2131

নীলফামারী প্রতিনিধিঃ  নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জের থানার মূল গেটের সামনে থেকে উপজেলা পরিষদের মূল গেট পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তা খানা-খন্দকে পরিপূর্ণ। এছাড়া সামান্য বৃষ্টি হলে রাস্তাটি কাঁদা পানিতে একাকার হয়ে যায়।

বিগত ১৯৯৭ সালে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধিনে সড়টির সংস্কার করার পর থেকে অদ্যাবধি আর কোন সংস্কার না করায় রাস্তাটি দিয়ে গাড়ি সাধারণ মানুষের বাইসাইকেল, রিক্সা, ভ্যানসহ অন্যান্য ইঞ্জিনচালিত পরিবহণ চলাচলের জন্য একেবারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আর এসব খানা খন্দকের ফলে রাতের বেলা বিভিন্ন নৈশ কোচ উপজেলা শহরে প্রবেশ করলে শুরু হয়ে যায় তীব্র যানজট। প্রায় ২০ বছর থেকে সড়কটির সংস্কার না হওয়ায় প্রতি নিয়ত খানা খন্দকে বিভিন্ন পবিবহন পরে গিয়ে ছোট খাটো দূর্ঘটনার ঘটনা ঘটতে চলেছে। বিশেষ করে সামান্য বৃষ্টি হলে সাধারণ খেটে খাওয়া ভ্যান চালকদের পড়তে নানান ধরনের বিড়ম্বনায়। প্রতি নিয়ত ভ্যান চালকদের ভ্যান রাস্তায় পানি জমে থাকার ফলে গর্ত বুঝতে না পেরে ভ্যানের চাকা গর্তে পরে ভ্যানের রিং,ষ্পোক,এক্সেলসহ ভ্যান উল্টে যাত্রীদের আহত হওয়ার ঘটনা এখন নিত্যদিনের হয়ে দাড়িয়েছে। সড়কের বেহালদশা হওয়ায় সড়ক থেকে পরিবহন মালিকেরা কিশোরগঞ্জ সড়ক দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন। এজন্য উপজেলা শহরের ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ নীলফামারী-রংপুর শহরে যেতে বিভিন্ন অনিয়ন্ত্রিত যানবাহনে চলাচল করছে। ফলে দেখা দিয়েছে অন্যান্য উপজেলার তুলনায় কিশোরগঞ্জ উপজেলার ব্যবসায়ীদের মধ্যে মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। সন্ধ্যা হলেই ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে বাড়ীতে ফিরে যান।

নীলফামারী থেকে রংপুর পর্যন্ত জরুরী কাজের জন্য এ এলাকার মানুষ কাজ ফেলে রেখে সময়ের পূর্বে তার গন্তব্যে পৌছতে সাধারণ পরিবহণ বেঁছে নিয়েছেন। কিশোরগঞ্জ থেকে নীলফামারী ও রংপুরে যেতে যাত্রীরা বিকল্প পরিবহন হিসাবে বেঁছে নিয়েছেন ব্যাটারী চালিত অটো, সিএনজিসহ অন্যান্য ছোট ছোট পরিবহন।

কিশোরগঞ্জ সড়ক থেকে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে অন্য সড়কে গাড়ি চালাচ্ছেন এমন একজন বাসের ড্রাইভার দুলাল হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, এ সড়কে গাড়ী চালালে পেটে ভাত থাকে না। রংপুর থেকে নীলফামারী পর্যন্ত প্রায় ৬০ কিলোমিটার রাস্তা যেতে পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন থেকে ২ ঘন্টা সময় বেঁধে দেয়া হলেও নীলফামারী থেকে রংপুর যেতে সময় লাগে ৩ ঘন্টা। ফলে শ্রমিক অফিস আমাদেরকে টিপ মারতে দেয় না। আবার রাস্তা খারাপ হওয়ায় তেল খরচও বেশী হয় যা দিয়ে পেট চলে না। তেল খরচ ও শ্রমিকের খরচ দিয়ে দেখা যায় সারাদিন গাড়ি চালিয়ে যে টাকা থাকে তা দিয়ে সংসার চলে না।

অপরদিকে বাবা মায়ের দোয়া পরিবহনের মালিক মোফাখখারুল ইসলাম সঙ্গী মিয়ার সাথে কথা হলে তিনি জানান, কিশোরগঞ্জ সড়কে গাড়ী চালালে লাভের চেয়ে ক্ষতি হয় বেশী। খানা খন্দকে পরে গাড়ীর গ্লাস, বডিসহ নানান সমস্যা দেখা দেয়। প্রতি সপ্তাহে যে পরিমান সার্ভিসিং খরচ হয় তা দিয়ে গাড়ীর টাকা উঠে না। আবার সড়কের উপরে চলছে অনিয়ন্ত্রিত ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা সে কারণে লোকাল সড়কে গাড়ি চালানো সম্ভব নয়।

একই ভাবে বললেন পিতা মাতার দোয়া পরিবহনের মালিক মিল্টন। তিনি বলেন, এখন কিশোরগঞ্জ সড়কে গাড়ী চালিয়ে কোন লাভ নেই। সড়ক পথে অজস্র অটোরিক্সা চলাচল করে। বাসের যাত্রী আর পাওয়া যায় না।

কিশোরগঞ্জ দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গ্রেনেট বাবুর সাথে কথা হলে তিনি জানান, কিশোরগঞ্জের সড়কের বেহালদশা দেখে বাহির থেকে কোন ব্যবসায়ী কিশোরগঞ্জে ব্যবসা করতে আসে না। কিশোরগঞ্জ উপজেলার উন্নয়ন আর হবে কি না তা বলা দুস্কর।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রশিদুল ইসলামের সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নীলফামারী নির্বাহী প্রকৌশলীকে কিশোরগঞ্জ থানা মোড় থেকে উপজেলা পরিষদের সামনে পর্যন্ত দ্রুত কাজ করার জন্য বলেছি।

এ ব্যাপারে নীলফামারী সড়ক ও জনপথের নীলফামারী প্রকৌশলী হামিদুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমি নতুন এসেছি। রাস্তা দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে