এম ডি বাবুল, চট্রগ্রাম প্রতিনিধি: গত ২৫ এপ্রিল ২০২৩ইং তারিখ সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্দর থানাধীন কলসী দীঘি সড়কের হাজি মাহমুদ মিয়া কলোনির একটি ভাড়া বাসার তালাবদ্ধ ঘর হতে একজন গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। স্থানীয়দের নিকট হতে খবর পেয়ে পুলিশ দরজার তালা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে। পরে ঘরে বিছানার ওপর চাদর দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে লাশ ময়না তদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। ঘটনার পর হতে ভিকটিমের স্বামী মোঃ সাখাওয়াত হোসেন পলাতক থাকে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয় ভিকটিমের স্বামী তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ বাসার ভিতরে রেখে পালিয়ে গেছে।

উক্ত ঘটনায় নিহত ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে ভিকটিমের স্বামী মোঃ সাখাওয়াত হোসেনকে একমাত্র আসামি করে চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্দর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন যার মামলা নং ২৬ তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০২৩ ধারা ৩০২ পেনাল কোড ১৮৬০।

র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম উক্ত হত্যা মামলায় একমাত্র পলাতক আসামী সাখাওয়াত হোসেনকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত রাখে। নজরধারীর এক পর্যায়ে র‌্যাব-৭ জানতে পারে বর্ণিত আসামী আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট হতে গ্রেফতার এড়াতে চট্টগ্রাম হতে পালিয়ে নেত্রকোনা জেলায় আত্মগোপন করে রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ খ্রিঃ তারিখ আনুমানিক ২:৩০ মিনিটের র‌্যাব-৭ এবং র‌্যাব ১৩ এর একটি যৌথ আভিযানিক দল নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর থানাধীন দূর্গম সীমান্তবর্তী এলাকা কালিকাবর হতে আসামী মোঃ সাখাওয়াত হোসেন (২২), পিতা- মোঃ মকবুল হোসেন, সাং- মুচডেঙ্গা, থানা- গৌরিপুর, জেলা-ময়মনসিংহকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামী স্বীকার করে পারিবারিক কলহের জের ধরে সে ভিকটিমকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে পরবর্তীতে মৃতদেহ বাসায় রেখে বাহির হতে তালা দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল।

গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, নিহত ভিকটিম রিনা আক্তার (২৫) চট্টগ্রাম নগরীর কেইপিজেডে জিএমএস কারখানায় কর্মরত ছিলেন। গত ৫/৬ মাস পূর্বে ভিকটিম পরিবারের অগোচরে আসামী সাখাওয়াত হোসেন এর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে বিয়ে করেছিলেন। কিছুদিন পূর্বে রিনা আক্তার এবং তার স্বামী সাখাওয়াত হোসেন তাদের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ বেড়াতে গিয়েছিলেন। গত ২৪ এপ্রিল ২০২৩ইং তারিখে রাতে তারা ময়মনসিংহ হতে চট্টগ্রামে আসে। ঈদ উপলক্ষ্যে তাদের আনোয়ারায় ভিকটিমদের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার কথা ছিল। গত ২৪ এপ্রিল ২০২৩ ইং তারিখ বেলা আনুমানিক ২:২০ মিনিটের দিকে সাখাওয়াত ফোন করে রিনার পরিবারের এক সদস্যকে বলে রিনা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে, আপনারা এসে দেখে যান। ওই দিন সকালে দুজনেরই সঙ্গে রিনার পরিবারের লোকজন ফোনে কথা বলার কারণে তাঁরা বিষয়টিকে ঠাট্টা মনে করে গুরুত্ব দেননি। পরদিন ২৫ এপ্রিল রিনার পরিবারের লোকজন মোবাইল ফোনে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। রিনার পরিবারের লোকজন তাদের বাসার মালিকের কাছে ফোন করে রিনাদের বাসায় গিয়ে দেখে আসার জন্য অনুরোধ করলে তিনি বাসা তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পান। পরবর্তীতে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে দরজার তালা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে বিছানার ওপর চাদর দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় রিনার মরদেহ উদ্ধার করে।

গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে