1930491_929236990495121_3571276577531589589_n-150x150

ওস্তাদ নামাইয়া দ্যান

                                               মো: রাশেদুল ইসলাম

ঢাকার  আমিন বাজারের পর, আরিচা ফেরী ঘাটেও প্রায় ঘন্টা দুয়েক অপেক্ষার পরও যখন কোন ভাড়া বা খেপ পেলামনা তখন বাধ্য হয়েই আমাদের খালি পাঁচটনি  ট্রাকটিকে ফেরীর বাস-ট্রাক ইয়ার্ডের একবারে  মাথায় পাকিং করা  হলো, তখন রাত ১১ টা । কিছুক্ষনের মধ্যে পর পর তিনবার শতর্ক  হুইসেল দিয়ে নগর বাড়ীর উদ্দেশ্যে ফেরীটিকে ছেড়ে দিল ।

সেদিন ছিল মাঘের মাঝামাঝি কোজাগরী রাত, তবে আকাশে ছিল ঘন কুয়াশার সামিয়ানা । কোজাগরী আলো আর ঘন কুয়াশার ছিল এক অপুর্ব মিলন, যা না দেখলে কাউকে বুঝা যাবেনা । আর যমুনা নদীর বুকে যেমন ছিল নীরবতা, তেমনি ছিল ঘন কুয়াসা; তার চেয়েও বেশী ছিল, হাড় কাঁপানো শীতের তিব্রতা ।

আমরা ফেরীর তিন তলায় ক্যান্টিনে জালানার ধারে একটা টেবিলে বসলাম ।শফি ভাই কেন যেন চুপচাপ, তার নীরবতায় সামান্ন হলেও আমাকে ভাবীয়ে তুললো, কারণ এই লোকটাকে কখনও, গোমড়ামুখে থাকতে দেখিনাই । পেশায় যদিও ট্রাক ডাইভার, তুবুও তার চলাফেরা ছিল; মার্জিত ও সহার্দপূর্ণ। আমাদের ম্যাচে সাথে লাগানো তার বাসা। এক রিসকার পরিবার অর্থাৎ বৌ-বাচ্চা সহ তিন জনের পরিবার, ভাবীও খুব নিরহংকার, মেয়ে তুলি বয়স পাঁচ, কি সাত, সব সময় আমাদের ম্যাচে, ঘুরাফেরা করতো। আমরা যে কয়জন, ম্যাচে ছিলাম ,সবাই তুলিকে খুব আদর করতাম। আর শাফিভাই তো বাসায় থাকলে, তার বেশীর ভাগ সময় পার হয়; আমাদের ম্যাচে প্লেকার্ড খেলে, মাঝে মাঝে খেলার সাথীর অভাব দেখা দিলে ,শেষে পযনত ;ভাবীকেই খেলার পার্টনার হিসেবে নিয়ে বসতো, ভাবীসাহেব বেশ  কলব্রীজ খেলতো পাড়তো, সাথে নিয়ে আসত ,চানামুড়ি , জলপাইয়ের আচাঁর, আর চলতো; নানান কাহিনীর আলাপ আলোচনায় আমাদেরকে মাতিয়ে রাখত ,এবং আমরাও তার মাতানির মধ্যে আমাদের বেকারত্ত হুতাসা,বা ভাই বোনদের বিয়োগ ব্যাদনা

অনেকটা ভুলিয়ে থাকতাম। আজকে শফি ভাইকে  চুপচাপ দেখে, মনে মনে কারণ খুজতে লাগলাম । এরই মধ্যে ক্যান্টিনের ম্যাচিয়ার আসলো । জিজ্ঞাসা করিল  “স্যার কি খাবেন  ”?

 

– দুটো মুরগীর রান; সবজি, দিয়ে খানা নিয়ে আস, শাফি ভাই বলল ,

ফেরীতে নিয়োম হচ্ছে মাছ-মাংশের দাম রাখেন, ভাত ডাল ফ্রি, যত খুশি খাও । তবে মাছ-মাংশের দাম অন্যান্য বাজারের তুলনায় আড়াই গুন বেশী।

-আমি অনেকটা ইচ্ছার বিরুদ্ধেই বললাম, না না শুধূ ডাল ভাজি দিলেই চলবে, কারণ ট্রাকের কোন খ্যাপ হয়নি,তার মানে শফি ভাইয়ের আজবারতী ইনকাম শুণ্যের কোঠায়, সাথে সাথে মেসিয়ার বলল “ শুধু ডালভাজি  দিয়ে এখানে ভাত দেওয়া হয়না”,  কুঝেছেন স্যার !

-আরে ভাই, আমি মাছ মাংশ খাইনা ,‘ খাইনা যে তা নয় কারণ পত্র-পত্রিকায় দেখেছি ; এখানে শিয়ালের মাংস কে চালিয়ে দেয় খাসির মাংশ বলে, আর মরা মুরগীতো আছেই, আর সত্যিই সত্যিই মাছের কাটার জন্যা আমি ছোট বেলা থেকেই  মাছকে খাওয়াকে এরিয়ে চলতাম।

-তাহলে এখানে খানা খেতে পার—-

-আরে মিয়া যাও, দুটো  মুরগীর মাংশ সবজি নিয়ে আস,যাও  যাও ;শফি ভাই বলল,

-‘মানুষের মন এত ছোট হয়’, মেসিয়ার বেচারা আমাকে ইংগীত করেই বলল, আমি অনেকটা অপমানবোধ করলাম এবং মনে মনে ভীষণ ক্ষেপে গেলাম ।

-শফি ভাই তা বুঝতে পেরে বলল ,মারিচে —

-জি কিছু বললেন ‘মেসিয়ার বলল,

-না কিছুনা ,তুমি খানা নিয়ে আস গে ।

– জি আচ্ছা, বলে মেসিয়ার চলে গেলেন ।

শফি ভাই  মিটি মিটি হাসছে ,অর্থাৎ শফি ভাই বুঝতে পেরেছে ,আমি যে রাগ করে বা বাজি ধরে ডেড় কজি চালের ভাত শুধু লবন দিয়ে সাবার করতে পারি, ম্যাচে এ রকম অনেকবার বাজি ধরে জিতেছি।

কিছুক্ষনের মধ্যে টেবিলে আসল, গরম ভাতের গামলা ,আসল ডাল ,মুগীর

মাংশ ও সবজি। শফি ভাই তার পরিমান মত প্লেটে তুলে নিলেন।

-ব্যাস আমি তো লবন দিয়ে গামলার ভাত সাবার করলাম । মাসিয়ারকে

ডাকলাম কিন্তু সে এরিয়ে গেল ।

– আরে ও মেসিয়ার ভাই,ভাত কৈ ?

সে আবার ভাত দিল, তবে আগের তুলনায় অনেক কম, এবার গামলার সব ভাত আমার প্লেটে ঢেলে নিলাম এবং মেসিয়ারকে বললাম, যাও আবার ভাত নিয়ে আস, বহুত ক্ষিধা পেয়েছে ,মেসিয়ার আমার দিকে তাকিয়ে কি যেন বলতে চাইল, তার আগেই আমি বললাম যাও; যাও ভাত নিয়ে আস, ভেজাল করিস না, সে আমার দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে কি যেন ভাবল, হয়তো মনে মনে ভাবছে , যে এ’তো আজব লোক, শালা  লবন দিয়ে একাই পাঁচজনের ভাত শেষ করল ।

অথচ ডালভাজি মুরগীর মাংশ এখনও স্পর্শই করল না ।

এবার মেসিয়ার, ভাত নিয়ে আসল পরিমানে আগের তুলনায় আরো কম এবং আমার মনে হয় চুলোর উপর থেকে আধা সিদ্ধ ভাত তুলিয়ে এনেছে । সে যে, বিরক্ত হয়েই এনে দিয়েছে তা আমার বুঝতে আর বাকী রইল না।

-আমি বললাম এত গরম ভাত— বেশ বেশ  এ্যাই; এরকম  গরম ভাত আগে দেওনি কেন এ্যা ,একটু ধমকের সুরে বললাম, এই শীতে, গরম ভাত খেতে, কি যে ভাল লাগে তাতে , আমার মুখে এই রকম কথা শুনে সে চটে গিয়ে আমার দিকে তাকাইতে তাকাইতে পিছাচ্ছিল, ওদিকে আর এক মেসিয়ার বড় ট্রেতে চারজনের খাবার  ডাল, ভাজি ,খাসির মাং নিয়ে আসছিল আর কি এর পিঠে সজোরে  ধাক্কা লেগেঐ মেসিয়ারের হাতের ট্রেটি গিয়ে পড়ল পাশে বসা একজন ভদ্র মহিলার গায়ে ,ভদ্র মহিলা চেচিয়ে উঠে মেসিয়ারকে মেরে দিল এক থাপ্পর , কিন্তু হ্যায়! মেসিয়ারের গায়ে থাপ্পর পড়ার আগেই সে সড়ে দাঁড়াল, আর থাপ্পরটি গিয়ে লাগল পাশে সুন্দর বৌ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ভদ্র লোকটির গালে ,আর কি সোর গোল —

-এ্যা ,‘আপনী এই টা কি করলেন’ ,থাপ্পর খাওয়া লোকটির  বৌটি চটে গিয়ে বলল । তরি-তরকারী ঝোল গায়ে মাখা  মহিলা হাত জোর করে চরম অপরাধীর মত দাঁড়িয়ে আছে মেসিয়ারদ্বয়ের মত ভদ্র মহিলাকে অনেকটা হোলি খেলার নায়িকার মত দেখাচ্ছিল । পরে ম্যানেজার এসে মিটমাট করে

দিলও ভদ্র লোকের বৌটি চেল্লাচিল্লি  করেই যাচ্ছে । থাপ্পর খাওয়া লোকটি তার চটে যাওয়া বৌয়ের কানে কানে বলল, এ্যই হয়েছে এবার  চুপ কর; এরকম ‘সুন্দর মহিলার হাতে থাপ্পর খাওয়াটাও ভাগ্যোর ব্যাপার,’

এ কথা শুনিয়া ভদ্রলোকের  যেনে তেলে বেগুনের মত জ্বলে উঠলো, আমার কি রুপ তার চেয়ে কম নাকি  ? ইত্যাদি ইত্যাদি বলতে বলতে অন্য দিকে চলে গেল । এই ঘটনা মুহেুর্তের মেধ্যে ঘটলেও সাবাই চেয়ে চেয়ে  দেখল, কেহবা হাসছে, কেহবা দামী খাবার  গুলা নষ্ট হল, তাইনা দেখে আফসোস করছে।

এদিকে আমার  পেলেটের ভাত শেষ, চোখ উল্টিয়ে মেসিয়ারকে  ডাকলাম, ভাত কৈ ? মেসিয়ার আমার কাছে এসে হাত জোড় করে বলল ‘ওস্তাত মাপ করান যায় না ’!

-শফি ভাই বলল, তুমি কারে কি বল ,তার ভাত খায়া কেবল শুরু ,

-ওস্তাদ মাপ করে দেন ,শফি ভাইকে বলল ।

-তাহলে একটা মুরগী মাংশ ফেরৎ নিয়ে যাও,আমি বললাম ,

– জি আচ্ছা ,আমি দেখলাম তার কারণে অনেক! গুলো খাবার নষ্ট হল, কান্টিন ম্যানেজার তো বকেই যাচ্ছে ,

তোদের বেতন থেকে নষ্ট খাবারের দাম কেটে রাখব কইলাম হ্যাঁ ইত্যামি ইত্যাদি ।

যাহোক, শফি ভাই অবশ্য আমার না খাওয়া মুরগীর মাংশ ও সবজির  দামও দিয়ে দিল, অল্প হলেও মেসিয়ারের মুখে একটা হাসির দেখলাম । চা খেয়ে, দশ পনোরটা কাঁচা গুয়ার খিলি চকলেট পান নিয়ে আমরা নিচে নেমে আসার সময় মেসিয়ারকে আমি ১০ টাকা, মানে আড়াই কেজি চালের দাম বক্শিস দিলাম, এবার তার মুখে একটু বেশী হাসি দেখলাম । নিচে আমাদের  ট্রাকের বনার্ডে এসে  বসলাম, এখানে বেশ গরম লাগছে ।

নিচে নেমে আসতে অবশ্য আমার বেশ  কষ্টই হচ্ছিল ,কষ্ট হওয়ার কথাইতো, ভাত খেয়ে তো একবারে পটকা মাছের মত হয়েছি। শফি ভাই বলল ‘ রকেট ভাই তুমি আজ  যা দেখালে’, এই বলে; হাসতে লাগল ।

সেই আগের মত শফি ভাইয়ের মুখে হাসি দেখে আমাকে  বেশ ভাল লগল ।

আমরা ট্রাকের বনার্ডে বসে, কাচা গুয়ার চকলেট পান চিবাচ্ছি,  ওমা এরেই মধ্যে, শফি ভাই নাক ডেকে ঘুমাতে লাগল ,বুঝে উঠতে পারলাম না যে লোকটি ম্যাচে কলব্রিজ খেলার সময় কত যে রাত বসে বেস কেটে দিয়েছে,তার হিসাব নেই আর আজ পাঁচ মিনিটেই ঘুমে পড়ল, কথায় আছে না;পরিবেশ পরিস্থিতিতে মানুষের অনেক কিছু এমনিতে পরিবর্তন হয়ে যায় ।আমাদের ট্রাকটি ছিল ফেরীর একবারে প্রথম মাথায়, ফেরী যমুনার বুক চিড়ে আর কুয়াশার সাথে যুদ্ধে করে এগিয়ে চলছে । কুয়াশার কারণে ফেরীর হেড লাইটের ফক্ আলোটা  খুব বেশী দুরে যাচ্ছে না । ফেরী ধীর গতিতে নগর বাড়ী ঘাটের উদ্দেশ্যে ছুটে চলছে,্ মাঝে মাঝে পানিতে ভাসা বিড়াট আগুনের কুন্ডকে পাশি কাটিয়ে চলছে। আমি বড় ঘোড়ে পড়ে গেলাম, আগুনের  কুন্ডগুলো কিভাবে এই স্রোতের পানিতে স্থির হয়ে ভেসে আছে ,তার হিসাব মিলাতে পারছিনা ।  এগুলোকে আমি খুব কৌতুহল করে দেখতেছি।

রেফী চলার মাঝেই আমি যেন খুজে পাচ্ছি জীবন , মানুষের জীবন কি? জীবন কি চায় ,জীবন যেমন কোন কিছুতেই থেমে থাকে না , ঠিক জীবনের মতোই যুদ্ধ করে ফেরী ছুটে চলছে এই রকম হাজারো চিন্তা ভাবনার মাঝে আমি মনের খেয়ালে হোক; আর বাস্তবতায় হোক; মন আমার ছুটে যায়

এক নিস্তদ্ধার সামিয়ানায়, মনের মধ্যে নেমে আসে গভীর বিষ্ণতা, আর তখন আমার মনে হচ্ছিল; আমি যেন নিজেই একটা স্বপ্ননীলে ভাসছি প্রজাপতির ডানা মেলে । আবার পড়ে যাচ্ছি এই বিশাল পৃথিবীতে, আমি কে! মানুষ কার জন্য, মানুষ কি যায় ? বা এত কিছুর মাঝেই এক দিন তো প্রথিবীর ধ্বশং হবেই, তবে জগতে এত কিছু করছে মানুষ কার জন্য ।

এদিকে ফেরী নগর বাড়ী ঘাটের ক্রোস একের মত  বাকি থাকতেই, শফি ভাইয়ের ঘুম ভেংগে গেল, তার ডাকে আমার সুন্দর স্বপ্নের যবনিকা ঘটল।

আমি পানিতে ভাসা আগুনের কুন্ডগুলোর কথা জানতে চাইলে, সে;বলে‘এগুলো প্লাষ্টিকের ড্রামের গায়ে শিকল দিয়ে নঙর করে ফেলানো

আছে, রাতে ফেরী-ষ্টমিার চলার পথ নির্দেশক, ড্রামের গায়ে এক প্রকার ক্যামিক্যাল প্রেষ্ট করা আছে, যাহাতে কোন আলো পড়লে সে উজ্জল আলোকিত হয়’ ,তখনই আমার মনে পড়ল শহরের বড় বড় সড়কের ধারে ব্রিজের এ্যালিংকের  বিভিন্ন  বিলবোর্ডে ট্রাফিকের বিভিন্ন নির্দেশক চিহ্ন রাতে বাসে চললে এগুলেকে দেখা যায় ।

আমি অবশ্য এ ফেরী দিয়ে কতবার যাওয়া করেছি, কিন্তু রাতে কখনও যাওয়া হয় নাই ।

আমি শফি ভাইকে ফেরীতে তার মন খারাপ কেন জানতে চাইলাম ।

-কই নাতো

-কিন্তু আপনী কি যেন লুকাচ্ছেন ,আপনার মুখের ঠোটে তো সবসময় হাসি লেগেই থাকতে, কখনও গোমড়া মুখে আপনাকে থাকতে দেখিনাই ।

-আরে না না,  মন মন খারাপ নয় , তুমি ছাত্র মানুষ, তোমাকে নিয়ে এলাম একটা লাভের জন্য, এখন দেখছি তার উল্টো হল। আমিতো প্রয়াইশ মালামাল আনতে  বগুড়ার মোকামতলায় খালি ট্রাক নিয়ে যেতে হয় কিন্তু যাওয়ার সময় অনেকত সময় কোন মালের টিপ পেলে ভাড়া বাবদ চার/পাঁচ হাজার টাকা বারতী পাই, যাহা মহাজনকে দিতে হয়না , সেই আশায় আজকে তোমাকে নিয়ে আসা,কিন্তু —

-তাতে কি হয়েছে ? আজকে আপনার সাথে না আসলে এই মাঝ মাঘে, কোজাগরী রাতে, যমুনার বুক থেকে, এত অপূর্ব সৌন্দর্য আর উপভোগ করতে পারতাম ? দেখেনা আকাশ আর নদীর বুক কিভাবে মিশে গেছে, আমাকে কিন্তু খুব ভাল লাগছে, ‘এটা অবশ্য আমার মনের কথা নয়, কারণ

আমিও আশা করছিলাম যে, এক রাত-দিনের মধ্যে যদি খন্ডকালীন ট্রাক হেলপার হয়ে কিছু টাকা,পেলে মন্দ হত না। দুটো টিউশনি করে যা পাই, তাদিয়ে চলতে সত্যিই খুব কষ্ট হয় ।

আমি যে, এক সাবানে গোসল করি এক সাবানে কাপড় কাচি তা অনেকে

জানেনা । কিন্তু কি আর করার গরীব ঘরের ছেলে ,বংশ মর্যাদা নিয়ে গর্ব করার মত আমার কিছু নেই । বাড়ী থেকে রোজগারের জন্যতো এই আজব

ঢাকা শহরে লেখাপড়ার পাশাপাশি নানান কাজ করে টিকে আছি ।

শীতের রাতে কাঁচা কুয়া দিয়ে চকেলট পান চিবাতে বেশ ভালই লাগছিল । রাত ২ টার সময়  আমাদের ফেরী নগর বাড়ী ঘাটে পৌছল, ট্রাকটি ফেরীর একেবারে সামনে থাকায়, ফেরী; ঘাটে ভিড়ার সাথে সাথেই; আমাদের ট্রাকটি  ছাড়া হল টান কিন্তু এমনই ঘন কুয়াশা যে, ট্রাকের হেড লাইটের ফোক্ আলোটা খুব বেশী দুরে পৌছতে পারছেনা, ফলে ট্রাকের গতি ঘন্টায় কখনও চল্লিশ কখনও  বা পঞ্চাশ কিঃমিঃ বেগে চলছে । আরো মজার ব্যাপার হল, রোডে মাঝে মাঝে কোন কুয়াশাই নেই,

সেই ক্ষেত্রে  ট্রাকের গতি  ষাট -সত্তুর ।

এখানে আমার মনে হচ্ছিল যে, কুয়াসা কত উৎমুক্ত ,আকাশে কোথাও যেতে নেই কোন মানা অথচ কোন কোন জায়গায় কুয়ারাসারা জটলা পাকিয়ে খেলা করছে । আবার কোন কোন জায়গায় হালাকা ভাবে ছিড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অলস্যের বুড়োদের মত।

মানুষকেতো সমাজের কিছু নিয়ম নীতির মধোই বসবাস করতে হয়, অথচ আমরা মানুষ; সমাজনীতে কি   রাজনীতিতে, অর্থনীতিতে কোন নিয়ম নীতির ধার ধারিনা । ভাবছি কুয়াসার মত যদি আমরা  নিয়ম শৃংখরা মেনে চলতে পারতাম, তাহলে সমাজে ধনী-গরীব,নারী-পুরুষ, কর্র্মক্ষেত্রে কর্মচারী-কর্মকর্তা,কোট-কাছারীতে কোন অনিয়ম-বৈশম্য  থাকতো না ।

শফি ভাইতো নানান গল্প করেই যাচ্চে, আমি কিন্তু সেই দিকে খুব একটা খেয়াল দিচ্ছিনা, কারণ গাড়ী চালনার সয়য় চালকের সাথে বেশী কথা বললে রোডে এক্সিন্টেড হবার আশাংখা থাকে, আবার কথা না বলেলও চালকের ঘুমের তনদ্রা গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়তে পারে সুতুরাং দুই বিষয়ের কথা মাথায় রেখে তার সাথে খাপ খাইয়ে সময় ক্ষেপন করছি । এভাবে যাচ্চি হঠাৎ দুরে সামনে দেখছি, ছোট-বড় এক ঝাক তারাদেরকে নিয়ে আকাশ থেকে  রোডের মাঝ খানে নেমে থমকে দাঁড়িয়ে আছে।

বিষয়টি ঠাওড় করতে করেতে আমাদের ট্রাকটি একবারে তারাগুলোর

 

কাছাকাছি এসে পড়ছে এবং তখনই দেখলাম প্রায় বিশ পচিশ জ্বীন, সাদা পোশাক, মাথায় টুপি, হাতে জলন্ত হ্যারিকেন আর টচ্ লাইট নিয়ে হাত নেড়ে ট্রাককে থামাতে বলেছে। তাদের আরো কাছাকাছি  আসতেই জ্বীনগুলো আমাদের ট্রাকের পথকে রোধ করে দাঁড়ালো, শফি ভাই  ঘ্যাত করে ট্রেকারের ব্রেক কসলো ,

আমিতো ভয়ে চোখ বন্ধ করলাম, তা কোন ভয় একবার যেন চোখ খুলতেও ভয় পাচ্ছি ।

-ড্রাইভার ভাই আমাদের একটু উপকার করতে হবে ,

শফি ভাই বলল কি উপকার করেতে পারি ? এই কথা গুলো আমার কানে আসছে, আমি কিন্তু এখনও চোখ বন্ধ করেই আছি ।

এর পর কি যেন গুঞ্জন শুনতে পাচ্ছি , ছোখ মেলে দেখি ষ্ট্রারিং এ শফি ভাই নেই, এখন কি করব ট্রাক থেকে লাভ দিব,না গোলা ফাটিয়ে কাঁদব বুঝে উঠতে পারছিনা, এই সময় সফি ভাই বল্ল ’আট হাজার টাকা ভাড়া লাগবে ,আমার আর বুঝতে বাকী রইল না ।

-‘আচ্ছা দিব, আট হাজার টাকাই বিদব ’-ঠিক আছে তুলেন, অল্পের জন্য খুশিতে জ্বীনের টিনের ভয় দুর হল এবং অনেকটা খুশি হলাম আট হাজার টাকা,শফি ভাই যে মানুষ সেখান থেকে আমার চার-পাঁচ হাজার নিশ্চিৎ। আমার মনে যে খুশি দেখা দিল তার বেশী সময় স্থায়ী হলনা, কারণ মালটা ছিল মানুষের লাশ, লাশের ভাড়া টাকা নিব ,ইত্যাদি ইত্যাদি নানান কথা ভাবছি ইতি মধ্যে জানাজার দেওয়া কাফন পড়িয়ে খেজুর পাতার চাটাই দিয়ে মরানো লাশ ট্রাকে উঠানো হল। আর ট্রাকের বর্নাডে আমার পার্শে মৃত ব্যাক্তির স্ত্রী ও তার চার বছরের ছোট শিশুসহ বসলাম ।

ভদ্র মহিলা কাঁদছে ,আমি জিজ্ঞাসা করলাম

-আপনার স্বামী কিভাবে মারা গেলেন? সাথে কোন পুরুষ মানুষ নেই কেন  ?

-আমার স্বামীসহ ব্যাবসার কাজে কয়েক মাস ধরে এখানে বাসা ভাড়া করে বসবাস করে আসছি। আমার স্বামীর হার্টের ব্যারাম ছিল । আজকে রাত ১টা ষ্টোক, ডাক্তারের কাছে নেওয়ার সময়টা পযর্ন্ত পাইনি,এ বলে ভদ্র মহিলা

 

কান্না শুরু করে দিল ,যা বলার আমি তা বলে শান্তনা দিতে লাগলাম ।

-আম্মু আম্মু  আব্বুকে পিছনে কে রেখছ যে, ছোট শিশুটি বলল

-এখানে জায়গা নেই  তাই

-আব্বু যে আমার সাথে কথা বলেনা কেন ?

-তোমার আব্বু ঘুমিয়ে গেছে

-ওমা আব্বুকে ডাক না কেন ওমা —

-না বাবা ঘুমের মানুষকে ডাকতে হয়না

কিন্তু আব্বুকে যে ঠান্ডা লাগবে, ওমা ডাক না  ওমা—

-বড়দের ঠান্ডা কম তাই, এই কথাগুলো মহিলা ভাংগা ভাংগা কন্ঠে বলল , ছোট অবুঝ শিশুটি আর কত কি প্রশ্ন করেতে করতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়ছে ।

আমি ফিরে গেলাম আরো দশ পনর বছর ভবিষ্যতের দিনে, আমার হয়ত একদিন স্ত্রী- বাচ্চা কাচ্ছা হবে, তখন আমার এ রমক হলে আমার স্ত্রীর অবস্থাটা কি হতে পারে,আমি  যাকে স্ত্রী হিসাবে পেতে চাই,সেতো হবে  আমার জীবনের শেষ্ঠ সম্পদ , তার নাম আযনিকা,,সেও বলে‘আমাকে স্বামী হিসেবে পেলে,আমি নাকি হব তার জীবনের শ্রেষ্ঠ এক উপহার।

আমি আযনিকাকে ভীষণ ভালবাসি, সেও আমাকে প্রচন্ড রকম ভাল বাসে। সেই দিনের অপেক্ষায় পড়ালেখার পাশাপাশি খুঁজতেছি একটা কাজ । পড়ে আছি বাতাসে টাকা উড়ানোর ঢাকা শহরে ,এখানে টাকা উড়ে উড়ে বেড়ায় যে ধরতে পারে ধরে, ধরে, আয়াম আয়সে চলা ফেরা করে আর যে ধরতে পারেনা  তারা হ্যাঁয় হুতাশায় কোন মতে বেঁচে থাকে ।

আমি টিউশনি মাষ্টার, কখনও বানিজ্য মেলার কন্ডকালীন সেলম্যান ,আজকে খন্ডকালীন ট্রাক হেলপার , শত অভাবের মধ্যেও মনে আছে কঠোর শক্তি সাহজ, যে কোন কাজে আছে আমার  উৎসাহ-উদ্দিপনা । মনেরমধ্যে জীয়ে রাখি নীরব খুশি আর মনে খুশি থাকলেই আসে ঘুম ,ঘুম আসলেই দেখে স্বপ্নই আর স্বপ্ন দেখলাই মানুষ দেখে আশা এই মিথ্যা কথাটা আমি আমি গায়ে মাখিনা, নোবেল বিজয় অমত্ত সেন বলেছে“ মানুষ ঘুমের ঘোরে যেটা

 

১০

দেখে সেটা স্বপ্ন নয়, সেটার জন্য ঘুম আসেনা সেটাই হচ্ছে স্বপ্ন”,আমি সেটাকে মেনে, মনের মধ্যে তৈরী করে আশা  আগামী দিনের চলার আশার পথ। চলার পথে আসে নানান বাধা বিপত্তি তার পরেও পথ চলতে হয়, কারণ মানুষ জন্ম গ্রহন করেই সব কিছুই শিখে আসে না, মানুষ দিন দিন প্রতি দিন নানান জ্ঞান অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়েই, মানুষ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত ও বিকশিত করে থাকে , মানুষের জীবনের এই পর্যায়গুলো এক কঠিন পরীক্ষায় সমকির্ণ,

প্রেম ভালবাসা,আপনজনের বিয়োগব্যাদানা, অভাব অনটন হুতাসন,আর্থিক প্রতিবন্ধকতা মানুষের এই পর্যায় গুলোকে আগুনে পুড়ে ছারখাড় করে দেয় এক নিমিষে ,তবুও মানুষ করে বাঁচার জন্য চেষ্টা এবং আত্ত্ব চেষ্টায় তা কোন দিন বিফলে যায় না । কোন কাজের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা আত্ত্ব চেষ্টায পশ্চাৎ বরণ করে। এই রকম নানান কল্পনা মনে মনে ভাবছি ।

ট্রাক চলছে ঘন্টায় ত্রিশশ কিঃ কখনওবা চল্লিশ- পঞ্চাস গতিতে । ভদ্র মহিলা এখন গুন গুন কাঁদছে, এরেই  মধ্যে  লাশের প্যাচানো খেজুর পাতার চাটাইটি  আচমকা আমাদের ট্রাকের সামনের গ্লাসের উপর এস পড়ল,শফি ভাই ঘ্যাৎ করে ব্রেক কসে ছেড়ে দিতেই চাটাইটি এক  পাশে পড়ে গেল । আমরা কিছু বুঝে উঠার আগেই , ডান জালানায় লাশটি  হাত দিয়ে বিকট  থাপ্পর দিয়ে বলছে “ ওস্তাদ নামাই দ্যান , ওস্তাদ নামাই দ্যান’ আর কি ,আমরা সবাই ভয়ে কি করব বুঝে উঠতে পারছিনা , ভদ্র মহিলা কান্না বন্ধ করে ভয়ে আমার কাছে ঘেসে আসল ,পারেতো  আমাকে জেড়িয়ে ধরে, মনে হয় তার কোলে শিশুটি না থাকেলে হয়তবা সে ভয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরতো ,আর শাফি বাই গাড়ীর গতি দিল বেড়ে। আমার যতদুর মনে হচ্ছিল একশত কিলোমিটারের কম না । ট্রাকের গতি যতই বাড়ছে, লাশটি ততই জোড়ে জোড়ে জানালায় থাপ্পর মারছে আর সমানে তালে বলে যাচ্ছে  ‘ওস্তাদ নামাই দ্যান , ওস্তাদ নামাই দ্যান” লাশের এই আকুতি শাফি ভাইয়ের কানে যাচ্ছে

কিনা জানিনা তবে সে যে ক্রমাগত ট্রাকের গতি বেড়েই চলছে।

লাশের থাপ্পরে মনে হচ্ছে এই বুঝি জানালা ভেঙ্গে লাশ বাম্পারে ঢুকে

১১

আমাদের গলা চেপে ধরবে এদিকে শাফি ভাই যে ভাবে ট্রাক চলেছে তাতেও এক্সিডেন্ট ঘটার আশাঙ্খাও করছি দ্বৈত ভয়ে আমার প্রাণ যায় যায়,

শফি ভাইতো দুর্বার গতিতে ট্রাক চালাচ্ছে ,ঠিক তেমনি লাশটি সজোরে জালানায় সমান তালে থাপ্পর দিয়েই যাচ্ছে আর  ‘ওস্তাদ নামাই দ্যান ,ওস্তাদ নামাই দ্যান ওস্তাত নামাই দ্যান’,এভাবে ক্রোশ দুয়েক চলার পর এক সময় লাশের থাপ্পর ও ভয়ংকর কথাটি বন্ধ হল ।

ইতি মধ্যো সিরাজগঞ্ছ  সিন সিন তেলের পাম্পে এসেই,  ট্রাক থামিয়ে ষ্টারর্ড বন্ধ না করেই শফি ভাই নেমেই মাড়ল দৌড় সোজা পাম্পের কাউন্টারে, তা ;কোন দৌড়, পিছনে ফিরে তাকাতেও যেন ভয় পাচ্ছে ।

আমিও মহিলার শিশুটিকে কোলে নিয়ে কোনমতে কাউন্টারের দিকে ছুটতে লাগলাম, পিছে  পিছে  ভদ্র মহিলাও। ইতি মধ্যে ব্যাপারটি জানাজানি হলে, পাম্পের ম্যানেজার বিনা নোটিশে পাম্প দিল বন্ধ করে। অন্যান্য নাইট কোচ, বাস ট্রাক তেলের জন্য এসে ভীর জমাতে জমাতে রোডে বাধলো বিশাল জ্যাম, আর জ্যাম ছুটার জন্যা আসল পুলিশ, ইতি মধ্যে ভোর হয়ে গেল। গাড়ী ,গাড়ীর হর্ন, মানুষের সোরগোল ইত্যাদিতে পাম্প চত্তর ভারি হল ।

কাউন্টারের লোকজনের সাথে আমরাও  সবাই বের হলাম। দুরে পূর্বাকাশে বনের মাথায় আকাশের স্বর্ণের থালা ভাসতে লাগল, গাড়ীর লোক জন ব্যাপারটি জেনে গেল ,যে সব গাড়ীর চালকগন তেলে নিতে দেরীর জন্য চিল্লা চিল্লি কিরছিল তারাও যেন ইস্তমিত  হল ,উৎসুক জনতা  আরো পার্শের গ্রাম থেকে দলে দলে  লোকজন আসতে লাগল ,কিন্তু লাশ বাহি ট্রাকে কেহ আর উঠতে সাহজ পেলো না । তেল নেওয়ার জন্য আসার গাড়ীর ছাদে উঠে

দুএকজন দেখার চেষ্টা চালিয়ে ব্যার্থ হল ,কি করা যায় ,খবর দেওয়া হল

বুলেটকে, বুলেট যুবক বয়সী, এ এলাকার চায়ের দোকানদার,তার নাকি দুর্দান্ত সাহজ, অল্পক্ষনেই সে আসল বীরের মত , দেখলাম যেমন তার চেহারা মেতনি তার সাহজ, শক্তি, এসে বলল হয়েছে কি ? স্বল্প সময়ে

বিস্তারীত জেনে বলল,‘ এত লোকের মধ্যে এমন কি কেউ নেই যে;  ট্রাকের

উঠে দেখার, আরে মিয়া জেনে  রাখেন মরা মানুষ কিছুই করতে পারে না ,

 

১২

এ ভাবে কথা বলতে বলতে সে এক লাফে লাশবাহী ট্রাকে উঠে পড়ল,  ট্রাকে নেমেই বলছে লাশতো দুটো একটা কাফন আর একটা ফাকন ছাড়া এটা আবার কেমন ব্যাপার ? আমাদেরকে দিকে ইংগীত করে বলল । শফি ভাই বলল ,আরে ভাই আমরা তো লাশ এনেছি একটা ।

-আরো মিয়া মসকারা করছেন ?

-না না ভাই, সত্যিই ;সত্যিই; আমরা লাশ এনেছি একটা

-আরে ধুর মিয়া  ইয়ারকি মারছেন ?

-আরে ভাই এত লোকের সামনে আপনীই বা কেন মসকরা করছেন ? আমরা লাশ এনেছি এক—–

-আরে ভাই ,আমি দেখতেছি এইযে দুটো লাশ !

আমাদের সাথের ভদ্র মহিলাও, তখন বলল, ‘না ভাই শুধু আমার স্বামীর লাশই এনেছি’ ,এই কথা বলার পর বুলেট কি যেন ভেবেই; বলে উঠল; ‘ওরে বাপরে লাশতো দু—দিল ট্রাক থেকে এক লাফ,

আর তার গায়ের সুয়েটার আটকে গেল ট্রাকের ব্যাকডালার  হুকে, সে বাদুর ঝুলা হয়ে চিৎকার শুরু করে দিল ‘ বঁঁঁাঁচাও বঁঁঁাঁচাও, লাশ আমারে টেনে ধরছে ইত্যাদি। এই রকম বেশ কয়েকবার  চিৎকার দিয়েই বুলেট জ্ঞান হারিয়ে বাদুর ঝুলা হয়ে ঝুলে রইলেন । আর যত লোক জন জড়ো হয়েছিল তারাও সবাই একটু  নিরাপদ দুরে সরে ভীর করেছেন । ইতিমধ্যে পুরো এলাকা হৈচৈ পড়ে গেল , সিরাজগঞ্ছ শহর থেকে ফ্যায়ার সার্ভিসের লোকবল নিয়ে

গাড়ী-ক্রেন  আসলো , তাদের দ’ুজন ঝুলে থাকা বুলেটকে নামিয়ে মাথায়

পানি ঢেলে সুস্থ করার চেষ্টা চালচ্ছেন, আর তিন জন ক্রেন দিয়ে  উপরের উঠে  ভাল ভাবে পর্যবেক্ষন করে জানালো যে, লাশ তো  দুটোই । উৎসুক জনতা নানান কথা বলাবলি করছেন। ক্রেন দিয়ে তারা ট্রাকে  পর্যবেক্ষন করে বলল যে একটা লাশ তো বেচে আছে বলে মনে হচ্ছে, আমরাও বড়ই

চিন্তায় পড়ে গেলাম ব্যাপারটি কি হল ।বেঁচে থাকা লাশ মানে লোকটিকে নিচে নামানো হল, যুবক বয়স, দেখে হিরোন্সী হিরোন্সী মনে হচ্ছে, ডাক্তার

 

১৩

এনে চিকিৎসা দিয়ে শুস্থ্য করা হল ,থানার পলিশ তাকে জিজ্ঞাসা করল

-তুমি ট্রাকে খিভাবে এলে ,তুমি কে ?

-আমি চোর ,উৎসুক জনতার মুখে হাসির রোল পড়ে গেল

-তা ট্রাকে কেন ?

-স্যার রোর্ডে স্প্রীট ব্রেকারে যখন ট্রাকের গতি কমে তখন আমি লাফ দিয়ে ট্রাকে উঠে মালামাল নিচে ফেলে দেই, পথে আমার সাথীরা তা সংগ্রহ করে, কিন্তু স্যার আমি এ ট্রাকে উঠেই মালামাল মনে করেই  চাটাই খুলে দেখি লাশ ;তখন আমি ভয়ে ওস্তাদ কে গাড়ী থামাতে বললে ওস্তাদ, গাড়ী গতি বেড়ে দেন, বার বার গাড়ী থামার জন্য আকুতি করলেও ,ওস্তাদ গাড়ী নাথামালে, আমি ভীষণ রকমের ভয় পাই পরে আর কি হয়েছে আমি কিছু বলতে পারিনা, স্যার আমারে মাপ করে দ্যান,স্যার আমি আর এমন কাজ করবনা,আমাকে মাপ করে দ্যান স্যার— ,আবার মানুষের হাসির রোল পড়ল এর পর আমরা লাশ নিয়ে গন্তব্যের উদ্দের্শে ট্রাক ছাড়লাম, ঘন্টা খানেক চলার পর মুরদাপাড়া গ্রামে পৌছলাম,সেখানে ভদ্রমহিলার বাড়ীতে পৌছলে,আমি বললাম,‘ওস্তাদ নামাই দ্যান’ ।

 

 

 

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে