প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ডেস্ক রিপোর্টঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা জবর দখলকারীদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এটা জনগণের জন্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে, তাদেরকে ক্ষমতা জবর দখলকারীদের কাছ থেকে গণতন্ত্রের ‘নসিহত’ শুনতে হয়।
তিনি বলেন, দেশের জনগণের জন্য এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে, তাদেরকে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে দল গঠনকারীদের কাছ থেকে গণতন্ত্রের ছবক শুনতে হয়। দেশবাসীকে তাদের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই বলে যারা বিদেশীদের কাছে অভিযোগ করেছে এ দেশে তাদের কোন স্থান নেই।
তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ‘বিদেশীদের কাছে অহেতুক কান্নাকাটি করে কোন লাভ নেই। যারা যুদ্ধাপরাধীদের মদদ দেয়, জনগণকে পুড়িয়ে মারে, বিপুলসংখ্যক মানুষের সঙ্গে ছিনিমিনি খেলে এবং জনগণের অর্থ ও সম্পদ লুট করে অবশ্যই তাদের ধরা হবে।’
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা শনিবার বিকেলে গণভবনে আওয়ামী লীগ জাতীয় কমিটির সভায় সূচনা বক্তব্য প্রদানকালে এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেছে এবং জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে তাদের কাছ থেকেই গণতন্ত্রের ছবক শুনতে হয়।
তিনি বলেন, তারা যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে। কিন্তু তাদের কাছ থেকেই আমাদের গণতন্ত্রের উপদেশ শুনতে হয়। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কি হতে পারে। আমি জানি না বাংলাদেশের মানুষ সেই ইতিহাস ভুলে গেছে কিনা।’
এ ব্যাপারে শেখ হাসিনা প্রশ্ন রাখেন যে, তারা গণতন্ত্রের কোন পথ রচনা করেছেন এবং ক্ষমতায় গেছেন? তারা বারংবার অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে দেশকে ধ্বংস করেছে এবং আবারো তাই করার চেষ্টা করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা গণতন্ত্রের বানান এবং গণতন্ত্রের সংজ্ঞা জানে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘দেশবাসীর গণতন্ত্রের শিক্ষা নেয়ার কোন প্রয়োজন নেই, কারণ তারা গণতন্ত্রের জন্য অনেক লড়াই-সংগ্রাম করেছে, বিজয় এনেছেন এবং গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, দেশে গণতন্ত্র বিদ্যমান থাকায় দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে ও দারিদ্র্যের হার কমেছে এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ঘটেছে ও তাদের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে।
তিনি বলেন, দেশে গণতন্ত্র বিরাজমান থাকায় দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে, এমনকি আমরা নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পারছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সব লোক শুধুমাত্র বেশি কথা বলতে পারে। তবে তারা জনগণের জন্য কিছুই করতে পারে না। তারা এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করতে পারে, দুর্নীতি করতে পারে এবং অর্থ বিদেশে পাচার করতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা এতিমের অর্থ চুরি করেছে, তাদেরকে আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছে এবং বিদেশে অর্থ পাচার করেছে, দেশের জনগণ তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশবাসী ভবিষ্যতেও তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করবে। এটিই বাস্তবতা।
প্রধানমন্ত্রী ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারির সাধারণ নির্বাচনের আগে ও পরে এবং ২০১৫ সালের প্রথম তিন মাসে বিএনপি-জামায়াতের সীমাহীন সন্ত্রাস ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর উল্লেখ করে বলেন, বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসীরা শত শত মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। শিশু ও নারী কেউ রেহাই পায়নি। তারা তথাকথিত সরকার বিরোধী আন্দোলনের নামে হাজার হাজার যানবাহন আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে ও ভাঙচুর করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর দল দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করেছে এবং তার ফল তারা পেয়েছেন। অথচ বিএনপি’র আন্দোলন ছিল মানুষ পুড়িয়ে মারা ও হত্যা করা এবং মানুষের ওপর নির্যাতন চালানো। এ কারণে তারা জনগণের কোন সমর্থন পায়নি। উপরন্ত তারা জনগণের মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
আওয়ামী লীগ প্রধান ২২-২৩ অক্টোবরের দলীয় কাউন্সিল সম্পর্কে বলেন, আমরা আশা করি আওয়ামী লীগ কাউন্সিলে দলের ঐতিহ্য বজায় রাখবে এবং নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করবে।
শেখ হাসিনা ১৯৮১ সাল থেকে দীর্ঘ ৩৫ বছর দলের সভাপতি পদে তাঁর দায়িত্ব পালনের উল্লেখ করে বলেন, আর কত বছর আমাকে এই দায়িত্ব পালন করতে হবে। আমি চাই, আপনারা নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করুন এবং দল সুন্দরভাবে চলবে।
প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেন, বঙ্গবন্ধু একটি গাছের চারা রোপণ করেছিলেন। সেটি আজ বিশাল বৃক্ষ ‘মহীরুহ’র হয়েছে। এখন আপনারা নতুন চারা রোপণ করুন এবং সংগঠনকে আরো শক্তিশালী করে সামনে এগিয়ে যান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে যাতে একজন লোকও দরিদ্র, অশিক্ষিত ও ক্ষুধার্ত না থাকে এবং কেউ যাতে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ না করে এবং নারী-পুরুষ সকলেই যাতে তাদের মৌলিক অধিকার পূরণ করতে পারে তা নিশ্চিত করা।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্যদিয়ে বিজয় অর্জনকারী এই জাতি অবশ্যই আত্ম পরিচয় নিয়ে বাস করবে এবং অন্যদের ওপর নির্ভরশীল হবে না এ কারণেই তাঁর সরকার শিক্ষার ওপর সর্বোচ্চ উগ্রাধিকার প্রদান করেছে।
দারিদ্র্য দূরীকরণে বাংলাদেশ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিদেশীরা এখন জানতে চায় বাংলাদেশ কিভাবে এ ধরনের সাফল্য অর্জন করেছে।
তিনি বলেন, কোন জাদু নয়, আন্তরিকতা, দেশ প্রেম, সরকারের প্রচেষ্টা এবং সর্বোপরি কর্তব্য পরায়নতাই এই সাফল্যের মূল কারণ।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সদ্যসমাপ্ত বাংলাদেশ সফরের উল্লেখ করে বলেন, এই সফর অত্যন্ত সফল ও ফলপ্রসূ হয়েছে।

 

বি/এস/এস/এন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে