কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের ডাল, তেল ও মসলা বীজ উৎপাদন সংরক্ষণ ও বিতরণ ( ৩য় পর্যায়) প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষক নির্বাচন করেন মাগুরা মাস্টার পাড়া গ্রামের মৃত আজিজুল ইসলামের ছেলে শাহজাহান মিয়াকে।

তিনি তামাক ছেড়ে চলতি বছর বারি-১ জাতে রসুন চাষ করে বাম্পার ফলন, ভালো দাম পাওয়ায় মুখে ফুটে উঠেছে হাসির ঝিলিক, পাল্টে গেছে জীবন। কৃষি অফিসের উদ্যোগে প্রথমেই রসুন চাষ করে সাংসারিক জীবনে এনে দিয়েছে সাফলতা , যা অন্য কোন ফসলে দেখা যায়নি এমন লাভের মুখ ।ওই কৃষকের পারিবারিক অবস্থাও মোটামোটি ভালো।

লেখাপড়া শিখে চাকুরী নামক সোনার হরিণের পিছনে না ছুটে, ব্যবসার পাশাপাশি ঝুঁকে পড়েন কৃষি কাজে। গত কাল শুক্রবার সরেজমিনে, ওই কৃষকের সাথে কথা হলে, তিনি জানান, মান্ধাতার আমল থেকে একই জমিতে বারবার ধান, গম, আলু, তামাক, ভুট্টার চাষাবাদ করে খুব একটা লাভের মুখ দেখা যায়না। আর তামাকও পরিবেশ তথা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তামাকজাত পণ্য সেবন করে মানুষ ক্যান্সারসহ নানান দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। জন স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে তামাক ছেড়ে শুরু করি রসুন চাষ। এ চাষাবাদে যেন প্রাপ্তির চেয়ে অধিক সাফল্য এনে দেয়। প্রথমে অল্প জমিতে রসুন চাষ করে লাভ হওয়ায় এবার তিনি, বানিজ্যিকভাবে রসুন চাষ করেছেন।

চলতি বছরে নিজস্ব ১০০ শতক (এক একর) জমিতে রসুন চাষ করেছেন। সেখানে ব্যক্তিগত মোট ব্যয় হয়েছ ১০ হাজার টাকারমত, আর বাদ বাকি সার, বীজ সহায়তা দিয়েছেন উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। ১ একর জমিতে রসুন হয়েছে প্রায় ৮০ মণ। যা প্রতি কেজি পাইকারি দরে বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৩ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। এতে আমার সবই লাভ।রোপনের ৪/৫ মাথায় রসুন জমি থেকে উঠানো হয়। ওই জমিতে নতুন করে আগাম বেগুন, আলু, আবাদ করে আরও প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রসুন চাষ লাভজনক হওয়ায় আগামীতে ৫/৬ একর জমিতে রসুন চাষ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া রসুন বাজারে নিতে হয় না। ব্যবসায়ীরা বাড়ী /ক্ষেত থেকে রসুন নিয়ে যায়। আমার এসব কাজে সার্বক্ষনিক সহযোগিতা ও বিভিন্ন পরামর্শ দেন ওই ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান।

আমার রসুন চাষ দেখে অনেক বেকার যুবক রসুন চাষে আগ্রহ হয়ে উঠেছে । আর অনেক যুবক আগামীতে রসুন চাষ করবেন বলে জানন। রসুন চাষ করে উপজেলার চাহিদা পুরণ করে সারাদেশে রপ্তানী করা সম্ভব বলে দাবি করেন । তিনি আরও বলেন, সরকার সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ ও বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতেন তাহলে অনেক বেকার যুবক রসুন চাষে এগিয়ে আসতেন।

একই গ্রামের মাহফুজার রহমান মণ্ডল বলেন, কৃষক শাহজাহানের রসুন চাষের সফলতা দেখে আমি মুগ্ধ। আগামী মৌসুমে আমিও ২ একর জমিতে রসুন চাষের উদ্যোগ নিয়েছি। উপ-সহাকারী কৃষি কর্মকর্ত জানান, ওই কৃষককে সার্বক্ষনিক সহযোগিতা করা হয়েছিল। পাশাপাশি বেকার যুবকদের আগামী মৌসুমে রসুন চাষে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ উপজেলায় রসুন চাষে স্বাবলম্বী হওয়ার আলোড়ন সৃষ্টিতে অনেক কৃষক রসুন চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, সরকারি উদ্যোগে ওই প্রকল্পের আওতায় উপজেলায় অনেক চাষীকে বীজ সার দিয়ে রসুন চাষে আগ্রহী করে তোলা হয়েছে। আর এর মাঝেই অনেকেই স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। রসুন মসলাজাতীয় ফসল হলেও এর রয়েছে বহু ঔষধি গুণ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে