিশু জাকারিয়া আহমেদ শুভর পিতা ওয়াহিদ মিয়া আজও কান্নাজড়িত কণ্ঠে পুত্রকে ডাকছেন। তিনি  বার বারই মূর্ছা যাচ্ছেন। কিছুতেই যেন পুত্রশোক ভুলতে পারছেন না।

এদিকে তালুকদার পঞ্চায়েতের সরদার অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক আবদুল খালেক জানান, আমরা ভাবতেও পারিনি এত বড় নির্মম ঘটনা আমাদের গ্রামে ঘটতে পারে। আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

নিহত মাদ্রাসা ছাত্র ইসমাইলের মা মিনারা বেগম একমাত্র পুত্রকে হারিয়ে এখনো বাকরুদ্ধ। তিনি ফাঁসির দাবি জানিয়ে বলেন, হত্যাকারীদের বাঁচাতে এখনো একটি পক্ষ সক্রিয়। এ নিয়ে যেন কোনো রাজনীতি না করা হয়।

এদিকে বাহুবলের সুন্দ্রাটিকি গ্রামে চাঞ্চল্যকর চার শিশু হত্যার ঘটনায় নিহতদের পরিবারের সন্দেহের পরিপ্রেক্ষিতে সালেহ উদ্দিন আহমেদ (২৭) নামে এক যুবককে আটক করে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয় জনতা। গতকাল বেলা ১১টায় তাকে সুন্দ্রাটিকি গ্রাম থেকে আটক করা হয়। আটকের পর সালেহ উদ্দিনকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সালেহ উদ্দিন গ্রেফতারকৃত বশির মিয়ার ভাই। এর আগে পুলিশ আরও ৫ জনকে গ্রেফতার করে। তারা হলো— ওই গ্রামের আবদুল আলী বাগাল, তার পুত্র জুয়েল মিয়া ও রুবেল মিয়া, বশির, আরজু। এদের মধ্যে আবদুল আলী বাগাল ও তার ছেলে জুয়েল মিয়াকে ১০ দিন করে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

এ ছাড়া আবদুল আলী বাগালের পুত্র রুবেল ইতিমধ্যে শুক্রবার সন্ধ্যায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে হত্যার রোমহর্ষক বর্ণনা  দেয়। রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের ফাঁসির দাবিতে ফুঁসে উঠছে বাহুবলসহ জেলার মানুষ। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সচেতন নাগরিক সমাজসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ মানববন্ধনের আয়োজন করে। গতকাল দিনভর এসব মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। বাহুবল থানার ওসি মোশাররফ  হোসেন জানান, গতকাল সকালে স্থানীয়রা সালেহ উদ্দিন আহমেদকে ঘেরাও করে পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তাকে আটক করে। পরে বাহুবল থানা পুলিশ সালেহকে ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। বর্তমানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এদিকে রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন করেছে বাহুবল কলেজের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। দুপুর ২টায় ফয়েজাবাদ উচ্চবিদ্যালয়, বাহুবলের সচেতন নাগরিক সমাজ ও মিরপুর সানসাইন প্রি-ক্যাডেট কেজি অ্যান্ড হাইস্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বিকালে বাহুবলের বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকের ব্যানারে হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করে। উল্লেখ্য, ১২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় সুন্দ্রাটিকি গ্রামের ওয়াহিদ মিয়ার ছেলে সুন্দ্রাটিকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র জাকারিয়া আহমেদ শুভ (৮), আবদাল মিয়ার ছেলে প্রথম শ্রেণির ছাত্র মনির মিয়া (৭), আবদুল আজিজের ছেলে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র তাজেল মিয়া (১০), সুন্দ্রাটিকি আনোয়ারুল উলুম ইসলামিয়া মাদ্রাসার নুরানি প্রথম শ্রেণির ছাত্র আবদুল কাদিরের ছেলে ইসমাইল মিয়া (১০) নিখোঁজ হয়। এদের মধ্যে শুভ, মনির ও তাজেল একে অপরের চাচাতো ভাই। ইসমাইল তাদের প্রতিবেশী। পাঁচ দিন পর বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে গ্রাম থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরের ইছারবিল খালের পাশে বালু মিশ্রিত মাটিচাপা অবস্থায় ওই চার শিশুর মৃতদেহ পাওয়া যায়। সুন্দ্রাটিকি গ্রামের গ্রাম পঞ্চায়েত আবদুল আলী ওরফে বাগল মিয়ার সঙ্গে নিহত শিশুদের অভিভাবকদের পক্ষের পঞ্চায়েত খালেক মিয়ার দীর্ঘদিনের বিরোধ ছিল। মাসখানেক আগে গ্রামের একটি বরইগাছ কাটাকে কেন্দ্র করে বাগল মিয়ার সঙ্গে খালেক মিয়ার আবারও ঝগড়া হয়। এর জের ধরেই ওই চার শিশুকে হত্যা করিয়েছেন বাগল মিয়া।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে