জয়নাল আবেদীন হিরো, সৈয়দপু , নীলফামারী, প্রতিনিধিঃ  “এটা কি বাড়ি যে এক নম্বর ইট দিয়ে কাজ করবো? অল্প টাকার সরকারী কাজ যেন তেন ভাবে করবোনা তো কি? ড্রেনের কাজ দুই নম্বর ইট দিয়েই করা হয়। বাংলা কথা হলো দুই নম্বর দিয়েই করতেছি, করবো। তাছাড়া করা সম্ভবও নয়। সরকার বরাদ্দ দিয়েই খালাস। কিন্তু এত অল্প টাকায় কেমন কাজ হবে তা ভাবেনা। ১ লাখ টাকার কাজে ভ্যাটসহ অফিস খরচই যায় ২৫ হাজার টাকা। তারপর পরিষদের ৫ হাজার, আরেক জায়গায় ৩ হাজার, অন্যখানে ২ হাজার, কোথাও আবার ৫শ’ টাকা দিতে হয়। বাকি টাকায় শিডিউল মত কাজই করবো কি, আর আমরা খাবো কি?”
এলজিএসপি-৩ এর অধীনে গ্রামীণ জনপদের একটি ড্রেন নির্মাণ কাজের অনিয়ম বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনিয়ন পরিষদের একজন মহিলা মেম্বারের স্বামী এভাবেই সোজা সাপটা কথা বলেন। ঘটনাটি নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের। 
ওই ওয়ার্ডের নগরপাড়ায় পানি নিষ্কাশনের জন্য ৩৭ মিটার ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে ১ লাখ টাকা বরাদ্দে। প্রকল্প চেয়ারম্যান ওই ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার আখতারা বেগম অত্যন্ত নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে যেন তেন ভাবে কাজ করছে।
এলাকাবাসীর এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে রবিবার (১ আগস্ট) সকাল ১১ টায় সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে গেলে উপস্থিত এলাকাবাসী জানান, পানির সমস্যা নিয়ে দীর্ঘ দিন থেকে আমরা ভোগান্তি পোহাচ্ছি। চেয়ারম্যান মেম্বারদের বার বার বলতে বলতে অবশেষে বরাদ্দ আসলেও কাজ করা নিয়ে শুরু হয়েছে হরিলুট কারবার। 
তারা বলেন, শিডিউল অনুযায়ী কাজ তো দূরের কথা ন্যুনতম মান বজায় রাখা হচ্ছেনা। দুই নম্বর ইট আর সামান্য সিমেন্ট মিশানো সিংহভাগ বালুর মসলা দিয়ে করা হচ্ছে গাঁথুনির কাজ। নিচে কোন ঢালাই না দিয়ে শুধু ইটের সোলিং দেয়া হয়েছে। যা একটু বৃষ্টি হলেই খুলে ভেসে যাবে। 
এলাকাবাসী বলেন, মহিলা মেম্বার কাজটা ২০ হাজার টাকায় স্থানীয় হাজারীহাটের ব্যবসায়ী আবু সায়েমের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। 
মহিলা মেম্বারকে ফোন দিলে তাঁর স্বামী ফোন ধরেন। আর মহিলা মেম্বারের স্বামী কে ধরলে তিনি বলছেন যেমন বরাদ্দ পেয়েছি তেমন কাজ হচ্ছে।
সরেজমিনে এলাকাবাসীর অভিযোগের সত্যতা পেয়ে মহিলা মেম্বার আখতারা বেগমের মোবাইলে কল দিলে তার স্বামী বাচ্চা বাউ রিসিভ করেন। মোবাইলে মহিলা মেম্বারকে চাইলে তিনি বলেন, আমার স্ত্রী কে দিয়ে কি হবে? যা বলার আমাকেই বলেন। সব কিছুতো আমিই করি। 
এতে ওই ড্রেনের কাজের অনিয়ম বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি উপরোল্লেখিত মন্তব্য করেন। এসময় তিনি আরও বলেন, সরকারী বড় বড় কাজগুলাতো দেখেন না। এই সামান্য কাজ দেখতে এতদূর আসা লাগে? অফিসের লোকজনই তো আসেনা। আর আপনারা আসছেন অনিয়ম দেখতে। এটা আমের চেয়ে আটি বড় হলোনা?”
কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোঃ নুরনবী জানান, ওই ওয়ার্ডে কাজ হচ্ছে তা আমি জানিনা। আর যদি দুই নম্বর ইট দিয়ে নিম্নমানের কাজ হয় তাহলে সে ব্যাপারে সব দায় দায়িত্ব মহিলা মেম্বারের। আমি এ সম্পর্কে কিছু বলতে পারবোনা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে