ডেস্ক রিপোর্টঃ চাল ও আটা কিনতে পারবেন মাত্র ২০০ জন। কিন্তু সারিতে দাঁড়িয়ে আছেন হাজারো মানুষ। কেউ এসেছেন ভোররাতে, কেউ সকাল ছয়টায়। অনেকেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার পর নিরাশ হয়ে খালি হাতে বাড়ি রছেন।সুনামগঞ্জে ফসলহারা মানুষের জন্য খোলাবাজারে কম দামে চাল ও আটা বিক্রির প্রতিটি কেন্দ্রের চিত্র প্রায় একই। চালের জন্য দরিদ্র ফসলহারা মানুষের মধ্যে রীতিমতো কাড়াকাড়ি শুরু হয়েছে।এ অবস্থা শুধু উপজেলা নয়, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়েও বিক্রয়কেন্দ্র চালুর দাবি উঠেছে। দুই সপ্তাহ আগে মন্ত্রণালয়ের কাছে এ রকম প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। কিন্তু মন্ত্রণালয় প্রশাসনকে এখনো কিছু নায়নি।জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১০ এপ্রিল থেকে সুনামগঞ্জে এক মাসের জন্য খোলাবাজারে চাল-আটা বিক্রির কর্মসূচি শুরু হয়েছে। জেলায় বিক্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ৪২টি। এর মধ্যে প্রতিটি উপজেলা সদরে ৩টি করে ১১ উপজেলায় ৩৩টি এবং সুনামগঞ্জ পৌর শহরে আরও ৯টি। একটি বিক্রয়কেন্দ্রে প্রতিদিন এক হাজার মেট্রিক টন চাল ও এক হাজার মেট্রিক টন আটা বিক্রি হয়। একজন মানুষ ১৫ টাকা দরে ৫ কেজি চাল ও ১৭ টাকা দরে ৫ কেজি আটা কিনতে পারেন। তবে কেন্দ্রগুলো উপজেলা সদরে হওয়ায় প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কামরুজ্জামান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিক্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা এবং চাল-আটা বিক্রির পরিমাণ বাড়ানোর ব্যাপারে আমরা এখনো কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি। তবে আমাদের চালু করা কেন্দ্রগুলোতে চাল-আটা বিক্রি অব্যাহত আছে।’হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের সদস্যসচিব বিন্দু তালুকদার বলেছেন, এই দুর্যোগময় মুহূর্তে জরুরি একটি সিদ্ধান্ত যদি ১৫ দিনেও মন্ত্রণালয় দিতে না পারে, তাহলে মানুষের কী হবে। মানুষের ঘরে তো এক বেলা খাবারের ব্যবস্থা নেই।গতকাল সকালে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের নবীনগর এলাকায় একটি বিক্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, নারী-পুরুষ ও শিশু মিলে সারিতে হাজারো মানুষ দাঁড়িয়ে। দেখলেই বোঝা যায় অন্তত ৬০০ মানুষকে খালি হাতে ফিরতে হবে। কারণ, ২০০-এর বেশি লোকের কাছে চাল-আটা বিক্রির ক্ষমতা নেই ডিলারের।সারিতে দাঁড়িয়ে মাইজবাড়ি গ্রামের রুমেনা বেগম (৪১) বলেন, দুই দিন এসে চাল কিনতে পারেননি। আজ তিনি আশাবাদী। কারণ, ভোর ছয়টায় এসে য়েছেন। তবে গোদারগাঁও গ্রামের ইছাক আলী হতাশ। তিনি বলেন, ‘আমরা আইবার আগেই আশাপাশের মানুষ আইয়া লাইন পুরা করি লায়। তবুও আছি, দেখি পাই কি না।’ নবীনগর এলাকার যুবক আবদুর রশিদ বলেন, ‘সিস্টেমে গন্ডগোল আছে। আশপাশের মানুষই চাল-আটা কিনছে বেশি।’মানুষের চাপ সামলাতে না পেরে ১৩ এপ্রিল জেলার জগন্নাথপুর উপজেলা সদরের দুই ডিলার আবদুর রহিম ও কদরিছ আলী চাল-আটা বিক্রি করতে পারবেন না বলে খাদ্য বিভাগকে জানিয়ে দেন। পরে নতুন করে আরও দুজন ডিলার সেখানে নিয়োগ করা হয়।জেলার শাল্লা উপজেলা খাদ্যগুদাম রোডের ডিলার বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘যাদের বাড়ি কাছে, তারাই তো আগে আসে। গ্রাম থেকে হাওর পাড়ি দিয়ে মানুষ আসতে আসতে বিক্রি শেষ হয়ে যায়। আমরা ২০০ জনের বেশি লোকের কাছে বিক্রি করতে পারি না। অন্যদের খালি হাতে ফিরতে হয়।’

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আবদুল রউফ বলেন, ‘আমাদের কাছে পর্যাপ্ত চাল আছে। বিক্রয়কেন্দ্র ও চাল বিক্রির পরিমাণ বাড়াতে আমরা মন্ত্রণালয়ের কাছে লিখেছি। এখনো সিদ্ধান্ত আসেনি।’জানা গেছে, সরকারের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সুনামগঞ্জে ফসলহারা দেড় লাখ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল এবং ৫০০ টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই কর্মসূচি এখনো চালু হয়নি। জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মধ্যে শুধু যে কম দামে চাল ও আটা বিক্রি করা হচ্ছে, সেটি নয়। এর বাইরে বিনা মূল্যে চাল প্রদান, অর্থ সহায়তা, ভিজিএফ প্রদানসহ নানামুখী কর্মসূচি চলছে।সুনামগঞ্জে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল, অতিবৃষ্টি ও ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙে ১৪২টি হাওরের বোরো ধান তলিয়ে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার প্রায় তিন লাখ কৃষক পরিবার। জেলায় এবার ২ লাখ ২৩ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল। কৃষকেরা বলেন, বোরো ধানের ৯০ শতাংশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

 পি/আ/ন 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে