কাওছার হামিদ, নিজস্ব প্রতিবেদকঃ কাজী ফার্মের মুরগীর বিষ্টা জমিতে পড়ে প্রায় ২০ একর আবাদী জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার ৯ নং মাগুড়া ইউনিয়নের দক্ষিন সিঙ্গেরগাড়ীর বালাপাড়া গ্রামে বলে অভিযোগ উঠেছে। এক দিকে আবাদী জমির ফসল নষ্ট অপর দিকে মুরগীর বিষক্ত বিষ্টার গন্ধে ঐ এলাকার পরিবেশ মারাত্বকভাবে দূষিত হচ্ছে।

বিষাক্ত গন্ধে এলাকার প্রায় একহাজার পরিবারের পাঁচ হাজার মানুষ বসবাস করতে পারতেছে না, ফলে স্বাস্থ্য ঝুকিতে ভূগছে ঐ এলাকার নারী পুরুষ সহ শিশুরা। ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিক সাবান উদ্দিনের স্ত্রী আমিনা বেগম, আব্দুল মজিদ, মোঃ বায়জিদ হোসেন, মোঃ মজনু শাহ, জেন্নাত সাহেব, নাজমুল হোসেনসহ অনেকে অভিযোগ করে বলেন কাজী ফার্মস এর মুরগীর বিষ্টা দিয়ে আমাদের আবাদী জমির ফসল সবগুলো নষ্ট হয়ে গেছে, কাজী ফার্মস চালু হওয়ার পর থেকে ঐ এলাকার আশপাশের কোন জমিতে আমরা চাষাবাদ করতে পারতেছি না। এমনকি বিষ্টার বিষাক্ত গন্ধে এলাকার পরিবেশ মারাত্বক ভাবে দূষিত হচ্ছে। মশা-মাছির অত্যাচারে বাড়িতে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে সাধারন মানুষের।

আমাদের পরিবার গুলোতে প্রতিনিয়ত রোগ-বালাই লেগে আছে, এছাড়া অধিকাংশ শিশুরা ডায়রিয়া থেকে শুরু করে নানা ধরনের জটিল-কঠিন রোগে ভুগছে। কাজী ফার্মের বিষ্টা আবাদী জমির ফসল নষ্ট ও বিষাক্ত গন্ধের ব্যাপারে তাদেরকে অভিযোগ করলে তারা উল্টো আমাদের উপর মামলার করার হুমকী দেন এবং আমাদের উপর কয়েকটি চলমান মামলা রয়েছে।

একদিকে ফসল চাষাবাদ করতে পারছি না অপর দিকে বিভিন্ন মামলা হামলায় জড়িয়ে হয়রানী করছেন কাজী ফার্মস গ্রুপের লোকজন। নাম প্রকাশে অনুচ্ছুক ক্ষতিগ্রস্থ কয়েকজন কৃষক জানান কাজী ফার্মস কর্তৃপক্ষের দ্বারা মদদপুষ্ট স্থানীয় দালাল একাব্বার উদ্দিনের ছেলে মোঃ রুবেল মিয়া, মনছুর আলীর পূত্র কলম উদ্দিন, জারিফ উদ্দিনের ছেলে জাহিদুল হক, আফছার উদ্দিনের পুত্র বুদারু মামুদ ও শুমারু মামুদসহ আরো কয়েকজন ব্যক্তি কাজী ফার্মস কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে তাদের বিভিন্ন ধরনের সহযোগীতা করে আসছেন। স্থানীয় কৃষক ও জমির মালিকদেরকে মিথ্যা মামলা হামলায় ফাসানোর জন্য কাজী ফার্মসকে সহযোগীতা করছেন বলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও অভিযোগে আরো জানা যায়, কাজী ফার্মস গ্রুপ সরকারী রাস্তা দখল করে বাউন্ডারী ওয়াল নির্মাণ করেছেন।

আবাদী জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্থ এ ব্যাপারে অত্র ইউনিয়নের সিঙ্গেরগাড়ী ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ ফেরদৌস আকন্দ এবং মাগুড়া ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ হাবিবুর রহমান সংবাদদাতাকে জানান সরেজমিনে গিয়ে আমরা দেখতে পাই প্রায় ১৫ থেকে ২০ একর আবাদী জমির ফসল কাজী ফার্মের মুরগীর বিষ্টা দিয়ে তলিয়ে গেছে এবং এসব জমির ফসল সম্পুর্ন নষ্ট হয়েছে।

কাজী ফার্মস গ্রুপের প্লান্ট ইনচার্জ নাজমুল হোসেন সংবাদদাতাকে জানান, ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিকদের আমরা ক্ষতিপুরন দিব। তবে এ প্রসঙ্গে একাধিক জমির মালিকের সাথে কথা বলে জানতে চাইলে তারা বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত কোন ক্ষতিপুরনের টাকা পাই নাই। যদিও তারা ক্ষতিপুরনের টাকা দিয়েছেন সেগুলো স্থানীয় দালালরা খেয়েছে।

সুরেংগের বাজার এলাকার মুদি ব্যবসাযী রোস্তম শাহ, জানান কাজী ফার্মের মুরগীর বিষ্টা ও গন্ধে আমাদের বাড়ীতে বসবাস করা যাচ্ছে না, খাওয়ার সময়-ঘুমানোর সময় মশা-মাছির উপদ্রব, এমনকী আমাদের এলাকায় ছেলে-মেয়েদের বিয়ে সাদী দিতে হিমশিম খাচ্ছি। বিষাক্ত গন্ধের কারনে আমাদের এলাকায় বাইরের লোকজন আত্মীয়তা করতে আসে না।

এ ব্যাপারে মাগুড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি জানান আমি ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা সরেজমিনে গিয়েছি সেখানে প্রায় ২০ থেকে ৩০ একর ফসলী আবাদী জমি মুরগীর বিষ্টা জমিয়ে ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। অত্র ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার লোকজন আমার ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতে এ ব্যাপারে লিখিত ভাবে অভিযোগ করেছে।

একই বিষয়ে কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল কালাম আজাদ এর সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন বিষয়টি আমাকে মাগুড়া ইউপি চেয়ারম্যান জানিয়েছেন। এছাড়া তাদেরকে মাগুড়া ইউপি গ্রাম আদালতে অভিযোগ করতে বলেন।

মাগুড়া ইউনিয়নের সিঙ্গেরগাড়ী ৯নং ওয়ার্ডের ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিক ভুক্তভুগীরা সংবাদদাতাকে অভিযোগের সুরে বলেন এখন পর্যন্ত যারাই এ ব্যাপারে একটু মাথাচারা দিয়েছে তাদেরকে কাজী ফার্মস কর্তৃপক্ষ মোটা অংকের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেছে।

তেনারা আরো জানান ইকরচালী ইউপি চেয়ারম্যান,তারাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যানসহ একাধিক ব্যক্তি বিষয়টি নিয়ে নাড়াচাড়া করেছেন, কিন্তু কেউ কাজের কাজ করেন নি। বরং নিরহ কৃষক ও জমির মালিকরা কাজী ফার্মের মিথ্যা মামলায় প্রতিনিয়ত হয়রানী হচ্ছে বলে, সে বিষয়টি এখন পর্যন্ত কেউ মাথা ঘামায়নি। তার মানে ঐ মরার উপর খাড়া ঘাঁ।

তাই নিরহ ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ কাজী ফার্মস এর মুরগীর বিষ্টা ও বিষক্ত গন্ধ থেকে রেহাই পেতে জেলা প্রসাশকের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে