ডেস্ক রিপোর্ট: পবিত্র কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো ভালো কাজ করবে- নর বা নারী, সে যদি ইমানদার অবস্থায়ই তা (সম্পাদন) করে তাহলে সব লোক অবশ্যই বেহেশতে প্রবেশ করবে, তাদের ওপর বিন্দুমাত্রও অবিচার করা হবে না। এর চেয়ে উত্তম জীবন বিধান আর কার হতে পারে, যে আল্লাহ পাকের জন্যে মাথানত করে দেয়, মূলত সেই হচ্ছে নিষ্ঠাবান ব্যক্তি, সে ইবরাহিমের আদর্শের অনুসরণ করে; আর আল্লাহ পাক ইবরাহিমকে স্বীয় বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন।’ -সূরা আন নিসা: ১২৪-১২৫

ইবাদতের দু’টি অংশ থাকে। যেমন-
১. হক্কুল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর হক।
২. হক্কুল ইবাদ অর্থাৎ বান্দার হক।

আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন। বেঁচে থাকার জন্য পানি বায়ু খাবারের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এর জন্য আল্লাহর কাছে শোকরিয়া আদায় করা বান্দার আবশ্যকীয় কাজ। পাশাপাশি যে পরিবারে আমরা জন্মেছি, যে সমাজে বসবাস করছি, যে সমাজব্যবস্থায় বেড়ে উঠেছি; সে সমাজের প্রতিও কোরআন-হাদিসের নির্দেশনা মোতাবেক আমাদের কিছু করণীয় রয়েছে। দেশপ্রেমের মতো সমাজসেবা বা পরোপকারও ইমানের একটি অপরিহার্য অংশ। কিছু কিছু ইবাদত শুধু আল্লাহর জন্য সুনির্দিষ্ট যা শুধু আল্লাহর জন্যই সরাসরি করতে হয়। যেমন- সিজদা, নামাজ, রোজা, হজ, কোরআন তেলাওয়াত প্রভৃতি।

আর এমন কিছু কাজ আছে, যা সৃষ্টি জীবের কল্যাণার্থে করা হলেও প্রকারান্তে আল্লাহকে খুশি করার উদ্দেশ্যে করা হয়- যা পরে ইবাদতের অংশ হিসেবে আমলনামায় লিপিবদ্ধ করা হয়। যেমন- দান-সদকা, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ করা, রাস্তা মেরামত করা, রাস্তার পাশে ফলের গাছ লাগানো, রোগী দেখতে যাওয়া, অভাবীদের সাহায্য করা, জাকাত দেওয়া, এতিম-অসহায় মেয়েছেলেদের বিয়েশাদির ব্যবস্থা করা প্রভৃতি।

যেসব ইবাদত সরাসরি আল্লাহর উদ্দেশ্যে করা হয় না অপরের অর্থাৎ প্রতিবেশীর কল্যাণার্থে করা হয়- তা হলো সমাজসেবা।

মুমিনের দায়িত্ব শুধু নামাজ, রোজা ও হজ পালনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিনদের দু’টো দল যদি নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ (ঝগড়া) বাঁধিয়ে বসে, তখন তোমরা উভয়ের মধ্যে ফয়সালা করে দেবে, অতঃপর তাদের এক দল যদি অন্য দলের ওপর অত্যাচার করে, তাহলে যে দলটি অত্যাচার করছে তার বিরুদ্ধেই লড়াই করবে, যতক্ষণ পর্যন্ত সে দলটি আল্লাহর হুকুমের দিকে ফিরে না আসে। যদি দলটি ফিরে আসে তখন তোমরা দু’টো দলের মাঝে ন্যায় ও ইনসাফের সঙ্গে ফায়সালা করে দেবে এবং তোমরা ন্যায়বিচার করবে।’ -সূরা হুজরাত : ৯

সামর্থ্যানুযায়ী প্রতিবেশীকে সাহায্য-সহযোগিতা করা, আত্মীয়স্বজনের সেবা করা, আশপাশের লোকজনের খোঁজখবর নেওয়া, ঝগড়া-বিবাদ মিটিয়ে দেওয়া মুমিনের নৈতিক ও আত্মিক দায়িত্ব। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা কল্যাণমূলক ও খোদাভীরুতার কাজে পরস্পর সহযোগী হও, মন্দ ও সীমা লঙ্ঘনের কাজে পরস্পর সহযোগী হয়ো না।’ -সূরা মায়েদা : ২

সমাজের নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি সমাধানের লক্ষ্যে মুমিনদের এগিয়ে আসতে হবে। হাত গুটিয়ে বসে থাকার কোনো সুযোগ নেই। সমাজের সব অসঙ্গতি অপকর্ম যেমন- মাদক, যৌতুক, এসিড সন্ত্রাস ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধে মুমিনদের এগিয়ে আসতে হবে।

কোরআনে পরোপকারী ব্যক্তির জন্য পরকালে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারাই ইমান আনবে এবং নেক কাজ করবে, তারা হবে জান্নাতের অধিবাসী, তারা সেখানে চিরদিন থাকবে।’ -সূরা বাকারা : ৮২

এ ছাড়া সমাজসেবার মাধ্যমে মুমিন বান্দার নিত্যদিনের গোনাহ মাফ হয়ে যায়। আমলনামায় নেকের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ভালো কর্মগুলো আমলনামা থেকে মন্দ কাজগুলোকে ধুয়ে মুছে সাফ করে দেয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা ভালো (কাজ) দিয়ে মন্দ (কাজ) দূরীভূত করে, তাদের জন্যই (পরকালে) শুভ পরিণাম।’ -সূরা রাদ : ২২

কোরআনে কারিমে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা ইমান আনে এবং নেক কাজ করেম, আমি নিশ্চয়ই তাদের সেসব ত্রুটিগুলো দূর করে দেবো এবং তারা যেসব নেক আমল করে আমি তাদের সেসব কর্মের উত্তম ফল দেবো।’ -সূরা আনকাবুত : ৭

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে