বাংলাদেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন আন্তর্জাতিক বিভিন্ন শক্তি সেই দেশের পা টেনে ধরতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। শনিবার (২২ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে নবীন আইনজীবীদের বরণ ও কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘যখন কোনো দেশ এগিয়ে যেতে থাকে, তখন আন্তর্জাতিক বিভিন্ন শক্তি সেই দেশের পা টেনে ধরতে চায়। সেই দেশের পা টেনে ধরার জন্য তখন মানবাধিকারসহ বিষয়গুলোকে সামনে নিয়ে আসে। অথচ তাদের দেশে মানবাধিকারের কোনো খবর নাই। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিখোঁজ হয় এবং গুলিতে মৃত্যুবরণ করে। সেগুলো নিয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলো কখনো বিবৃতি দেয় না।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কয়দিন আগে জাতিসংঘের ইন্ডিপেন্ডেন্ট হিউম্যান রাইটস এক্সপার্ট গুয়েন্তানামো বে কারাগারে বন্দিদের নির্যাতন করা হচ্ছে বলে সেটি বন্ধের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। সেটি নিয়ে তো কোনো মানবাধিকার সংগঠন বিবৃতি দেয়নি।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বিপক্ষে যারা দেশ-বিদেশে ষড়যন্ত্র করছেন, তারা র‌্যাবের ভূমিকা নিয়ে অনেক কথা বলছেন। অথচ এই র‌্যাব বাংলাদেশে মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছে। র‌্যাবের কারণে আমরা অনেক উন্নত দেশের তুলনায় এসব অপরাধ কার্যকরভাবে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি।’

মন্ত্রী বলেন, ‘যারা আজ র‌্যাবের ভূমিকা নিয়ে কথা বলছেন, তারা আসলে চান এখানে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের অভয়ারণ্য হোক এবং মাদক আরও ছড়িয়ে পড়ুক। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে এভাবে তারা ঢালাওভাবে কথা বলতে পারেন না।’

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘র‌্যাবের কোনো সদস্য যদি ভুল করেন, তবে তাদের তদন্ত হয় এবং অপরাধ প্রমাণিত হলে শাস্তিও হয়। র‌্যাবকে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমের অনেক দেশ কারিগরি সহায়তা দিয়েছে। ২০০৪ সালে সেসময়ের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া র‌্যাব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তারা যখন সহায়তা দিয়েছে, র‌্যাব তো তখন থেকে কাজ করছে। তখন এ বিষয়গুলো আসেনি। হঠাৎ এখন কেন আসছে? এটার পেছনে নিশ্চয়ই কিন্তু আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘জিয়াউর রহমান ও এরশাদের আমলে দেশে আইনের শাসনের ব্যত্যয় ঘটেছে। মানুষের ওপর সামরিক শাসন ও আইন জারি করা হয়েছিল। আজ সেই জিয়াউর রহমানের দল আইন, ন্যায় ও গণতন্ত্রের কথা বলে। জিয়াউর রহমান ও এরশাদের আমলে যে ক্যাঙ্গারু কোর্ট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, সেখানে কোনো আইনের তোয়াক্কা করা হতো না। ইচ্ছা ও ফরমায়েশের ওপর সেখানে বিচার ও রায় হতো। বিচারের রায়ে ফাঁসি থেকে যাবজ্জীবন সবকিছু কার্যকর করা হতো।’

‘আন্তর্জাতিক বিভিন্ন শক্তি বাংলাদেশের পা টেনে ধরতে চায়’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘শেখ হাসিনার সরকার দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও বহুমাত্রিক গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করছে। যারা বন্দুক উঁচিয়ে গণতন্ত্র হরণ করে মানুষের লাশের ওপর পা দিয়ে ক্ষমতা দখল করে দেশ পরিচালনা করেছে, এখন তারা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলে। তাদের কথায় মানুষ আবার সেই অস্ত্রের ঝনঝনানি শুনতে পায় এবং আতঙ্কিত হয়।’

নতুন আইনজীবীদের অভিনন্দন জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আইন পেশায় শুরুতে অনেক টানাপোড়েন থাকে। শুরু থেকে যারা অর্থের পেছনে দৌড়াবে, তারা ভালো আইনজীবী হতে পারবে না। শুরুতে অর্থের পেছনে দৌড়ালে ভালো আইনজীবী হওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। প্রথমে বাড়ি থেকে টাকা এনে চলতে হবে। সেটা নিয়ে অনেকের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকবে, এটিই বাস্তবতা। কিন্তু ধৈর্য ধরে যিনি এ পেশায় লেগে থাকেন, তিনি পরবর্তী সময়ে ভালো আইনজীবী হন।’

তিনি বলেন, ‘দেশে আইনের শাসন ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আইনজীবীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আইনজীবীরা সমাজের স্বাভাবিক নেতা। আবার মানুষকে আইনগত সহায়তা দিয়ে ন্যায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আইনজীবীরা ভূমিকা রাখেন। আইনজীবীদের ভূমিকার ওপর অনেকটা নির্ভর করে সমাজে ন্যায় ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা।’

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মুহাম্মদ এনামুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের অ্যাডহক কমিটির সদস্য মো. মুজিবুল হক ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এএইচএম জিয়াউদ্দিন প্রমুখ।

Jag/N

ভাল লাগলে এই পোস্টি শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে