ডেস্ক রিপোর্ট : কুষ্টিয়ার গড়াই নদীপাড়ের বাসিন্দা গাংশালিক। খাড়া ঢালে এদের বাস। সারা দেশে আনাগোনা থাকলেও বড় নদীর পাড়েই এদের বেশি সংখ্যায় দেখা মেলে। পশ্চিম কোনে যখন সূর্য ঢলে পড়ে, গড়াই নদীর বুকে জেগে ওঠা চরের রুপালি বালুতে পড়ে সোনালি আলো— ঠিক তখনই চারদিকে ওঠে অজস  পাখির ঐক্যতান। কারণ সন্ধ্যা নামার আগেই ঘরে ফেরার তাড়া থাকে এদের। কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার রমানাথপুর গ্রামের কোল ঘেঁষে বয়ে গেছে নদী গড়াই।

খাড়া পাড়ের বালুময় বুকে গর্ত করে বসবাস করছে কয়েক ঝাঁক গাংশালিক। বর্ষায় পানির প্রবলতায় দুকূল ছাপিয়ে গড়াই পাড় ভাঙে। ভেঙে যায় গাংশালিকের বাসাও। এ কারণে বর্ষার সময় বাসা বদল করতে হয় এদের। ঋতুর পালাবদলে বর্ষা চলে গেলে, আস্তে আস্তে গড়াই নদীর পানি কমতে শুরু করে। আস্তে ধীরে নদীর পাড় জাগে, বালু শুকায়। তখন আবার সদলবলে ঘরে ফেরে গাংশালিকের দল। গাংশালিকের বৈজ্ঞানিক নাম Acridotheres ginginianus। মাথায় কালো রঙের আবরণ। বাকি সারা দেহ ধূসর, আর পেট থেকে নিচের দিক বাদামি-কমলা।

কপালের ওপর ছোট কালো ঝুঁটি পরিচয় করিয়ে দেয় গাংশালিককে। এদের দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ২৩ সেন্টিমিটার। অন্য শালিক মানুষের কাছাকাছি এলেও এরা একটু লাজুক। এই পাখি সাধারণত মানুষ থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করে। সবসময় ছোট থেকে বড় দলে বসবাস করে। এরা খাবার সংগ্রহ করতে দলে দলে জমিতে গিয়ে পোকামাকড় এবং পড়ে থাকা শস্য দানা খায়। তবে অন্য শালিকদের মতো ফুলের মধু বা খেজুর রসের প্রতি এদের ঝোঁক নেই। এদের প্রিয় কাজ হলো চাষ দেওয়া জমি থেকে শুয়োপোকা এবং কেঁচোজাতীয় প্রাণী খুঁজে বের করে খাওয়া। এরা নরম ফল খেতেও পারদর্শী।

এরা অন্য পাখির সঙ্গে মিলেও খাবারের সন্ধানে বের হয়। এই পাখি বাড়ি বানায় বড় নদী বা খালের পাড়ে। রাস্তার জন্য সদ্য মাটি কাটা কোনো খাড়া পাড়, দালানকোঠা ও পুলের দেওয়ালের ফোকর বা বড় গাছের প্রশস্ত পাতার গোড়াতেও বাসা তৈরি করে। কুষ্টিয়ার গড়াই নদীর পাড়ে বহু বছর ধরে বাস করা গাংশালিকগুলো নদীপাড়ের মানুষের জীবনের অংশ। তাই সবাই পরিবারের মতোই আগলে রাখে এদের। স্থানীয় রমানাথপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও পাখিপ্রেমী গোলাম মোস্তফা কামাল বলেন, আমার শৈশব কেটেছে গাংশালিকদের সঙ্গে। নদীপাড়ে গিয়ে এদের কোলাহল এবং ওড়াওড়ি মনে প্রশান্তি এনে দেয়। অনেক সময় এলাকার ছোট ছেলেমেয়েরা এদের বাসা থেকে ডিম ও বাচ্চা বের করে আনে।

এগুলো বন্ধ করে গাংশালিকের অভয়াশ্রম তৈরি করতে এলাকার সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। শালিকের খুব ভক্ত ছিলেন জীবনানন্দ দাশ। মৃত্যুর পরও তিনি মধুকূপী ঘাসে ছাওয়া, অশ্বত্থ-বটে-জারুলের ছায়ায় ঢাকা, জলাঙ্গীর জলে ধোওয়া এই বাংলায় তিনি ফিরতে চেয়েছিলেন ‘শঙ্খচিল শালিখের বেশে’। তাই এই পরিবেশ বিপর্যয়ের যুগে প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে টিকে থাকুক শালিক। টিকে থাকুক গড়াই আর গাংশালিকের সখ্য।

ব/দ/প

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে